আমি কর্ণ কে দেখেছি
সুমন মুন্সী, কলকাতা
আমি কৃষ্ণ নই, নই গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম ।
এমন কি সঞ্জয়ও নই, নই দিব্য দৃষ্টিতে বলীয়ান ।
তবু আমি কর্ণ কে দেখেছি ।
সেই কর্ণ,জন্ম পরিচয় যার অজানা ছিল,
ছিল না কোনো বংশ কৌলিন্য,সেই কর্ণ।
স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ যার কবচ কেড়ে নিতে দ্বিধা করেন না,
আমি সেই কারণ কে দেখেছি ।
কুমারী মায়ের সন্তান, এই অপবাদের ভয়ে যাকে ত্যাগ করলে,
সেই পান্ডু পত্নীর প্রথম সন্তান তাকেও দেখেছি ।
কুরুক্ষেত্রের ময়দানে, বিনা দোষে গুরু অভিশাপে,
রথের চাকার সাথে নিষ্ফল লড়াই করা কর্ণ, তাঁকেও দেখেছি ।
দানবীর হয়ে রিক্সাওয়ালা কে ১০ এর জায়গায় ২০ টাকা যে দেয়,
সেই দানবীর তাকেও দেখেছি ।
অফিসার নিজের অপরাধ ঢাকতে, তাকেই যখন দোষী বানায়,
সেই কর্ণ, তাঁকেও দেখেছি ।
সম্পত্তির লোভে হিংসা মত্ত স্বজনদের,
স্বেচ্ছায় অধিকার যে ছেড়ে দেয় সেও আজকের কর্ণ ।
যারাই তাঁর অন্নে প্রতিপালিত হলো,
তাঁরাই তাঁকে তুলে দিলো প্রশ্নের মুখে ।
হ্যাঁ , সেই লোকও আর এক কর্ণ ।
সত্যি বলার দায় নিয়ে যে কলংকের কালি মাখলো।
তাকেও কি কর্ণ বলবে না ?
বারে বারে কৃষ্ণ সেজে এসেছে,মহাকাল।
মহাকালের রথের চাকা যে থামিয়ে দিতে পারতো,
হাসি মুখে মহাকালকেই দিলো করুন ভিক্ষা,সেই তো কর্ণ ।
মহাবীর তোমারই পরাজয় করেছে, অর্জুনকে বিজয়ী বীর,
কিন্তু অর্জুন জানে, জেতেনি সে, হারিয়েছে কর্ণকে মহাকাল ।
তাই অর্জুনের জয় চাঁদের আলোর মতো কলঙ্কিত,
আর পরাজিত মহাবীর কর্ণ সূর্যের পুত্র ।
আজকের কর্ণরা, শ্রমিক,ঠেলাওয়ালা, মজুর বা দিন আনে, দিন খায়,
ভিক্ষার লাইনে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রের গান গায়।
আর ওদেরই বিধানে জিতে, আজকের অর্জুন সাম্যের গান গায় ।
ঘামঝরা দেহে, হাসি মুখে তুলে দেয়, সন্তানের ভাত,
অভুক্ত থেকে যাওয়া সেও যে, কর্ণের বিধির বিধান ।
আবার যদি মহাভারত লেখেন বিধাতা,
কর জোড়ে করবো যাচনা।
একবারের তরে কেড়ে নিয়োনা কবচকুন্ডল,
দেখি কত বড় বীর তোমাকে ছাড়া, তোমার অর্জুন ।
হাসি মুখে সেবারও যদি ভিক্ষা চাও মাধব ,
দেব কবচ খুলে আবার ।
তোমাকে দিয়ে নিঃস্ব হতে পারে কয় জন,
তোমার ভিক্ষা সেইটাই তো আমার শ্রেষ্ঠ কবচ কুন্ডল ।
আমিই তোমার কর্ণ, যার দানে রক্ষা পেল,বিধাতার মান,
আমি সেই পরাজিত হয়েও বীরশ্রেষ্ঠ তোমার কাছে ।