মগজ ধোলাই – বাবু বাঙালির রক্তের গ্রুপ ও বিধাতার নতুন বিধান

0
640
Drunken State - মগজ ধোলাই - বাবু বাঙালির রক্তের গ্রুপ ও বিধাতার নতুন বিধান
Drunken State - মগজ ধোলাই - বাবু বাঙালির রক্তের গ্রুপ ও বিধাতার নতুন বিধান
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:12 Minute, 15 Second

মগজ ধোলাই – বাবু বাঙালির রক্তের গ্রুপ ও বিধাতার নতুন বিধান
বিদূষক সান্যাল

শীতের রাত কলকাতা শহরের এক ব্লাড ব্যাংকের সামনে দুই বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে ।

তার মধ্যে একজন বিধাতা, খুব সংকটে পারিয়াছেন , খুবই চিন্তিত ।

এমন সময় অপরজন নারদ মুনী আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন,”প্রভু কেন আপনি বিচলিত?”।

উদ্বিগ্ন বিধাতা বললেন ,”শ্রী ভগবান জানতে চেয়েছেন এই করোনা কালে ব্লাডব্যাংক গুলিতে কোন কোন গ্রূপের ব্লাড সংকট আছে”।

নারদ কোহিল , ” এতে বিচলিত কেন প্রভু?এত অতি সহজ বিষয়”।

বিধাতা কহিলেন,”হে মুনিবর, আপনি এর পিছনের পোবলেম কি জানেন না?”।

“না তো”, নারদ কহিলেন ।

তবে শুনুন,”আগে রক্তে গ্রূপ করিতাম কেমন মানুষ তার ওপর ভিত্তি করে, যেমন শিক্ষক ,ব্যারিস্টার ,ডাক্তার , বিজ্ঞানী ,শিল্পী ,সাহিত্যিক,খেলোয়াড়, রাজোচিত নেতা মানে সকলেরই কিছু না কিছু সদ্ গুন্ রক্তে থাকিত, তবে মোটের ওপর ৯০ ভাগ সৎ রক্ত ছিল। এমন কি কিছু ইস্পেশাল রক্তের ধারায় একাধিক গুন্ ছিল। সেই কারণে নতুন খোকা খুকুর মর্তে যাবার আগে ভগবান তাঁদের আবদার শুনে সেই বাপের ঘরে মায়ের কোলে পাঠাতেন, যাতে রক্তের ধারা বজায় থাকে।

এই কারণে প্রবাদ চালু হলো “বাপ্ ক্যা বেটা।”

“হ্যাঁ সে তো আমরা জানি, এখন সমস্যা কি?”, নারদ প্রশ্ন করলেন।

“আজ কয়েকদিন হলো, এক খোকা বায়না করেছে, সে গত জন্মে ,এক সজ্জন বাঙালি আদর্শ শিক্ষিত ও দেশবরেণ্য মানুষের সন্তান ছিলেন। সৎ হিন্দুর মানবিক গুন্ ও জ্ঞান তাঁর পরিবারের অহংকার ছিল। দেশের মানুষ তাদের পরিবারের উদাহরণ দিতো সকলকে। এবার পাঠালে তেমনি এক পরিবারে পাঠাতে। ভগবান হ্যাঁ বলে দিয়েছেন আর তাতেই হয়েছে কেলেঙ্কারি”।

“কেন ?”, নারদ কহিলেন আশ্চর্য্য চোখে।

“আরে বাঙালির রক্তের গ্রূপ এনালাইসিস করিলাম, শিক্ষক, ব্যারিস্টার ,ডাক্তার , বিজ্ঞানী ,শিল্পী ,সাহিত্যিক,খেলোয়াড়, রাজোচিত নেতা মানে ধরো বাংলার বাঘ আশুতোষ , দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস , ড.বিধান চন্দ্র রায় বা স্যার ড. নীলরতন সরকার, যামিনী রায় কি রামকিঙ্কর বেইজ, বা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মায় সুনীল শক্তি কি নেতাজী সুভাষ, রামকৃষ্ণ, চৈতন্য বিবেকানন্দ কোনো ধারাই অবশিষ্ট নেই বেশির ভাগের রক্তে !!

সকলেরই কিছু না কিছু গুন্ রক্তে হাজির, তবে মোটের ওপর ৯৯ ভাগ নানা রঙে অনুপ্রাণিত রক্ত। তারপরে আরো মজার ব্যাপার রক্তে হুইস্কি ,রাম ,জিন, দেশী লিকুইড গিজগিজ করেছে। ফলে শিক্ষক হচ্ছে নীতিহীন ,বিচারক নিরপেক্ষ কিনা সন্দেহ জাগে কিন্তু কোনো প্রমান নেই, নেতা ধরে টুকে পাশ হলেন বিজ্ঞানী, আর নেতারা হাত কাটা পঞ্চু, কানা সেলিম কি লেংড়া তারেক খান কয়েক রেপ বা মার্ডার থাকলে সাথে কুলীন নেতা, জনগণের ভরসা। এর সাথে যদি ভূমিকম্পের বা সাইক্লোনের মাল ঝাড়ার অভিজ্ঞাতা থাকে, তবে একেবারে বিলেত ফেরত ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারদের মতো ডিমান্ড সব পার্টিতে ।

তবে এখনো কিছু গত প্রজন্মের আদর্শ নিয়ে চলা ডাইনোসোরস মানসিকতার সমাজসেবার ইচ্ছাধারী শিক্ষক ,ব্যারিস্টার ,ডাক্তার , বিজ্ঞানী ,শিল্পী ,সাহিত্যিক, খেলোয়াড়, রাজোচিত নেতা ভালো কথা বললেও, মানুষ তাঁদের পাগল ভেবে দূরে ঠেলে দেয়। বার খেয়ে ক্ষুদিরাম তকমা দেয়!! হায়রে জাতি ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগ আজ হাসিঠাট্টার বিষয়!! “

“ওহো এই ব্যাপার , এর সহজ সমাধান আছে”, বললেন নারদ।

“কি করতে হবে বলুন তো?”, বিধাতা উদগ্রীব হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ।

“প্রভু কিছু নেতাকে স্বপ্নে, পান্ডেমিক আর শ্রী প্রকল্পের ফান্ডা দিন। খোকাটিকে ফ্রী খেতে অভ্যস্ত করে দিন, স্কুল কলেজ বন্ধ করে মদের দোকানের লাইনে দিয়ে দিন, খুকিদের কুবের ভান্ডার থেকে ফাউ চারানা আটানা দিন সঙ্গে কিছু খুদকুঁড়ো চাল আলু আর গাঁজাযুক্ত সিরিয়াল, তাতে পরকীয়া আর ফেইসবুক প্রেম বাস্ আর কোনো চাহিদা ওই সদ্ গুনের অধিকারী হবার থাকবে না,কারো জিনে।

তবে সাবধান সুশিক্ষিত মাস্টার আর স্কুল রাখা চলবে না, আদর্শবান নেতা কেউ যেন ক্ষমতায় না থাকে, ভুল করে কেউ ভালো মানুষ সরকারি পদ পেলে, ট্র্যান্সফার আর কম্পালসরি ওয়েটিং করে দিন বছরে বার ছয়েক বাস্ রাজকার্যো কোনো বাধা আসবে না। ব্যাবসার পরিবেশ নষ্ট করে, সামাজিক প্রকল্পের নামে মোচ্ছব চলুক কিছু দিন , তারপর আর চিন্তা নেই চাকরি চাইবে না কেউ, উন্নয়ন এমন হবে যে ডোম এর চাকরিও মিনিমাম পিএইচডি হলে তবেই পাবেন। মাঝে মধ্যে চারাম চারাম ঢাক বাজান, বিরোধী কণ্ঠস্বরের পিঠে সাথে দিন নকুলদানা আর নাড়ু। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কিছু গায়েব হবে অকারণে। এই গুলোই বর্তমান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স”, নারদ হেসে বললেন।

বিধাতা হেসে বললেন,”এই সুন্দর বুদ্ধি কি ভাবে পেলেন মুনিবর। এতো সাধারণ কোনো প্যাকেজ নয়? সুভাষ বোসকে ভুলে গেলো , বিবেকানন্দ বিস্মৃত, মেঘনাথ,সত্যেন বোস,জগদীশ বোস বা প্রফুল্ল চন্দ্র কি বিদ্যেসাগর মশাই ও মনে রইলেন না কারো, এমন মগজ ধোলাই করা যায় ? “।

নারদ হেসে বললেন , “এইমাত্র ভারতের শ্রেষ্ঠ অংশ পূর্বাঞ্চলের এক এলাকায় ঘুরে এলাম প্রভু। বেশ কয়েক যুগ ধরে এনারা সযতনে দেশহিতে শিক্ষা,কৃষ্টি ও ঐতিহ্য নবরূপে সাজিয়ে নিয়েছেন। ভিন্ন প্রদেশের মস্তিস্ক ইম্পোর্ট করে পাকা মাথার কাজ চলেছে। এর আগে সেই শহর নোবেল নামের কিছু চাকতি নিয়ে বড় অহংকার করতো , দেশের সেরা, দেশের সেরা বলে হাঁকতো। এখন সমাজতন্ত্র সর্বত্র বুদ্ধিমান আর বেকুব সব সমান কোনো শ্রেণী বিভাজন নেই ,প্রভু ।

আগের ভুল নীতি আর চলে না, তাই বাংলার বাঘ আশুতোষ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস , ড. বিধান চন্দ্র রায়, স্যার ড.নীলরতন সরকার, যামিনী রায় কি রামকিঙ্কর বেইজ, বা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ, নজরুল মায় সুনীল শক্তি কি নেতাজী সুভাষ, রামকৃষ্ণ, চৈতন্য বিবেকানন্দ ইত্যাদি বাতিল কোনো ধারাই নেই বাকি রক্তে, এক মজার খেলার ফল।

এখন শুধুই শ্রী আর রত্নে দেশ ভরা প্রভু। প্রতি ওর্য়াড এখন কম করে ২-৩ টি অমৃত সুধার দোকান বসবে। আগের যত নষ্ট হবার জায়গা যেমন স্কুল কলেজ , সাহিত্য চর্চার ক্লাব সব ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেবে, এটাই আশার কথা। আর এই মহান কাজ বাংলার নতুন বাঙালি রক্তের গ্রূপ নতুন নতুন ফুলে গন্ধে ভরে উঠেছে। অনুপ্রেরণার রং আলাদা হলেও, ঢং একই থাকে, এটাই মজার কথা, মাঝে ডাল পাল্টে নিলেই আগের পাপ ধুয়ে যায়| তাই মন্দির থেকে মামা,দাদা দিদির বাড়ি ভিড় বেশি”।

“আহা সায়ং ভগবান চাইলেও, এতো দ্রুত নরক গুলজার পরিষ্কার করতে পারবেন না, আসুন এই নিয়ে একটা উৎসব করি।”

“চিন্তা নেই প্রভু সামনেই ভন্ডশ্রী উৎসবের আচ্ছা দিন মেলা প্রকল্প, ফেলে ছড়িয়ে পর্দার আড়ালে আয় চলে বেশ , এই জন্যই তো চলে কাটমানি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস । দেশ এখন তন্ত্রসেবার কারণবারির একনম্বর মার্কেট, সব রোগের ওষুধ বলে জানে, তাই তান্ত্রিক নেতাদের খুব কদর, বিশেষ করে বুড়ো নেতা আর পালিশ করা বুড়ীর প্রেম বেশ টিআরপি দিলো কদিন,উত্তমকুমার আর সুচিত্রা ম্যাডাম তাই স্বর্গে বসে আর টিভিতে সিনেমা দেখেন না। ঘন্টা খানেক সঙ্গে দুশমন ইন ক্রস ফায়ার বলে এক কমেডি খুব জনপ্রিয়, যা দেখায় তাই মানে লোকে”।

“কেউ প্রতিবাদ করে না মুনিবর?”, বিধাতা প্রশ্ন করলেন।

নারদ উত্তর দেবার আগেই কে যেন চিৎকার করলো, “জাগতে রাহো”, প্রবল চিৎকারে ডেকে উঠলো পাহারাদার আর চৌকিদার । চারি দিকে তখন অন্ধকার।

এমন সময় ধড়ফড় করে জেগে উঠলেন ঘুমন্ত পচাদা, মাঝ রাতে এ কি স্বপ্ন দেখলেন।

পাশের ঘরে রানী দিদি কে প্রশ্ন করলেন “নেতাজি কি ফিরবেন না দিদি?” উত্তর নেই। আবার ডাকতেই,রেগে জবাব দিলেন “কাল রাতের চোলাই পরে আছে না, দু ঢোক গিলে আবার কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পর, ঘুম এসে যাবে , নেতাজি নয় এবার রূপ কি রানী চোর কি রাজা ছবি দেখ স্বপ্নে”।

পচাদার হাতের গেলাসে চোলাইয়ের মধ্যে এখন শেষ রাতের পূর্ণিমার গণতান্ত্রিক চাঁদ দেখা যাচ্ছে।

হ্যাপি নিউ ইয়ার বলে পাস্ ফিরে শুয়ে আবার, স্বপ্ন দেখছে পচাদা ।
কে যেন চিৎকার করলো, “জাগতে রাহো”, প্রবল চিৎকারে ডেকে উঠলো পাহারাদার আর চৌকিদার । চারি দিকে তখন অন্ধকার।

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD





LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here