পড়তে হয় নৈলে পিছিয়ে পড়তে হয় – জ্ঞান দেয় নম্রতা, নম্রতা আনে যোগ্যতা
ডাঃ রঘুপতি সারেঙ্গী।
দক্ষিণ ভারতের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ, জে. কৃষ্ণমূর্তি তাঁর লেখার এক জায়গাতে দুঃখ করে লিখছেনঃ “Some of us think. Many of us think we think and most of us never think of thinking.”
বেদ-উপনিষদ এর ভূমি,আর্যাবর্তে অন্ততঃ এ জিনিষ হওয়ার কথা কখনোই ছিল না, ইদানিং কিন্তু হচ্ছে। ভারতবর্ষের যা কিছু শিক্ষা, যা কিছু প্রাথমিক ভাবনা তার কেন্দ্রবিন্দু বেদ। এতে কারুর কোনো সন্দেহ নেই। ‘বেদ’ এর আক্ষরিক অর্থ জ্ঞান-রাশি। ‘উপনিষদ’ হল তত্ব-বহুল, চিন্তার রসদ। ভাবতে কষ্ট লাগে, সরস্বতী আর দৃশদ্বতির যে মধ্যভাগ একদিন প্রতিটি ব্রাহ্মমুহূর্তে ঋষি বালকদের বেদমন্ত্রে কল্লোলিত হোত, আজ হয়তো সেখানেই মানুষের ঘুম ভাঙছে মোবাইল এর ঘন-ঘন Notification শুনে।
কিন্তু, কী করে অস্বীকার করি, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে পড়াশুনা করার শৈলী, সে তো আর্যাবর্তের ই হাত ধরে শিখেছে বিশ্ব। রত্নগিরী, বিক্রমশীলা, জগদ্দল, পুষ্পগীরি, ওদন্তপুরী, সোমাপুরা, নালন্দা, তক্ষশীলা, বলভি, বিক্রমপুর সহ আরও বেশ কিছু নাম ছিল এই তালিকায়। ‘বণিকদের’ বাদ দিলে, আর যারা অনুপ্রবেশকারী তাদের লক্ষ্যই ছিল আমাদের মেধা, আমাদের মহার্ঘ্য সব পুস্তক।
জানা যায়, নেপালের শাক্য বংশের রাজপুত্র যেখানে যাকে দেখতেন, তাকেই ডেকে বলতেন, “এহো পাসিকো”….কে কোথায় আছ, এসো পড়াশুনো করি, জ্ঞানের চর্চা করি।”
জৈন বললো, ” বিবেকী হও “…… মানে, জীবনের আসল প্রয়োজন কোন জিনিসটা, সেটাই প্রথমে বোঝ। Economics এর ভাষাতে, Need থেকে Requirements কে পৃথক করতে শেখার নাম ই ‘বিবেক’। ঘুরেফিরে সেই পড়াশুনার গল্প।
Modern Neuro-Psychology বলে, জীবনের ৭০-৮০ শতাংশ জ্ঞান আমরা পড়াশুনার মধ্য দিয়ে দেখে, আহরণ করি।
কথায় আছে, ” যাঁহা না পৌঁছে রবি, তাঁহা পৌঁছে কবি।”
বড়দের মুখে অন্ততঃ শুনেছি, ভিক্টর হুগো বলতেন,” বই হোল সভ্যতার রক্ষাকবচ।” আনাতোল ফ্রাঁসের বই পড়েনি জানলে, প্যারিসের নাগরিক লজ্জা পেত একদিন। কিপলিঙ্ বা অস্কার ওয়াইল্ড্ পড়েনি এমন বাসিন্দা লন্ডনে কোনোওদিন ছিল কী? সঠিক জানা নেই। তবে এটা জানা আছে, মার্জিত মেধা, পরিশীলিত বুদ্ধি, সংযত ভাষা-বোধ আর বিনীত ব্যবহার মানুষ কে মুগ্ধ করে চলেছে চিরকাল, সমাজকে করেছে অলঙ্কৃত …..তা কাব্য-চর্চা ছাড়া কখনোই ফুটে উঠতে পারে না এই রক্ত-মাংসে গড়া শরীরে।
প্রমথ চৌধুরী বলেন, “আমার মনে হয়, এদেশে লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয়।” মানুষের দর্শণ- বিজ্ঞান, ধর্মনীতি, রাগ-অনুরাগ, আশা-নৈরাশ্য, স্বপ্ন-সত্য …. এ সকলের সমবায়ে সাহিত্যের জন্ম। মার্কিন টোয়েন এর কাছে আদর্শ একটি জীবন মানে, “ভালো বন্ধু, ভালো বই এবং একটি শান্ত বিবেক।” নেপোলিয়ন বোনাপার্ট আবার, সংখ্যা- তত্ব দিয়ে বলছেন, মাত্র “৬০,০০০ বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল।”
এবার, আবার একটু নিজের দেশের দিকে তাকাই, আসুন। ন্যায়-দর্শনের সর্বশ্রেষ্ট ভাষ্যকার, বাৎসায়ন তাঁর ‘কামসূত্র’ এর এক জায়গাতে শয্যার বর্ণনা করছেনঃ
” বাসগৃহে অতি শুভ্র চাদর পাতা শয্যা,দুইটি বালিশ,প্রতিশয্যিকা। শিরোভাগে বেদিকার উপর রাত্রিশেষে অণুলেপন……….. সৌগন্ধপুটিকা, তাম্বুল। ভূমিতে পতংগ্রহ (পিকদানি) ভিত্তিগাত্রে নাগদন্তাবসক্তা বীণা ও বই।,” বুঝুন, বই এর মাহাত্ম্য!
শিশুর অন্নপ্রাশন এর অনুষ্ঠানের সাজানো থালাতে থাকে বই, মৃত্যুর মুহূর্তে ও “কানে-কানে” বই আবার শ্রাদ্ধ-পর্বের শেষেও প্রতি দানের সাথে সেই একটি ছোট্ট বই (গীতা)। অথচ পৃথিবী-ব্যাপী অধিকাংশ মানুষ এখন স্বীকার করছেন যে, বর্তমান প্রজন্মের কাছে বই পড়ার টান আজ তলানীতে পৌঁছেছে। বুকার পুরস্কার বিজয়ী, ব্রিটিশ সাংবাদিক ও ঔপন্যাসিক, হাওয়ার্ড় জ্যাকবসন্ তথ্য দিয়ে জানাচ্ছেন, সোশাল-মিডিয়া আর স্মার্ট ফোন এর দৌলতে ৫-১৫ বছর বয়সি আমেরিকার ছেলে-মেয়ে রা সপ্তাহে ১৫ ঘন্টার বেশি ইন্টারনেটে সময় কাটাচ্ছে। ১৪ বছর বয়সটা ওখানের নব্য যুবক-যুবতীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল কারণ ঐ বয়সে ওখানে ওদের রোমান্টিক Driving lisence দেওয়া হয়। বড়োই পরিতাপের বিষয়, এখন এখানেও ওদের আগ্রহ কমেছে।
প্রশ্ন ছিলঃ “আগামী পৃথিবী কোন্ দিকে যাচ্ছে?” তার সোজাসাপটা উত্তর ছিল,” পড়া বাদে, ভারচুয়্যালিটির দিকে।”
পরের প্রশ্ন ছিলঃ ” আপনি তবে, কী চান?”
উত্তর এলো, ” এক ফালি সাদা কাগজ চাই, কাগজের ওপর আলো চাই।”
কী বলবেন, এও কী করোনা’র ই করুনা? না কি, মোহময়ী মোবাইল এর মায়া ? কী জানি….. ভবিষ্যৎ ই বলবে।
তবু টনি মরিসন্ এখনও আশাবাদী। তিনি মনে করেন,” যদি এমন কোনো বই থাকে যা আপনি পড়তে চান, তবে এটি এখনও লেখা হয় নি। আপনাকেই লিখতে হবে।”
বন্ধু! পারবেন তো?
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.