শতরূপা তোমাকে কিছু বলার ছিল সুমনের (চতুর্দশ ভাগ) – প্রাচীন কল্পবিগ্রহ আর ফিবোনাচি সূত্র আর শেষ অঙ্ক

0
1083
Rinchen and Kalpa Vigraha3
Rinchen and Kalpa Vigraha3
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:27 Minute, 9 Second

শতরূপা তোমাকে কিছু বলার ছিল সুমনের (চতুর্দশ ভাগ) – প্রাচীন কল্পবিগ্রহ আর ফিবোনাচি সূত্র আর শেষ অঙ্ক

সুমন মুন্সী,কলকাতা

(আগে যা হয়েছে জানতে ক্লিক করুন প্রথম ভাগ , দ্বিতীয় ভাগ, তৃতীয় ভাগ, চতুর্থ ভাগ,পঞ্চম ভাগ,ষষ্ঠ ভাগ, সপ্তম ভাগ, অষ্টম ভাগ, নবম ভাগ, দশম ভাগ , একাদশ ভাগ, দ্বাদশ ভাগ, ত্রয়োদশ ভাগ, চতুর্দশ ভাগ, পঞ্চদশ ভাগ )

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বিবি দা আর সুমন এসে নামলো দুবাই ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট । এয়ারপোর্ট তো নয় যেন এক ইন্দ্রপুরী । সারা পৃথিবীতে ব্যবসা আর বিনোদনের স্বপ্নের শহর ।

বিবি দা বলেন মায়ানগরী সাথে অন্ধকারের সাম্রাজ্য ।

ইমিগ্রেশন পার করে বাইরে এসে দেখলো Mandarin Oriental Jumeira, Dubai হোটেলের গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে, ড্রাইভার ফিরোজ, হায়দরাবাদের ছেলে ।

“আইয়ে জনাব, ওয়েলকাম টু দুবাই”, বললো ফিরোজ ।

বিবি দা চোখের ইশারায় বিশেষ কথা বলতে মানা করলেন ।

হোটেলে চেক ইন করলেন দুজনে, ইচ্ছা করেই এক সুইট নেয়া হয়েছে জরুরি কথা আছে , আলোচনা আছে, তার থেকে বড় কথা সিকিউরিটি।

এখানে বিবি দা ইনভাইটেড গেস্ট লেকচারার আর সুমন জার্নালিস্ট ফর ইন্ডিয়ান এম্বেসী ।

যখন হোটেলে ঢুকলো তখন লোকাল টাইম দুপুর একটা, জলদি চান করেই ডাইনিং হলে হাজির হলো দুজনে। বুফে লাঞ্চ এলাহী ব্যবস্থা, গলদা চিঙড়ি, চিকেন বিরিয়ানি সহ মোঘলাই,ইন্ডিয়ান,,সাউথ ইন্ডিয়ান, কন্টিনেন্টাল সবই আছে।

বিবি দা বললেন, “সাবধান দুটির বেশি চিংড়ি নয়, তা হলেই আবার বাথরুমেই তোমার সেশন চলবে”।

সুমন লজ্জা পেলো, একবার ১৮ পিস্ গলদা খেয়ে পেটের ভিতর কুরুক্ষেত্র বাঁধানোর ইতিহাস আছে ওর।

খেয়ে যখন ঘরে ফিরলো ঠিক তখনই ইন্টারকম বেজে উঠলো ।

“ভিজিটর হাজ্ কাম স্যার, মিস্টার সিং অলং উইথ ফ্রেন্ডস ফ্রম ইন্ডিয়ান হাই কমিশন”, বললো রিসেপশনের মেয়েটি ।
“প্লিজ সেন্ড ডেম ইনসাইড উইথ টীম, টি এন্ড স্নাক্স টু সার্ভ”, বললো সুমন।

মিনিট ১০ এর মধ্যে এসে হাজির হলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত মিশ্র নাম এখন অনুরাগ সিং সাথে এক সাহেব এক মেম সাহেব আর এক জন লেডি হাউস স্টাফ ।

“আসুন মিস্টার সিং, ওয়েলকাম লেডি এন্ড দা জেন্টলম্যান”, দাঁড়িয়ে ওয়েলকাম করলেন বিবি দা।
সুমন বোকার মতো হাসি হাসি মুখ করে মেম সাহেব আর সাহেব কে দেখছে ।

“এত হাসার কিছু নেই ইনি হিলারি অ্যান্ডার্সন, সিআইএ দুবাই এজেন্ট, হি ইজ ফ্র্যাংকলিন জুনিয়র ইউএস কনস্যুলেট প্রেস সেক্রেটারি আন্ডার কভার স্পেশাল এজেন্ট এন্ড মালিনী শর্মা ইন্ডিয়ান সিক্রেট সার্ভিস, এন্ড দা ম্যান হিয়ার ইজ সুমন সান্যাল মাই সেকেন্ড, ইন ডিসগাইজ অফ রিপোর্টার, ত্রি জেনারেশন ব্যাকগ্রাউন্ড চেক ক্লিয়ার বাই ইন্টারপোল”, বললেন বিবি দা ।

সুমন অবাক তার চোদ্দো গুষ্টির খবর নিয়ে রেখেছে এরা , তারপর আসার পর থেকে এই মেয়েটাই ওদের হোষ্টের মতো যত্ন করছে, সে কিনা ইন্ডিয়ান এজেন্ট হোটেল হাউস স্টাফ!!

“টেক ইওর সিট প্লিজ এন্ড বি কম্ফোর্টেবল”, বললেন মিস্টার সিং ।

“মিস্টার বিবি আইটেম ইজ কম্প্রোমাইজড ইন ওয়াশিংটন স্ট্রংরুম এন্ড স্টোলেন, অনলি দা মানুস্ক্রিপ্ট ইজ দেয়ার। প্রেসিডেন্ট ওয়ান্ট ইট ব্যাক এন্ড আওয়ার ইনপুট সেস ইট ইজ নাউ ইন ইন্ডিয়ান টেরিটরি। “, বললেন হিলারি ।

“স্ট্রেইট টু দা পয়েন্ট মিস্টার বিবি, উই নিড ইওর এন্ড সুমন’স হেল্প । ইউ নো ব্রাম্হি,বাকশালী মানুস্ক্রিপ্ট,সারদা স্ক্রিপ্ট এন্ড সংস্কৃত । পুসকালাবতী আন্ড তক্ষশীলা হিস্ট্রি ইউ অর এ অথরিটি উইথ ফ্লায়ার অফ ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক । এফবিআই এন্ড ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্কিং হ্যান্ড ইন হ্যান্ড টু গেট দা আইটেম ব্যাক , চাইনিজ ইন্টারেস্ট উইথ পাকিস্তানী লাস্ট ইজ প্যারামাউন্ট। ” বললেন মিস্টার সিং ।

“ওয়েল কোড নেম অফ দা জব ইস লিবো। ইট ইজ এ ২৮০০০ ইয়ার্স ওল্ড ৫ ইঞ্চ লর্ড বিষ্ণু আইডল ক্যাপাবল অফ ইন্ক্রিসিং লাইফ স্প্যান এন্ড হিল ইফ দা আইডল সোকড ওয়াটার ড্রাঙ্ক বাই এনি পারসন ।” বললেন ফ্রাঙ্কলিন জুনিয়র ।

“ব্যাট হোয়াই মি”, হটাৎ বলে ওঠে সুমন ।

এবার বিবি দা যা বললেন তা তাক লাগানো কথা ।

“সুমন তোমার ঠাকুরদা ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের ইন্টেলিজেন্স এর মাথাদের একজন , নেতাজির কাছের লোক। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় নেতাজি আজাদ হিন্দ বাহিনী আর তোমার ঠাকুর্দা নেতাজির কাছ থেকে এই গোপন মূর্তির কথা জানতে পারেন। সেই জন্যই বোধ হয় নর্থ ইস্ট দিয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী ঢুকতে চেয়েছিল ভারতে তবে নিশিত নোই। তোমার কাছে ঠাকুর্দার যে ডাইরি আছে তুমি আমায় যা দেখিয়েছিলে তার ভিতরে ওনার স্বপ্নে দীক্ষা পাওয়ার গল্প ছিল মনে আছে?”, বলে থামলেন বিবি দা ।

“হ্যাঁ আছে, কিন্তু তাতে কি?”, প্রশ্ন করলো সুমন।

“১৯২৪ সালের সেই বার্মার পেগুতে লেখা ডাইরিতে ইনভিসিবল কালিতে কি লেখা ছিল? ছিল এই মূর্তির বর্ণনা, এবং গুরুজী গম্ভীরনাথজীর আশীর্বাদে শুধু তোমার ঠাকুর্দা বা তাঁর উপযুক্ত বংশধর কেবল এই মূর্তি কে ধরে স্থানচ্যুত করে অন্যস্থানে নিতে পারবে আর কেউ নয়।”, হেসে বললেন বিবি দা ।

“কেমন অবৈজ্ঞানিক কথা হয়ে যাচ্ছে না বিবি দা”, সুমন অবাক হয়ে বললো ।

“উই আলসো হ্যাভ দা সেম আইডিয়া এবাউট ইট এন্ড ইগনোর ইট এয়ারলিয়ার, ব্যাট ওয়ান আফটার অনাদর ইন্সিডেন্ট মেড ইট এ পয়েন্ট টু বিলিভ, দ্যাট অনলি ইউ নাউ ক্যান ডু ইট ফর হিউম্যানিটি এন্ড পুট ইট ইন এ নিউ সিকিউর প্লেস ।”, বললেন হিলারি ।

“অলসো ইওর নলেজ এবাউট হাইটেক ল্যাবস এন্ড আরএন্ডডি ওয়ার্ল্ড উইল মেক ইট এন এডেড অ্যাডভান্টেজ । ইউ আর অল্সো কম্পিউটার এক্সপার্ট। অল দিজ মেকস ইউ অলসো এ ডেডলি কম্বিনেশন ফর ডিস্ জব”, বললেন সিং ।

High Profile Meeting at Dubai
High Profile Meeting at Dubai

একবার ঘরের চারদিকে তাকিয়ে সুমন ভালো করে দেখলো, বোঝার চেষ্টা করলো তার অবস্থাটা ঠিক কি। তার সামনে মিস্টার সিং ভারত সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা চেয়ারে বসে আছেন, ঠিক উল্টো দিকে বুড়ো ফ্রাঙ্কলিন জুনিয়র মার্কিন ডিপ্লোম্যাট একটা খবরের কাগজে কি যেন দেখছে, বিবি দা দার্জিলিং টি খাচ্ছেন পাশাপাশি সোফায় বসে, হিলারি সিআইএ এজেন্ট ব্যালকনিতে আরবসাগর দেখছে আর মালিনী শর্মা ইন্টেলিজেন্স এনকাউন্টার এক্সেকিউটর ঠিক বিবি দার পিছনে দাঁড়িয়ে । প্রত্যেকে সরকারি ক্ষমতাধর এবং লাইসেন্সড টু কিল, না শুনতে অভস্ত নয় । একই সাথে স্পাই জীবন কেমন সুমনের সেটা জানার ইচ্ছা প্রবল ছোটবেলা থেকে। ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কিরীটি, কাকাবাবুদের ভক্ত সে । রোমাঞ্চ শব্দটার অভিঘাত শিরায় শিরায় অনুভব করছে সে আজ ।

“নাও সি দিজ নিউস, লাস্ট ম্যান ইন ইউএসএ মিস্টার পিটার স্যাম ইজ নো মোর, সো বিবি ইউ অরে অনলি ম্যান হু নোজ ব্রাম্হি,বাকশালী মানুস্ক্রিপ্ট,সারদা স্ক্রিপ্ট এন্ড সংস্কৃত এন্ড বুদ্ধিস্ট ওয়ে অফ ইডিওলজি “, বললেন ফ্রাঙ্কলিন জুনিয়র হাতে খালিজ টাইমস এর ৭এর পাতা ।

“সে কি? কি করে হলো?”, বিবি দা প্রশ্ন করলেন।
“হি ফাউন্ড ডেড ইন হিজ বোস্টন এপার্টমেন্ট,সাস্পেক্টেড পয়জন Polonium 210 এ রাশিয়ান আইটেম নাউ লিংক উইথ চায়না মে বি ” সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বললো হিলারি।

ওকে জেন্টলমেন্, টুমোরো ইউ উইল মিট মিস্টার লি। হি উইল পিটেন্ড টু বি এজ এন আর্কিওলজিস্ট, ব্যাট এ মাস্টার ক্লাস চাইনিজ এজেন্ট, কেয়ার ইওর অ্যাস, অলসো ফ্রম সালাউদ্দিন অফ পাকিস্তান লাহোর ইউনিভার্সিটি এ আইএসআই এজেন্ট। বোথ উইল এক্সচেঞ্জ ব্যাগ এন্ড উই নিড বোথ দা ব্যাগস ।”, বললেন মিস্টার সিং ।

“নো মোর টক্ লেটস ফিনিশ ইট”, বললেন হিলারি ।

এরপর সকলে বিদায় নিলো । যাওয়ার আগে সিং সাহেব বিবি দা কে মোটা ডলার আর দিরহাম এর দুটো বান্ডিল দিয়ে দিলো ।

বুড়ো সুমনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ।

বিকেলে বুর্জ খলিফা সহ দুবাই ঘুরে দেখলো ওরা, ড্রাইভার সেই ফিরোজ । সুমন আগেও একবার দুবাই এসেছে শহরটা, যেন এক জাদুনগরী প্রতিবারেই নতুন চমক ।

(২)

২৯-৩০ সেপ্টেম্বর ঝড়ের মতো কেটে গেলো, শুধু সুমন বোকার মতো দেখলো বিবি দা একজন বিদগ্ধ পন্ডিতের মতো প্রাচীন ভাষা আর ঐতিহ্যের প্রফেসরের মতো তাঁর পেপার পড়লেন। সবাই তারিফ করলেন। বিশেষ করে লি আর সালাউদ্দিন এর সাথে বেশ খোশ মেজাজে গল্প করলেন বুড়ো, আর সুমন কে যেন পাত্তাই দিলেন না ।

দুপুরে লাঞ্চের সময় ডেলিগেটস ফাইল চেয়ে নিলেন সুমনের থেকে বললেন ওনার টায় প্রেস রিলিজ নেই, দেখবেন কি লিখতে বলেছে প্রেস কে ।

লাঞ্চে আবার গলদা আর এবার বুড়ো নেই বলে, গোটা ছয়েক খেয়ে নিলো সুমন, সাথে মটন বিরিয়ানী ।

রাতের ফ্লাইটে এ বসে সুমন বললো “দাদা সবই হলো কিন্তু ওদের ডকুমেন্টস গুলো নেয়া হলো না”।

বিবি দা মুচকী হেসে চোখ বন্ধ করলেন ।

দিল্লি নেমে যখন বিবি দার বাড়ি যাওয়া হলো তখন ভোর ৬:৩০ । চা আর বিস্কুট সাথে ওমলেট দিয়ে ব্ৰেড খেয়ে ওখানেই শুয়ে গেলো সুমন । বিবি দার বাড়ি মানে তারই বাড়ি এমনি ভালোবাসে বুড়ো কে ।

দুপুর ১২:৩০ এ ঘুম থেকে উঠে দেখলো সুন্দর খিচুড়ির গন্ধ বেরোচ্ছে ।

“আপনি ঘুমনি এর মধ্যেই রান্না হয়ে গেলো ?”, সুমন অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো ।

“সিট্ হিয়ার এইটা দেখো”, বললো বিবি দা ।

একটা প্রাচীন পুঁথির মতো কিছুর কালার জেরক্স আর কিছু ফটো।

“এ গুলো কি? “

“মিস্টার লি যে গুলো সালাউদ্দিন কে দিলো যে “, মুচকি হেসে বিবি দা বললো ।

“মানে, আপনি কখন সরালেন,” সুমন তো অবাক ।

“তুমি যখন চিংড়ি খেতে ব্যস্ত আর সালাউদ্দিন বিরিয়ানি সেই সময় আমি করলাম চোরের ওপর বাটপারি,” হেসে বললেন বিবি দা ।

“শোনো সুমন তোমাকে টিবেটিয়ান শিখতে হবে এন্ড কেউ মাস্ট,” বললেন বিবি দা ।

এরপর ছয়মাস কখনো ধর্মশালা কখনো, সিকিম কখনো নিস্বর্গধাম কর্ণাটক । আজগুবি আর অজানা জিনিস কে জানার কথা উঠলে সুমন চিরকাল বুকওয়ার্ম ।

একবছরের মধ্যে টিবেটিয়ান সংস্কৃত আর ব্রাম্হি কাজ চলার মতো শিখে নিলো, সাথে টিবেটিয়ান তন্ত্র ও শ্রী জ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের বিশেষ ডিটেলস ।

অন্তরা বিরক্ত হতো, পাগলের মতো কাজ করে যাচ্ছে । কোন মেয়ে কোন ক্লাসে পড়ে, কি বই কিনতে হবে, কিছুই জানে না, সময় বিশেষে টাকা পয়সা ফুরিয়ে যাচ্ছে, সংসারে টানা টানি হচ্ছে, চাকরি ছেড়ে মায়ামৃগের খোঁজে দৌড়োচ্ছে ।

কিছু একটা গোপন কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছে সেটা বোঝে, কিন্তু কাজ কেন গোপন তা জানে না ।

এক দিন হাসতে হাস্তে বলে ছিল ধর্মশালায় ওর এক জমজ ভাই আছে, নেহাতি কথার কথা । ভাই থাকলে মা বলতেন নিশ্চয়।

(৩)
আজ তিন বছর হয়ে গেলো মানুষটা নিখোঁজ, প্রথম প্রথম অন্তরা ভাবতো ফিরে আসবে একদিন, ক্রমশ শুধু মেয়েদুটোকে আঁকড়ে বাঁচতে শিখে যাচ্ছে । কেবল গলদা চিংড়ি আর বিরিয়ানী খেতে গেলে গলার কাছে যেন দলা পাকিয়ে আসে কান্না। লোকটা পন্ডিত না শিশু তাই কোনো দিন বুঝতে পারলো না। সারাক্ষন শুধু হাসি ঠাট্টা আর ঘরে থাকতো, কাজ ছাড়া ওকে ঘরের বাইরে বের করে কার সাধ্য । বাজার পাঠালে বেছে বেছে পচা শুকনো সবজি নিয়ে আসবে , শেষে অন্তরা নিজেই যেত বাজারে ।

এক গ্লাস জল পর্যন্ত্য গড়িয়ে খেত না, শুধু ঘন্টায় ঘন্টায় কফি চাই আর ল্যাপটপে মুখ গুঁজে পরে থাকতো। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে সবাই ওকে খুব সম্মান করতো আর কিছু লোক হিংসায় জ্বলতো ।

একদিন বললো অন্তরা যদি কোনোদিন না থাকি, কি ভাবে দিন চলবে চ্যানেল কাজটা শিখে নাও । খুব অভিমান হতো কিন্তু তাও ওর সাথে প্রেস মিট এ যেতে লাগলো, এক দেড় বছরের মধ্যেই বুঝে গেলো, যেকোনো পেস মিটে সবশেষে যে প্রশ্ন হবে সেটা সুমন করবে আর সেটাই দিনের সেরা প্রশ্ন হয়ে থাকবে।

জুনিয়র রিপোর্টাররা ওকে নিজের দাদার মতো দেখতে লাগলো আর কিছু সিনিয়র বাদে সবাই এক ঈর্ষার জটিল মনস্তত্বের শিকার হয়ে গেলো ।

ওদের পোর্টাল তখন দেশ ছেড়ে বিশ্বের সব নামি দামি দেশের সংস্থার চোখের মনি । দুই মেয়েকেই কাজ শিখিয়ে দিয়েছিল । কেউ বোঝেনি আসলে ও নিজে কে গুটিয়ে নিচ্ছিলো সবার অজান্তে । দিরে ধীরে প্রেসমিট যাওয়া কমিয়ে দিলো। মেয়েরা নিউজ না দিলে রেগে যেত, অশান্তি করতো । অন্তরা বলতো ওরা তোমার কাজ করবে এই আশা করাটাই ভুল ।

কিন্তু আজ বোঝে আসলে ও চেয়েছিলো যদি কখনও না থাকে, মেয়েরা আর অন্তরা যেন চালিয়ে নিতে পারে ।

শারুখখানের ইন্টারভিউ নিতে নিতে সেটাই ভাবছিলো অন্তরা , ছোট মেয়ে ছবি তুলছে , বড় মেয়ে ইন্টারভিউ নিচ্ছে আর ও নোটস নিচ্ছে । সেদিন সবাই বিরক্ত হতো, আজ কিন্তু সেই দিনের কাজ গুলোই ওদের জীবন যুদ্ধে লড়তে সাহায্য করছে । এক দিন এই শাহরুখ খানই ওকে স্টেজে জড়িয়ে ধরেছিলেন, সে ছবির কথা আজও প্রেসের বন্ধুরা বলে ।

(৪)

রিনচেন আর রাজু যখন মানালী থেকে নাগগের রোয়েরিখ মিউজিয়াম পৌছালো তখন সকাল ৯টা বাজে । মিউজিয়াম ১০টায় খোলে ।

ROERICH ART GALLERY
ROERICH ART GALLERY

বাইরে পাহাড়ের ধরে বসে প্রকৃতির শোভা দেখতে লাগলো তন্ময় হয়ে । রাজু ফোনে কথা বলছে কার সাথে ।

হঠাৎ খেয়াল করলো এক লেদার জ্যাকেট পরা এংলো ইন্ডিয়ান ফোন কথা বলছে ।
“নো মিস্টার ধর উই ক্যান নট ওয়ার্ক লাইক দিস , মেক পেমেন্ট দেন ওয়ার্ক উইল ফলো, টু রিস্কি তো ফলো এ আন্ডার কভার এজেন্ট আন্ডার দা নোজ অফ ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স টিম। উই ওয়ার্ক ফর মানি নো ওয়ান এলস,” বললো লেদার জ্যাকেট ।

রিনচেন হাসলেন মনে মনে। সে সাধু সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী তবু এই জাগতিক শব্দ গুলো তাঁকে টানে আজ, মায়ার বন্ধন ছেঁড়া সহজ নয়। এই জন্যই কি গুমনামী বাবা আর নেতাজীর প্রতি সমান টান অনুভব করে সে। সুমনের মত সেও কি নেতাজির ভক্ত? উত্তর রিনচেনের মনই বলে দিলো , নেতাজীর ভক্ত হতে গেলে খাঁটি মানুষ হতে হবে মেকি নেতা হলে নেতাজীর ছায়াও খুঁজে পাবে না কেউ ।

মিউজিয়াম খুলেছে ।

টিকিট কেটে সোজা তিন নম্বর ঘর দুই নম্বর ফটোর সামনে। ঠিক যেমনটা হিড়িম্বা মন্দিরের পুরোহিত বলে ছিলেন পিঙ্গলাচার্য্যের সূত্র যা আজ কের পৃথিবী ফিবোনাচ্চি বা ফিবোনাক্কি সিরিজ বলে চেনে। রোয়েরিখের বিখ্যাত “দি ফায়ার” ছবির সামনে। তন্ময় হয়ে দেখতে লাগলো রিনচেন ।

অজান্তে টের পেলো আর একজন এসে পড়েছে সেই ছবির সামনে সেই কালো লেদার জ্যাকেট আর এক মেমসাহেব ক্যামেরা হাতে ।

Rinchen with Game of Art and Science
Rinchen with Game of Art and Science

রিনচেন ততক্ষনে মোবাইল ছবি তুলে নিয়েছেন এবং অজিত মিশ্র কে পাঠিয়ে দিয়েছে সাথে কিছু কোডেড মেসেজ । ছবির কোনায় যে তারিখ লেখা ছিল সেটাই ছিল সংকেত শেষ লক্ষ্যে পৌঁছানোর ।

এবার মিউজিয়াম থেকে দ্রুত বেরিয়ে পড়লেন রিনচেন ড্রাইভারকে বললেন, “রাজু সিধা কুলু এসপি অফিস,চালিয়ে”।
“জী স্যার”।

কুলু এসপি অফিস পৌঁছে কথা মতো এসপি কে দর্শন দিয়ে রাজ্ আজ্ঞা পালন করলেন। তারপর সোজা সেই পুরোনো হোটেলে পৌঁছে গেলো রিনচেন উত্তেজনায় চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে ।

(৫)
রুমে ঢুকে নরমাল সিকিউরিটি কম্প্রোমাইজ চেক করে দেখলো অল ওকে ।
ল্যাপটপ খুলেই কানেক্ট করলো সিকিওর মিটিং লিংক । খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইসরো স্যাটেলাইট ম্যাপিং ডাটা ভেরিফাই করা।

আজ মহালামা, অজিত মিশ্র আর রিনচেন উত্তেজিত । গলার স্বরেই বোঝা যাচ্ছে সে কথা ।

লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে গেলে শিকারী যেমন জ্বলজ্বলে চোখে শিকার কে দেখে ঠিক সেই দশা তিন জনের ।

“ড্র দি ফিবোনাচ্চি স্প্যারাল স্টার্টিং ফ্রম দা সেন্টার অফ দা ফায়ার এন্ড সেই হোয়ার ইট ল্যান্ডস কোডেক অর ৫৫,৩৪,২১,১৩,৮… ,”, কোর্ডিনেট সিকিউর চাটে পাঠিয়ে দিলো রিনচেন ।

আস্তে আস্তে স্ক্রিন এ যে ছবিটা স্যাটেলাইট লক করলো, রিনচেন ঠিক সেই ছবিটাই আর্ট গ্যালারিতে মনে মনে এঁকে ছিলো।

একটা তৃপ্তি খেলে গেল রিনচেনের চোখে ।

“সো দিস্ ইজ দা লোকেশন?”, দুজনই এক সাথে প্রশ্ন করলেন ।

“ইয়েস এন্ড নো”, হেসে বললো রিনচেন ।
“দেন হয়ার”, প্রশ্ন করলেন মিশ্র ।
“ড্র এ লাইন জাস্ট ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেল ৫০০ কিমি রাইট দেন ২৫০ কিমি স্ট্রেইট বিলো, এন্ড ইউ উইল ল্যান্ড এইট নিয়ার ডাকলাম।এক্সাক্ট ভুটান সিকিম বর্ডার । লাকি ইট ইজ ইন ইন্ডিয়ান এডমিন্স্টারেড এরিয়া,” , বললেন রিনচেন।

” মিসিং ফাইনাল টু পেজ এন্ড দি সিক্স ফিট আইডল ইজ দেয়ার, অরিজিনাল কল্পবিগ্রহ হুজ ফিট সোয়েপ্ট বাই স্প্রিং ওয়াটার এন্ড দ্যাট ওয়াটার ইজ হোলি ওয়াটার ফর লোকাল ট্রাইব্স। হু লিবস মোর দেন ১২০-১৬০ ইয়ার্স। ইউএস গট দা স্মল রেপ্লিকা ডিউরিং চাইনিজ ক্যাপচার অফ টিবেট ইন ১৯৫৯। চায়না ইন্ভেডেড ইন্ডিয়া ইনসার্চ অফ দ্যাট ইন ১৯৬৪। আই ডাউট ইট । ফ্রম অতীশ দীপঙ্কর মেনুস্ক্রিপ্ট ,আই ওয়াজ গেসিং দ্যাট “, প্রশ্ন করলেন মহা লামা ।

“ইয়েস স্যার, বিংগো “, হেসে বললেন রিনচেন ।
“আই ওয়াজ নট সিওর, ইউ মেড ইট ফর অল অফ আস”, মহা লামা বললেন ।

“ব্রেভো , ইউ হ্যাভ মেড ইট”, বললো মিশ্র ভারতের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ইন্টেলিজেন্স ম্যান ।

“ব্যাট স্যার, উই গট কম্পানি, মিস্টার লি , ধর এন্ড ম্যাক আর হিয়ার”।, বললো রিনচেন ।
“মুভ টু সিকিম বেস, ইউ উইল গেট মোর ওয়েল উইশরস দেয়ার”, হেসে বললেন মিশ্র ।

“হু আর দে”।

“ইওর লুক এ লাইক সুমন হ্যাড মেনি ফ্রেন্ড,” বলে হাসলেন অজিত স্যার ।

“ও নো প্লিজ হেল্প আই ক্যান নট ডিচ ডেম ফর লং”, বললো রিনচেন ।

“টুমোরো আর্মি হেলিকপ্টার উইল টেক ইউ টু পেলিং ডাইরেক্টলি এইটও ক্লোক শার্প , ব্যাট ক্যারেফুল নেক্সট লেভেল উইল বি মোর লাইফ থ্রেটনিং । অল দা বেস্ট ওভার এন্ড আউট “, মিটিং লিংক কেটে গেলো ।

বিপাশার স্রোতের মাঝে আজ অমাবস্যা দীপাবলির রাত দূরে গ্রামে পটকা পুড়ছে।

(৬)
কলকাতায় নেমেই বিল্টু মা কে ফোন করলো না হলে চিন্তা করবে ।

সব মাল নিয়ে গ্রীন চ্যানেলে বেরিয়ে এলোওরা ।
পম নাগেরবাজার, বিল্টু আর শতরূপা যাবে সুভাষনাগর ।

পার্থ ,অর্পিতা,চন্দ্রা,সুজয়,উদিত সবাইকে হোয়াটস্যাপ এ ওদের কলকাতা এয়ারপোর্টের ছবি পাঠিয়ে দিলো।

বাইরে বেরিয়ে দেখে ডিসিপি উত্তরা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে।

“ওয়েলকাম টু কলকাতা”, হেসে বললো উত্তরা ।
শতরূপা জড়িয়ে ধরলো উত্তরাকে ।

বিল্টু দুস্টু হেসে বললো “ক্যান আই হুগ্ টু” ।
পম বললো “আমিও লাইনে আছি তাহলে” ।

উত্তরা বললো “রুলার দিয়ে সিধে করে দেব, বদমাইশ দুটোকে”। শতরূপা আর উত্তরা দুজনেই হাসতে লাগলো । বিল্টু আর পম আজও সেই ছেলেবেলার মতোই শিশু থেকে গেলো।

উত্তরার এসইউভি তে মাল তুলে দিলো বিল্টু আর পম ।
উত্তরা ওদের ছেড়ে দেবে। আগে বিল্টু পরে পম নামবে ।

হোয়াটস আপ মেসেজের বন্যা ওয়েলকাম টু ইন্ডিয়া ।

POM Biltu and Shatarupa at Newark Airport
POM Biltu and Shatarupa at Newark Airport

(ক্রমশ)

কাল্পনিক কাহিনী বাস্তবের চরিত্র

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here