করোনা পরিস্থিতিতে গৃহহীন বা ফুটপাথে থাকা মানুষজনদের খাদ্যের ব্যবস্থা করতে কেন্দ্রীয় সমাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ণ মন্ত্রকের উদ্যোগের আওতায় এলো কলকাতা সহ ১০টি শহর
By PIB Kolkata
সাফল্যের কাহিনী
নিবন্ধ
** শ্রীজাতা সাহা সাহু
স্বামী বিবেকানন্দ একসময় বলেছিলেন, ‘জীবে প্রেম করে যেই জন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর’। এর অর্থ মানব কল্যাণে নিঃশর্ত সেবা মানুষকে ঈশ্বরের কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং তাঁকে সেবা করার সুযোগ করে দেয়। এই ভাবনাকে মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সমাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ণ মন্ত্রক দেশের বেশ কয়েকটি বড় পৌরসংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে যাতে, ১.২৭ কোটি গৃহহীন বা ফুটপাথে থাকা গরীব মানুষজন এবং পথের ভিক্ষুকদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্যের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। করোনা পরিস্থিতিতে যখন দেশের সর্বোত্র লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, তখন, এই সব মানুষগুলির সামনে উপার্জনের পথ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রক একটি প্রকল্পের সাহায্যে কলকাতা সহ দেশের ১০টি শহরকে নির্বাচিত করেছে, যাতে সেই শহরগুলির ভবঘুরেদের জন্য লকডাউন পরিস্থিতিতে বিনামূল্যে খাদ্যের ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়। এর পাশাপাশি, ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে যারা ক্ষুন্নিবৃত্তি করে তাদের জন্য একটি সুসংহত পুনর্বাসন ব্যবস্থা করে দেওয়ার উদ্যোগ-ও মন্ত্রকের তরফে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের চিকিত্সা, তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দিকেও নজর রাখছে সরকার। এরই অঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত রাজ্যের প্রশাসন এবং পৌরসংস্থা বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে এদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে এগিয়ে এসেছে। কলকাতা ছাড়া আর যে নয়টি শহর এধরনের ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, বেঙ্গালুরু, লক্ষ্ণৌ, নাগপুর, পাটনা এবং ইন্দোর।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত ভারতবর্ষ-ও বর্তমানে কোভিড-১৯ রোগের বৃত্ততে চলে এসেছে এবং সেই কারণেই অন্যান্য অনেক দেশের মতই ভারতবর্ষে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে সরকারের তরফে। এই পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ভবঘুরে, ভিক্ষুক, আশ্রয়হীন মানুষজন অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে পড়েছে এবং এদের মধ্যে অনেকেই দিনের পর দিন না খেয়ে রয়েছে। এই সব মানুষজনকে সাহায্য করার জন্য উল্লিখিত ১০টি শহরের পৌরসংস্থাও এগিয়ে এসেছে এবং প্রশাসনের নির্দেশ মত তারা এই মানুষগুলিকে বিনামূল্যে রান্না করা খাবার যুগিয়ে চলেছে লকডাউন পরিস্থিতিতে, যখন এদের উপার্জনের আর কোন উপায় নেই । উল্লেখ করা যেতে পারে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে পৌরসংস্থাগুলি ভবঘুরে মানুষদের চিহ্নিত করতে পারবেন, যাতে আগামীতে তাদের একটি সুসংহত জাতীয় প্রকল্পের আওতায় আনা যায়।
এই প্রকল্পের অন্তর্গত, কলকাতা শহরের ১.৩ লক্ষ এমন মানুষদের বিনামূল্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে কলকাতা পৌরসংস্থা এবং কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে। এমন একটি অঞ্চল হল কালীঘাট, যেখানে, একটি বাড়িতে প্রায় ৪০০০ গৃহহীন মানুষকে বসবাসের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকে ভয় করছেন যে, যেহেতু বহু সংখ্যক ভবঘুরে মানুষ এই বাড়িটিতে রয়েছে এবং তাদের মধ্যে হয়তো কারোর কারোর জ্বর বা সর্দি-কাশি থাকতে পারে, সেই কারণে কালীঘাট থানার পুলিশ তাদের ওপর নজর দিচ্ছে বেশি করে। দুপুরে যেই সময় এইসব মানুষদের রান্না করা খাবার দেওয়া হয়, সেই বিশেষ সময়ে একসঙ্গে বেশি সংখ্যক মানুষ সমাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং জীবাণু মুক্ত করার জন্য তাদের হাত ভাল করে ধুয়ে খেতে বসছেন কিনা সেটি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে ভিডিও করে রাখছেন তারা।
কলকাতার অন্যান্য এলাকা যেগুলি প্রশাসনের তীক্ষ্ণ নজরে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে বৌবাজার, কলেজস্ট্রীট, রাজাবাজার, এন্টালি, ক্যানেল ইস্ট রোড, খিদিরপুর, গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজ এবং ভবানীপুর।
কলকাতা পুরসভার বিশেষ পৌর কমিশনার (উন্নয়ন, সাধারণ, কর্মচারী ও সরবরাহ) শ্রী তাপস চৌধুরী বলেন, যে ব্যবস্থা প্রশাসনের সাহায্যে নেওয়া হয়েছে তাতে এই শহরের কোন ভিক্ষুকই না খেয়ে থাকবে না। এই সব মানুষজনকে দুপুর এবং রাত্রি দু-বেলাই রান্না করা খাবার বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে এই সময়ে।
রাজ্যের মহিলা ও শিশু বিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গৃহহীন মানুষদের জন্য ৩২টির মত আশ্রয়স্থল রয়েছে বিভিন্ন এলাকায় যেমন, কলেজস্ট্রীট, বেলেঘাটা মেন রোড, রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রীট, তপসিয়া রোড, মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচ প্রভৃতি।
প্রসঙ্গত, বিনামূল্যে রান্না করা খাবার যে ১০টি শহরে বিতরণ করা হয়েছে তার মধ্যে ভবঘুরেদের সংখ্যার নিরিখে সর্বাগ্রে রয়েছে দিল্লি। সেখানে ৭৫ লক্ষ এমন মানুষকে বিনামূল্যে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে। এর পরে রয়েছে বেঙ্গালুরু (১৪ লক্ষ এমন মানুষ), মুম্বাই (৯.৮ লক্ষ এমন মানুষ), ইন্দোর (৮.৪ লক্ষ এমন মানুষ), হায়দ্রাবাদ এবং লক্ষ্ণৌ (যথাক্রমে ৭ লক্ষ করে এমন মানুষ), চেন্নাই (৩.৫ লক্ষ এমন মানুষ), নাগপুর (০.৮ লক্ষ এমন মানুষ) এবং পাটনা (০.৫ লক্ষ এমন মানুষ)।
এই প্রেক্ষিতে প্রশাসনের তরফে এমন উদ্যোগে আশা করা যায় দেশের ভবঘুরে মানুষদের যথাযথ পুনর্বাসন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সম্ভব হবে অচিরেই, যাতে করোনার মারণ গ্রাস থেকে এদের রক্ষা করা যায়। আমরা জানি, বর্তমানে কলকাতার কালীঘাট ও ভবানীপুর এলাকা দুটিতে করোনার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় এই দুটি এলাকা অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আসুন আমরাও এগিয়ে আসি। লকডাউন মান্য করে বাড়ির ভেতরে থেকে নিজেদের সুস্থ রাখি, পরশিকে সুস্থ রাখি এবং সর্বোপরি শহরের আমজনতাকে সুস্থ রাখি।
** লেখিকা কলকাতাস্থিত প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো দফতরের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন অফিসার।