বাংলাদেশ প্রশাসনের সচিব স্তরে আসছে পদোন্নতি – চলতি মাসেই সচিব হচ্ছেন ৬ জন
১২ অক্টোবর ২০২১,
ঢাকা ,বাংলাদেশ
Bangladesh Corespondent – Anowarul Hoque Bhuiyan
বাংলাদেশ প্রশাসনের দুই স্তরে আসছে পদোন্নতি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসনে আরো গতি আনার জন্য শুরু হলো দুই স্তরে (যুগ্ম সচিব ও উপসচিব) পদোন্নতি প্রক্রিয়া । নুতুন সচিবের পদ পেতে পারেন ছয় জন কর্মকর্তা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর তালিকা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে ।
অক্টোবর মাসের শেষের দিকে পদোন্নতির মাধ্যমে নতুন নিয়োগ বাস্তবায়িত হবে। যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি বৈঠকও করেছে প্রশাসনে পদোন্নতির সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই সঙ্গে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়েছে । আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী অন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদের পদোন্নতির জন্য ২৮তম ব্যাচকে প্রাথমিক বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডার থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মকর্তাকে বিশেষ পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হবে । এ ছাড়া যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আগে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন এমন বিভিন্ন ব্যাচের কিছু কর্মকর্তাকেও এই পদে পদোন্নতির আওতায় আনা হতে পারে।
ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি পাঠানো হয় এই পদোন্নতি কে অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়ে । এতে বলা হয়েছে, যেসব কর্মকর্তার সিনিয়র স্কেল পদে ন্যূনতম পাঁচ বছর চাকরিসহ সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের সদস্য হিসেবে অন্যূন ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদের মধ্য থেকে ১০ জনের (সিনিয়রিটির ক্রমানুসারে) নামের তালিকা ১৫ নভেম্বরের মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। ব্যাতিক্রম কৃষি ও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের ২৫ জনের তালিকা আলাদা করে পাঠাতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগাযোগের সকল তথ্য অর্থাৎ বর্তমান ঠিকানা (টেলিফোন/মোবাইল নম্বরসহ), স্থায়ী ঠিকানা এবং চাকরির পূর্ণ বৃত্তান্ত আলাদা কাগজে পাঠাতে বলা হয়।
বিশেষ ভাবে প্রমাণিত অযোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা না পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে চিঠিতে আরো বলা হয়, উপসচিব থেকে অনাগ্রহী কর্মকর্তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এই বিষয়ে এক বিশেষ নির্দেশে বলা হয়, সিনিয়র স্কেলে চাকরির মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ না হলে ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের যোগদানের জন্য নির্ধারিত তারিখের পরে যারা ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দিয়েছেন তাদের নামও তালিকায় রাখা যাবে না।
একই সাথে সিনিয়রিটি বিষয় সম্পর্কে কোনো আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকলে এবং যেসব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হলে আদালত অবমাননা হতে পারে এমন কর্মকর্তাদের নামও রাখা যাবে না। প্রসঙ্গত কোন কোন পদের ক্ষেত্রে একাদিক মামলা বর্তমান ।কর্মকর্তাদের তালিকা সিনিয়রিটি অনুযায়ী সঠিক এবং নির্ভুলভাবে পাঠাতে হবে। কোনো কর্মকর্তা যদি ভুলক্রমে পদোন্নতি পান বা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে এর দায়িত্ব বহন করতে হবে, এবং এই বিষয়ে কোনো দায়িত্ব হীনতা বরদাস্ত করা হবে না । গত ৩১ আগস্ট এসএসবির প্রথম বৈঠকের প্রক্রিয়া শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং ২০তম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হচ্ছে। ২০ ব্যাচ যোগদান করেছিল ২৯৭ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে ২৬৮ জন উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি পায়। বর্তমানে এই ব্যাচে যুগ্মসচিব হওয়ার যোগ্য রয়েছেন এমন ২৪৮জন কর্মকর্তা আছেন ।
এবারের পদোন্নতিতে বিবেচনায় রয়েছেন ৫৫৩ জন যোগ্য উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা । এর মধ্যে ২০তম ব্যাচ পর্যন্ত (লেফট আউটসহ) ৩২৪ জন কর্মকর্তা রয়েছে। ইকোনমিক ক্যাডার কর্মকর্তা রয়েছে ৩৮ জন এবং অন্যান্য ক্যাডারের ১৯১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
এসএসবি বৈঠকে পদোন্নতির জন্য প্রত্যেক কর্মকর্তার কর্মজীবনের সমস্ত নথিপত্র আলাদাভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরিজীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতির বিষয়সহ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দুর্নীতির সাথে যুক্ত যে কোনো কর্মকর্তার নাম বিবেচনা করা হবে না ।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, পদোন্নতির বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রশাসনে পদোন্নতি দিতে কাজ চলছে। কতজন পদোন্নতি পাচ্ছেন সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব না।
উল্লেখ্য, বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবের ২১২টি পদে কর্মরত রয়েছেন ৫০৪ জন। এরপর যুগ্মসচিবের ৫০২টি পদে ৫৯৫ জন। উপসচিবের ১৩২৪টি পদে কর্মরত আছেন ১৯৬৯ জন।
প্রশাসন যে কঠোর ভাবে এই বিধি লাগু করবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন, আশা করা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিমুক্ত সচিবালয়ের স্বপ্ন কঠোর ভাবে বাস্তবে রূপ পাবে।