শতরূপা তোমাকে কিছু বলার ছিল সুমনের (চতুর্থ ভাগ) – রিনচেন লামা ও শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের শেষ পাণ্ডুলিপি
(আগে যা হয়েছে জানতে ক্লিক করুন প্রথম ভাগ , দ্বিতীয় ভাগ, তৃতীয় ভাগ, চতুর্থ ভাগ,পঞ্চম ভাগ,ষষ্ঠ ভাগ, সপ্তম ভাগ, অষ্টম ভাগ, নবম ভাগ)
আগে পার্থ এত মোবাইলে ব্যাস্ত থাকতো না, কিন্তু এখন প্রায় ১৪ ঘন্টা মোবাইল নিয়ে কাজ অনলাইন ক্লাস, প্রজেক্ট টিউশন এই সব করতে গিয়ে বিরক্তি চরমে।
“বিল্টু একটু দেরি হলো, এক গার্ডিয়ান ফোন করেছিল,” বললো পার্থ ।
পার্থর স্ক্রিন জুড়ে তখন, বিল্টু মানে দীপঙ্কর ব্যানার্জী, শতরূপা ব্যানার্জী, পম মানে অংশুমান দেব রায় আর তারও বামে ড:বিপ্লব কে দেখে, একটু থমকে গেলো, কে এই ভদ্র লোক ভাবলো পার্থ?
বিল্টু পরিচয় করিয়ে দিলো ড. বিপ্লব কে এবং উনি ফ্যামিলি ফ্রেন্ড ও সাইকোলজি এক্সপার্ট হিসাবে বিষয়টা দেখবেন ।
অসাধারণ সৌজন্য দুই পক্ষের, হাত নমস্কার করলো উভয় উভয়কে ।
পম বললো, তোর পিছনে একটা পাহাড় ওটা কি কাঞ্চনজঙ্ঘা? আর লোকেশন পেম্যাৎসি ,সিকিম ।
পার্থ হেসে বললো ইয়েস ।
বিল্টু থামিয়ে দিয়ে বললো “হ্যাং ওন বয়েজ, আজ পার্সোনাল কথা পরে, আগে কাজের কথা” । গুগল, মাইক্রোসফটকে রোজ ম্যানেজ করে অফিস এ ,তাই টাইম সেন্স রোবটের মতো পারফেক্ট ।
এরপর পার্থ শুরু করলো ।
এমন নয় যে সুমনের সাথে ওর রোজ কথা হতো, সেই ১৯৯৮ তে ও ঢাকা চলে যায়, তারপর একবারই পুজোয় দেখা ২০০৮ তখন সুমন অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরছে, এয়ারপোর্ট এক নম্বর এ মোড়ে দেখা, কোনো রকমে ও ওর মোবাইলে নম্বর দিতে দিতে সিগন্যাল খুলে গেলো আর দুজনে দুই দিকে । একদিন কল করেছিলাম ধরে বললো মিটিং এ আছে, পরে ফোন করবে, করেনি। দুদিন পরে বললো এক রিলেটিভ অসুস্থ ছিলেন মারা গেলেন, তাই ভুলে গেছিলো ।
এরপর নমাসে ছমাসে নববর্ষ বা বিজয়ার সময় কথা হতো । দূরত্ব বাড়লে সম্পর্ক আলগা হয়ে যায় অথবা সময়ের ধুলো জমার আগেই সম্পর্ক ঝালিয়ে নিতে হয়। আজকের যুগে যোগাযোগ যত সহজ হচ্ছে, সম্পর্কের দূরত্ব ততোই বাড়ছে । বাবা ছেলে, মা মেয়ে এমনকি স্বামী স্ত্রী ও হোয়াটসআপ বলে কেমন আছো। বিছানার চেনা মানুষ অচেনা সে অন্তরে ।
তখন রাগ হয়েছিল, কিন্তু পরে জেনেছিলাম ও ভারতের প্রতিরক্ষার কোনো গোপন প্রজেক্টের প্রাইভেট কনসালটেন্ট ছিল| যা ডাইরেক্ট প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর মনিটর করতো, আন্ডার সিকিউরিটি হেড অফ ইন্ডিয়ান ইন্টেলিজেন্স। তাও ওর হারিয়ে যাওয়ার পর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এর অফিসার ওদের বাড়ি আসতে জানা যায় ।
“সেকি ওকি জেমস বন্ড গোছের কিছু হয়ে গেছিলো,” পম প্রশ্ন করলো ।
পার্থ বললো “না, মনে হয় ওর একটা সফটওয়্যার কোম্পানি ছিল সিকিউর সল্যুশন ফর মাইক্রোসিস্টেম্স, যেটা কম্পিউটার ফরেন্সিক নিয়ে কাজ করতো”।
বিল্টু অধৈর্য্য হয়ে ওঠে,” ভাই ইতিহাস নয় তুই কি করে বুঝলি লোকটা সুমন, সেটা বল”, মিটিং এ বাজে কথা হলে, বিল্টুর ইর্রিটেশন হয় আজ কাল । বিপি চেক করতে বলেছে শতরূপা। এবার যাবে উইকেন্ডে ।
পম আর ড: বিপ্লব গ্লাস রিফিল করে নিলো। শতরূপা আইস কিউব রেখে গেছে , সে খুবই সতর্ক, গেস্ট কি চায় বোঝে।
এতক্ষনে ছেত্রীদা যোগ দিলেন পার্থর সাথে। সংক্ষেপে পরিচয় সারা হলো ।
এরপর ঠিক সাড়ে পাঁচ মিনিটে পার্থ যা বললো, তা বলা শেষে ড. বিপ্লব সংক্ষেপে রিপিট করলেন কনফামেশনের জন্য ।
পার্থ আর ছেত্রিদার পরিবার যখন গ্যাংটক থেকে পেলিং যাচ্ছে, তখন পথে ঝড় বৃষ্টি ও ধসের কারণে ওরা আটকে যায়। পেম্যাৎসি থেকে প্রায় ২৫ কিমি আগে । গাড়ি ছেত্রী নিজে চালান, কিন্তু রাস্তা জিপিএস ভরসা, দুর্যোগে আগেরদিন টাওয়ার ভেঙেছে, তাই জিপিএস বন্ধ।
ভাগ্য ভালো পড়ন্ত দুপুরে দিনের শেষ ঘন্টার আলো আছে জায়গাটাতে। পরিবেশ অতি চমৎকার সঙ্গে মেয়েরা না থাকলে পার্থ আর ছেত্রী থেকে যেত।
এমন সময় এক পাহাড়ি ছেলে হাঁটে যাচ্ছিলো একপাল চরমি গাই নিয়ে । ছেত্রী স্থানীয় ভাষায় কথা বললো, পার্থ পুরো বুঝলো না। তবে ছেলেটি হাত তুলে পিছনে দেখাতে, ছেত্রী দা বললো, স্যার চলুন পিছনে চায়ের আর মোমোর দোকান আছে, খোলা থাকে সবাই খেয়ে নিক সাথে, থাকার একটা ব্যাবস্তা হয়ে যাবে ।
অগত্যা ৩ কিমি পিছনে, ড্রাগনস মোমো এন্ড কফি সপ খুঁজে পেলো ।
আট জনের টীম ওদের|সকলে ক্লান্ত যত না শারীরিক, তার থেকে বেশি মানসিক ক্লান্তি। সকলে টয়লেট গেলো, ছেত্রীদা চিকেন মোমো আর এগ নুডলস অর্ডার দিলো সকলের জন্য ।
“দাইজু”, তাকিয়ে দেখে কাউন্টারের ছেলেটা ছেত্রী কে ডাকছে ।
“বলুন”, ছেত্রী প্রশ্ন করলো।
“আপনারা কি পেলিং যাচ্ছিলেন?”
“কেন বলুন তো?” পাল্টা প্রশ্ন করলো ছেত্রী দা ।
আসলে এখান থেকে ৪ কিমি দূরে একটা টিবেটিয়ান স্কুল ও প্রোটেক্টেড মোনাস্ট্রি আছে , টিবেটিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজে স্টাডি হয়, শুধু লামাদের জন্য” বলে কাউন্টার বয় থামলো ।
“বেশ, কিন্তু এর সাথে আমাদের কি সম্পর্ক,”। বললো ছেত্রী ।
কিছু নয়, আমি ওই গ্রামেই থাকি | আজ ২ দিন মালিক গ্যাংটক গেছেন, আমি রোজ বাড়ি যাই বিকেলে নুরুগের জীপে । আজ ও আটকে গেলো পেলিং এ , এদিকে আপনারাও আটকে গেলেন এখানে । যদি কিছু মনে না করেন, রাতে এখানে থাকার জায়গা বলতে ওই মোনাস্ট্রির স্কুল গেস্ট হাউস। আপনারা যদি আমায় নিয়ে যান আমিও বাড়ি যেতে পারি আর আপনারাও রাতে সেফ থাকবেন । আমি সচ বলছি দাইজু। এই দেখুন আমার ডিএম পাস, বলে পকেট থেকে ম্যাজিস্ট্রেটের দেয়া বন্ সহায়কের কার্ড দেখালো ।
ছেত্রী দু মিনিট ভেবে, পার্থর দিকে প্রশ্ন সূচক তাকালো ।
এর মধ্যে ছেত্রীর ওয়াইফ প্রমীলা এসে পড়েছে সাথে মিসেস পার্থ । বাচ্ছারা মোমো খেতে আর পিছনের জঙ্গলের ছবি তুলতে ব্যাস্ত।
চারজন মিলে পরামর্শ করলো, যদিও পার্থ সাবধানী মানুষ একেবারে অচেনা লোকের কথায়, কোথাও যেতে রাজি নয় । কিন্তু ছেত্রী গুর্খা এবং খুকরি সাথেই চলে, ভয় বলে কোনো বস্তু ওর নেই, যোগ্য সঙ্গী গোর্খা রানী প্রমীলা । এমন পরিস্থিতিতে শুধু মাত্র বিশ্বজয়ী বাঙালি, বীর সুভাষের দেশের লোক ভীতু শোনা লজ্জার হবে মনে করে সম্মতি দেয় ।
দোকান বন্ধ করে, বিকেল ৪:৪৫এ গাড়ি ছেড়ে ৫:৩০ নাগাদ মনাস্ট্রি পৌছালো গাড়ি ।
গোঁধুলির আলোয় মোনাস্ট্রি আর তার ব্যাক গ্রাউন্ড যেন মাইকেল এঞ্জেলোর পেইন্টিং ।
লোকাল ছেলেটি মোনাস্ট্রির গার্ড কে কি যেন বললো, গার্ড ইন্টারকমে কথা বলার পর, দুই জন লামা এলেন ৫ মিনিট পর ।
ভালো করে গাড়িতে দুই মহিমা ও চার বাচ্ছাকে দেখে, যেন একটু স্বস্তি পেলো ।
এদের একজন ভাঙা ইংলিশ আর হিন্দি মিলিয়ে যা বললো, দুর্যোগের জন্য আরো দুই পরিবার এসেছে, রুম নেই কিন্তু একটা সিক্স বেড ডরমিটরি আছে । কিন্তু আপনারা ৮ জন, প্রমীলা সাথে সাথে বললো হ্যাম এডজাস্ট কর লেঙ্গে একই ফ্যামিলি হায় “।
লামা বললো, তবু দাঁড়ান, আচার্য্য কে জিজ্ঞাসা করে অনুমতি নিতে হবে? একজন কে আইডি কর্ড নিয়ে আসুন বলে ছেত্রী কে ডাকলো । ছেত্রী বললো, পার্থ দা আপনি যান যদি গাড়ি ঘোরাতে হয়, আমি থাকি। ইশারায় খুকরি নিয়ে মেয়েদের প্রোটেকশনের জন্য থাকবে বুঝিয়ে দিলো ।
অগত্যা, পার্থ ভিতরে গেলো, আচার্য্য সৌম্যকান্তি এক লামা| কিন্তু বয়স হয়েছে আনুমানিক ৯০ বছর। পার্থ প্রণাম জানালেন লামাকে ।
লামা চমৎকার ইংলিশ বলেন,” বললেন কাল দুপুরে লাঞ্চ করে বেরোবেন। তারপর ওদের গাড়ি পিছনের পথ দিয়ে পেলিং যাবে পেম্যাৎসি মনাস্ট্রি ওই রাস্তা মিলিটারি আর এই ইনস্টিটিউট শুধু ব্যবহারের পারমিশন পায়। তাই ওনাদের গাড়ির সাথে লামার চিঠি নিয়ে গেলে পেলিং চলে যেতে পারবে আমাদের গাড়ি ।
পার্থ হিসাবি মানুষ, কত খরচ হবে চার্জ কত জানতে চাইলে , লামা হেসে বললেন ভগবান বুদ্ধ যোগান আমরা চার্জ নেই না, তবে কেউ কিছু দান করলে দান পেটিতে দিতে পারেন, যা খুশি, না দিলেও কোনো আপত্তি নেই ।
এবার হেসে হাত জোর করে বললেন, “ওঁম মণিপদ্মে হুম” অর্থাৎ সাক্ষাৎকার সমাপ্ত । সঙ্গী লামাকে টিবেটিয়ানে কি বললো আচার্য্য এবং তৎক্ষণাৎ একজন বললেন সবার আইডি কার্ড নিয়ে আপিসে আসুন ।
আবার উল্টো হেঁটে 3 মিনিট পরে গেট পেলো ।
ছেত্রী দা ঘর পাওয়া গেছে চলুন । মিসেস পার্থ বললো জয় মা তারা, বলে কপালে হাত ঠেকালো ।
পম সবার গেলাস ভরে নিলো, ওদিকে পার্থ আর ছেত্রী চা নিলো ।
এবার শতরূপা বললো, দাঁড়ান কাবাব রেডি নিয়ে আসি তারপর, আমাকে ছাড়া একটা লাইন ও নয় বলে উঠে গেল।
মিনিট ৫ পর গরম কাবাব এন্ড বারবিকিউ স্ট্যান্ড নিয়ে এসে চালু করে দিলো শোলে কাবাব তৈরী । নিন শুরু করুন পার্থদা।
কিন্তু এবার কথা বললো ছেত্রী ।
বললো, ” আমি ওদের ঘরে তুলে দিলাম, সুন্দর পরিষ্কার ঘর সাথে টয়লেট উইথ গিজার এবং জল আছে পাহাড়ে যেটা প্রবলেম । পার্থ দা কে মেয়েদের সাথে ঘরে রেখে ছোট লামার বলে দেয়া পথে গাড়ি পার্ক করতে গেলাম। মোনাস্ট্রির পিছনে বেশ খানিকটা পথ ঢালুতে নেমে একটা ঘেরা চাতাল পার্কিং, একটা ওল্ড ল্যান্ডরোভার দার্জিলিং রেজিস্ট্রেশন, একটা মারুতিভান গ্যাংটক নম্বর আর দুটো মাহিন্দ্রা বোলেরো ক্লাসিক নতুন মডেল গ্যাংটক রেজিস্ট্রেশন রয়েছে ।
গাড়ি রেখে যখন ছেত্রী বেরোলো ঝুপ করে অন্ধকার নেমেছে । ছেত্রী পাহাড়ি ছেলে, সে জানে পাহাড়ে এমনি হয় | এবার ঠান্ডা পরবে জব্বর । ঠিক এমন সময়, ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো । অগত্যা আবার গাড়িতে ঢুকে বসলো| মিনিট কুড়ি পর বৃষ্টি ধরলো । এবার ছেত্রী বেরিয়ে দেখলো, এক লামা চশমা পরে আসছেন ওর গাড়ির দিকে ।
“গুড ইভনিং, মে এই নো ইওর ডিটেলস ,” লামা প্রশ্ন করলেন ।
ছেত্রী প্রত্যসম্ভাষণ করে নিজের পরিচয় এবং এখানে আসার কারণ বললেন ।
“ও দেন ইউ আর পার্ট অফ দ্যাট ফ্যামিলি হুম হেড লামা গিভেন পারমিশন টু স্টে ব্যাক ইন দি ডরমিটরি। ওয়েলকাম । ব্যাট হোয়াট আর ইউ ডুইং হিয়ার?”, লামা প্রশ্ন করলেন ।
“স্যার ফর পার্কিং মাই জীপ্ “, ছেত্রী উত্তর দিলো ।
“ওকে কাম উইথ মি এন্ড ডু নট মুভ ইন নাইট । লেপার্ড এন্ড স্নেক আর দেয়ার । মাই নেম রিনচেন লামা, আই লুক আফটার মিউজিয়াম অফ মানুস্ক্রিপ্টস । অল এন্টিক এন্ড প্রাইসেলেস। এখানে এমন মানুস্ক্রিপ্ট আছে, যা বিক্রমশীলা মহাবিহার থেকে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর লাসা নিয়ে গেছিলেন, ইভেন শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের শেষ পাণ্ডুলিপিও । ইভেন ৩০০০ ইয়ার ওল্ড হিন্দু মানুস্ক্রিপ্ট ও আছে। রাহুল সাংকৃত্যানের স্টুডেন্ট এখানে কিছুদিন রিসার্চ করেছেন । এ ট্র্রু গোল্ডমাইন অফ নলেজ । তুমি টিচার, তাই তোমায় বললাম নইলে, এই তথ্য সাধারণের জন্য নয় । সো উই ডু নোট আল্ল্যাও এনি ওয়ান । শেষের কথা গুলো যেন বেশ কঠিন শোনালো।
এই বলে লামা হাঁটে এগোলেন সাথে ছেত্রী ।
এরপর টুকটাক কথা হলো, ইংলিশে কেমন যেন একটা ব্রিটিশ ছোঁয়া রয়েছে। সাধারণ লামা নয়, দেশ বিদেশ চষা লোক বলে মনে হয় ।
ডরমিটরি পৌঁছে দিয়ে বললেন, শার্প এইট ও ক্লক ডিনার ডাইনিং হল এ। ঘড়ি বলছে ৬:৪৫ এবং গং বাজতে লাগলো, মানে সান্ধ্য প্রার্থনা শুরু হবে ।
এমন সময় লামা নিজের হাত ঘড়িতে সময় দেখলেন । আশ্চর্য ওমেগা গোল্ড ব্যাট এটলিস্ট ১০০ ইয়ার্স ওল্ড।
“অরে সুমন না ” পিছন থেকে পার্থ স্যার প্রশ্ন করলেন ।
লামা একঝলকে চমকে হাসলেন, “নো, আমি রিনচেন লামা মিউজিয়াম ইনচার্জ” । নমস্কার করে চলে গেলেন ।
পার্থ স্যার গম্ভীর হয়ে গেলেন| বললেন,”আশ্চর্য মিল, সেই ঘড়ি সেই কপালে কাটা দাগ, সেই কণ্ঠস্বর, অথচ বলছে লামা!!!”।
রাতে খাওয়ার হলে সবাই কে দেখলেও,৪০-৪৫ জনের মাঝে রিনচেন কে দেখা গেলো না ।
পরের দিন ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চে ও নেই ।
এবার পার্থ মরিয়া হয়ে আচার্য্য কে জিজ্ঞাসা করলেন রিনচেন লামা কোথায়?
আচার্য্য বললেন, “জরুরি কাজে গ্যাংটক গেছেন। দিল্লি যাবেন” ।
” আচ্ছা আচার্য্য রিনচেন লামার দেশ কোথায়?” প্রশ্ন করলো পার্থ ।
“উই ডু নট ডিসক্লোস আওয়ার ডিটেলস টু এনি ওয়ান,” আচার্য্য উত্তর দিলেন ।
“মানে, উনি আমার ছেলেবেলার বন্ধুর মতো দেখতে তাই ,”।
এবার আচার্য্য বললেন, “ধর্মশালা থেকে আমাদের পোস্টিং হয়| স্বয়ং দালাই লামার অফিস থেকে, কে কোথা থেকে আসছেন, ওরাই বলতে পারবেন।
উনি ৩ বছর এখানে এসেছেন “।
“বাবারে”, বলে চিৎকার করলো পম, গল্প শুনতে শুনতে হাতের সিগারেট হাতেই ছেঁকা দিয়েছে । বেশ হয়েছে শতরূপা বললো,” যত ছাইপাঁশ খাওয়া” । বলে বরফ ঘষে দিলো আইস বাক্স থেকে নিয়ে । পম কে রাখী বাঁধে শতরূপা, ভাই বোনের কেমিস্ট্রিতে, বিল্টু মাথা গলায় না। হেসে সিগারেট ধরাতেই, প্রবল আপত্তি করতে গিয়ে চুপ করে যায় শতরূপা, টেনশন করছে এখন বললেও শুনবে না, মুড অফ করে নেবে ।
এদিকে ছেত্রীও একটা সিগরেট ধারালো ।
এবার বিল্টু বললো, দেখ এই ছবিটা অন্তরা দিয়েছিলো আমাকে, ওর লাস্ট তোলা ছবি । বলে ছবিটা দিলো স্ক্রিনে সেটা একটা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে তোলাছবি কলকাতা প্রেস ক্লাবে ।
দেখুন তো ছেত্রী দা সেই লোক না? পার্থ আর বিল্টু একসাথে বললো ।
ছেত্রী ভালো করে দেখে বললো, “ইয়েস, ঠিক একই ম্যান, ব্যাট ফিউ ডিসিমিলারিটি হায়” ।
লামা অনেক বেশি ফর্সা, রোগা এবং চশমা পড়েন । কিন্তু হাতের ঘড়ি সেম, আন্টিক ওমেগা গোল্ড । কপালের কাটা বোঝা গেলো না, কিন্তু চোখ একই রকম এক্সপ্রেসিভ, এজ লাইক লর্ড বুদ্ধ। নো ডাউট হ্যান্ডসাম ছিলেন, সো এস লামা । লামা ইস এবাউট ৬ফিট ২ ইঞ্চি ।
“কিন্তু সুমন তো ৫ফুট ১০ ইঞ্চি, একসিডেন্টের পর অমিতাভের হাইট পেলো কি করে?”, বললো পম ।
এবার ড. বিপ্লব বললেন, লামার পায়ে কি Lham শু ছিল? মানে টিবেটিয়ান বুট, তবে ৩-৪ ইঞ্চি হাইট বেশি দেখাবে ।
ছেত্রী ভেবে বলতে পারলো না, অন্ধকারে পা দেখেনি সে ।
“বিল্টু ছবিটা দে,” বললো পার্থ ।
“অলরেডি সেন্ট ইন ইওর হোয়াটস্যাপ” বলে খুশি হলো নিজের ওপর , হি ইস পারফেক্ট প্রফেশনাল ইন অল অ্যাকশন।
পম আবার গেলাস ভরতে গেলো, শতরূপা সাবধান করে বললো “দুটো হয়ে গেছে, এটাই লাস্ট”।
“ওকে, কুইন শতরূপা দেবী”, হেসে এমন ভাবে বললো , শতরূপা হেসে ভিতরে গেলো রেশমি বিরিয়ানি আর রাবড়ি , একটু রেজালা করেছে চিকেনের আন্তে । বিল্টুর রেড মিট আর ভালো লাগে না । বয়েস বাড়ছে না খেলেই ভালো । পম কোনো বাছবিচার করেন না ফুচকা টু ফিজি ড্রিংক সব চলে ।
ঠিক আছে নেক্সট বুধবার আমরা গ্যাংটক ঢুকবো, কলকাতা মঙ্গলে পৌঁছে মাকেও নিয়ে নেবো। অনেক দিন মার্ কোথাও ঘোরা হয়নি। তা ছাড়া তিন বছর আগে মা ই ওকে শেষ দেখেছিলো। বিজয়ার প্রণাম করতে গেছিলো । মা চিনবেন ।
“আচ্ছা, কি একটা বাংলা ছবিতে অভিনয় করলো?, গেস্ট প্রেসেন্স, হ্যাঁ মনে পড়েছে, ‘শেষ সংবাদ’, শ্রাবন্তী নায়িকা ছিল,” বললো শতরূপা।
“কারেক্ট” বললো বিল্টু ।
অন্তরা আর বাচ্ছা ওদের ডাকবি কি?, পম বললো ।
“এখনই নয়,”, ড. বিপ্লব বললেন “নিশ্চিত না হলে, এই ইসু ওনাদের ট্রোমা বাড়িয়ে দেবে ,”।
“পয়েন্ট”, বললো বিল্টু ।
“পার্থ তোরা আসে পশে, গোপনে খোঁজ চালা লোকটাকে নিয়ে ,” বললো বিল্টু ।
“আমরা আসছি পেলিং, গেট রেডি ,” বললো বিল্টু ।
*** কাল্পনিক গল্প বাস্তবের চরিত্র ***