বিপন্ন মানুষ – ধর্ম আছে কিন্তু ধার্মিক আর কেউ নেই
সুমন মুন্সী, কলকাতা
ধর্ম আছে ,কিন্তু ধার্মিক কি কেউ আর আছেন?
মানুষের মধ্যে মানবিক গুন্ কেন খুঁজতে হবে? প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে মানুষ মানবিক হবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে এক কঠিন মনস্তাত্বিক সংকটকাল এসে উপস্থিত। মানবিকতা ভুলুন্ঠিত , পদ দলিত ও অসহায় দর্শক উন্মত্ত জনতার হাতে পুতুল ।
ধর্মের রং যাই হোক হত্যার আনন্দে সবাই সমান পারদর্শী । নারী মাংসে আবাদ অধিকার হানাদারদের, বিচার ব্যবস্থা অন্ধ। প্রশাসন শাসনের থেকে অপশাসনে অধিক নিয়োজিত?
বিজয়ের পুন্যলগ্নে কেন এই বিষাদপূর্ণ পূর্ব লেখা? সম্প্রতি কিছু ঘটনা পরপর জুড়লে একটা ছবি পরিষ্কার ।
ভারত বাংলাদেশ ও পাকিস্তান কে দুর্বল করতে ধর্ম কে ব্যবহারের আন্তর্জাতিক চক্রান্ত।
শক্তিশালী উপমহাদেশ বিশ্বের পরাশক্তিদের কাছে মাথা ব্যথার কারণ । হাজার বছরের বিদেশী শাসনে জর্জরিত ভারতের মেধা তার প্রয়োজনীয় বিকাশের পথ পাইনি, কিন্তু আজ যখন মঙ্গলযান সহ করোনার বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীকে ভ্যাকসিন দিয়ে সাহায্য করছে, তা নিতান্তই এক সামগ্রিক জগৎ সভায় শ্রেষ্ট আসন নেবার পূর্ব লক্ষণ ।
ঠিক তখনি, কাশ্মীর থেকে কুমিল্লা, কান্দাহার থেকে বেলুচিস্তান কে অশান্ত করে তোলো । পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ভারতের প্রতিবেশী তাই তাদের জন্য এটা কোল্যাটারাল ড্যামেজ । চীন সেই মাও সে তুংয়ের সময় থেকেই আগ্রাসী আর ভারত মহাসাগরের এক্সেস তার চাই। সিপিইসি পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যেতে বসেছে, ভারতের পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে কঠোর প্রস্তুতিতে ।
তাই বাংলাদেশকে কাঠ গোড়ায় তুলে চিকেন নেক শিলিগুড়ি করিডোর দখল ও বাংলা হয়ে ভারত মহাসাগরে পৌঁছানো । মায়ানমারের অল্টারনেট, বাংলাদেশ । শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত এগোচ্ছে ভারতের সাথে তার বাণিজ্য ও অনন্য বিষয়ে সুসম্পর্ক চীনের বিশেষ মনকষ্টের কারণ ।
তাই হিন্দু মুসলিম বিবাদ ও গণবিক্ষোভ কে হাতিয়ার করার সহজ পথ খুঁজে নাও । ব্রিটিশের দালালদের তৈরী ১৯৪৭ এর বিষবৃক্ষ আজ মহিরূহ হয়ে উঠেছে। তিলক দেখলেই জবাই করছে একদল আর দাড়ি দেখলেই বলি কে বাখরা অন্যদল । আজানের পবিত্র ধ্বনি বা মন্দিরের ঘন্টা শান্তির নয়, আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করছে । লাঞ্চিত মানবতা ।
আফগানিস্তানের তালিবানকে কে হাতিয়ার করে আইএসআইএস , আইএস এই, চিন, সকলে ব্যাস্ত কিভাবে ভারত বাংলাদেশ কে আর একটা সিরিয়া করে তোলা যায় ।
সম্প্রতি কাশ্মীর ও কুমিল্লায় হিন্দু নিধনের এই ন্যাক্কার জনক ঘটনা, কোনো ধামাচাপা বা সান্তনাতেই আর শান্ত হবে না । হিন্দু সঙ্গবদ্ধ হতে শুরু করেছে আর সনাতন পন্থীদের নিজেদের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব ভুলে এক হয়ে লড়ার সময় এসেছে বলে উস্কানি প্ররোচনা চলবে । কিন্তু এ কি শুধু প্ররোচনা? এক দল শুধু মার্ খাবে এ চলবে না আর । সুতরাং মানুষ বিপন্ন । নিজামী মুস্তাফা বা হিন্দু রাষ্ট্র নয়, মানবিক কল্যাণ কর সমাজ পেতে কি পারে না মানুষ?
রায়টের শাস্তি জনসম্মুখে কুকুর দিয়ে খায়ানো কোনো রং না দেখে । মানবতা বিরোধীদের কোনো হিউমান রাইটস থাকতে পারে না । হিউমান রাইটস পেতে হলে হিউমান হতে হবে ।
কাশ্মীরি পন্ডিতদের ওপর এই অত্যাচারের ফল, পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের নিয়ন্ত্রণে আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা । সুতরাং বাংলাদেশ কে অশান্ত করে পুরো পূর্ব ভারতকে অস্থির করে দাও।
হিন্দু মুসলিম সহ সকল মানুষের কাছে আবেদন শান্তি বজায় রাখুন আত্মরক্ষা ছাড়া কারো প্রাণনাশ মহাপাপ, এ থেকে বিরত থাকুন ।
শেষ বিচারে নিজেকে দোষী হিসাবে তুলে ধরা লজ্জার ও এ ধার্মিক কাজ ।
ধর্মের জিগির তোলা মৌলভী বা পন্ডিত নিজে আগে ধার্মিক হন ও অন্যদের সৎ হতে উৎসাহিত করুন, তাহলেই ধর্মের জয় এমনই আসবে, গাজ্বায় হিন্দ বা গেরুয়া ঝড় লাগবে না।
বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে এগোতে বলেছেন, কিন্তু তাঁর নিষ্ফল আবেদন সন্ত্রাসীদের ভালো লাগেনি, তাই ইসকন মন্দির আক্রান্ত । বিরোধী না বিদেশী রাজনীতির প্রভাব তা আমাদের জেনে লাভ নেই। মানুষ বিপন্ন মানুষ হয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান সকলে । এ রক্তপাত দূর হোক ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য নেত্রী এই সংকট কাটিয়ে উঠবেন এবং মানুষ আবার সুস্থ জীবনে ফিরবেন এই আশা করি।
যেকোনো আক্রান্ত পরিবার কে সমসামবেদনা জানানোর ভাষা নেই । মঙ্গলময় ঈশ্বর সকলকে রক্ষা করুন ।
অতুলপ্রসাদ-সেন
হও ধরমেতে ধীর হও করমেতে বীর,
হও উন্নত শির, নাহি ভয়।
ভুলি ভেদাভেদ জ্ঞান, হও সবে আগুয়ান,
সাথে আছে ভগবান,—হবে জয় ।
নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান,
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান্;