বাংলাদেশে মেডিক্যাল পাঠরত ভারতীয় ছাত্ররা বিপদে – প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দিতে গড়িমসি করছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল শিক্ষা আধিকারিক,দুই দেশের সরকারের সাহায্যের আশায় সকলে
নিজস্ব সংবাদদাতা,
ঢাকা,বাংলাদেশ
২০২০ -২০২১ শিক্ষাবর্ষে ১১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া এমবিবিএস কোর্সের বিদেশি শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। এ সকল বিদেশি শিক্ষার্থী নিজ দেশের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করেই বাংলাদেশে পড়তে আসেন। ২০২১ সালের করোনা বিপর্যয়ের কারনে নির্ধারিত সময়ে পরে ভর্তির সুযোগ পান তারা। ইতোমধ্যে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজে তারা ক্লাসও করছেন। কিন্তু তারা যখন তাদের সনদ সমূহের সমতা কারনের জন্য আবেদন করেন তখন তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে করে এই সকল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন রীতিমতো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজের সুনাম ক্ষুন্নসহ বিদেশি শিক্ষার্থীদের এদেশে পড়তে আসার যে অপার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছিলো তাও হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।
প্রতি বছর ভারত, নেপাল, ভুটান সহ সার্ক ভুক্ত দেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় বহু ছাত্রছাত্রী এমবিবিএস এবং বিডিএস কোর্সের জন্য বাংলাদেশে পড়তে আসেন। তার কারন বাংলাদেশে ভালো মানের শিক্ষা এবং স্বল্পব্যয়। এতে করে বিদেশে যেমন বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে । এছাড়া বাংলাদেশের মেডিক্যাল ম্যান নিয়ে বিশ্বে সুনাম তৈরী হচ্ছে , অথচ সামান্য কারনে এই সকল শিক্ষার্থীদের যদি তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়, তাহলে আগামীতে ওই সকল দেশের শিক্ষার্থীরা এদেশে না এসে চীন, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশে চলে যাবে। এতে করে বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থায় নাজুক অবস্থার তৈরী হবে সন্দেহ নাই। এবং সরকারি বেসরকারি ক্ষেত্রে বিদেশী মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন ব্যাহত হবে ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ১৮ জানুয়ারীর এক চিঠিতে যেখানে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে ৯ জন বিদেশি শিক্ষার্থীকে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়েছে, সেখানে ১৯ জানুয়ারীর চিঠিতে একই শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ৫২ ভারতীয় ও ৬জন নেপালীসহ সর্বমোট ৫৮ জন বিদেশি শিক্ষার্থীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যা রীতিমতো পক্ষপাতদুষ্ট, যখন তারা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থান ও ক্লাস করছে। এতে করে প্রতিয়মান হয় যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যখন বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে অস্থিরতা চলছে তখন সুকৌশলে কিছু আমলা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক বিনষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। এছাড়াও বিদেশে বাংলাদেশ সরকারের সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট করে দেশের সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার সামিল বলে ওয়াকিবহল মহলে গুঞ্জন ।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ভারতীয় দূতাবাসকে চিঠি দিয়ে অবহিত করে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আর্জি জানিয়েছেন। তারা অনেকেই জানিয়েছেন এদেশে পড়তে আসার জন্য তাদের পারিবার লোন করে করেছেন। তাদের ফেরত পাঠানো হলে তাদের শিক্ষাজীবন যেমন বিপন্ন হবে তেমনি পুরো পারিবার প্রচন্ড ভাবে আর্থিক ভাবে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। কলেজ গুলো তাদের ভর্তি না নিলে তো তারা ভর্তি হতে পারতো না। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কেন এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে? যেখানে করোনা মহামারীর মধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে পৌঁছে দিতে পারেনি। ফলে নম্বর সমতাকরন সনদ দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে দায় চাপানো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপর।
এছাড়া পশ্চিমবাংলা সহ ভারত বা সার্ক ভুক্ত দেশের শিক্ষার মান সমতুল্য বলে ধরা হয় এবং এক দেশের সনদ অন্যদেশে গ্রহণ হয়ে আসছে । এমন নয় যে এই বছরই প্রথম ভারতের শিক্ষা সনদ নিয়ে কোন ছাত্র ভর্তি হলো । এমনকি বাংলাদেশের বহু মাননীয় নেতা মন্ত্রী ভারত থেকে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন। এবং ভারতেও অনেক নেতা মন্ত্রী বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন ।
সুতরাং করোনা কালীন সময়ের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাসহ এই সকল বিদেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নির্বিঘ্ন করতে এবং ভারত বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্ক রক্ষার স্বার্থে ও মানবিক দিক বিবেচনা করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাটি তুলে নেয়া অত্যন্ত জরুরী বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ও দুই দেশের সরকারের কাছে আরো মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সমস্যার সমাধানের আবেদন জানা হচ্ছে । ভারত ও নেপাল সরকারের উচিত সর্বোচ্চ স্তরের আধিকারিক ও মন্ত্রী পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ।
ছাত্রদরদী বাংলাদেশ সরকার ও মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা করা যায় এই সমস্যার সুষ্ঠ সমাধান করবেন ।