খুব সহজ ভাবে জানুন হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস কি ভাবে হয়
ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
২৫.০৯.২০২১,কলকাতা:
সাধারণের বোঝার জন্য অত্যন্ত সহজ ভাবে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের বিষয়টা একটু বলি। আমাদের হাঁটু হলো এমন একটি অস্থি সন্ধি যা গোটা শরীরের ভার বহন করে। দু পায়ের দুটি অস্থি সন্ধি সমান ভাবে ভাগ করে নেয় এই দায়ভার। বলা হয় আমাদের হাঁটু আমাদের শরীরের ভার সঠিক ও সার্থক ভাবে বহন করতে পারে মোটামুটি পঞ্চান্ন বছর বয়স পর্যন্ত, তারপর এর কার্যকারিতা কমতে শুরু করে। হাঁটুর অস্থিসন্ধির নিচে দুটো হাড় টিবিয়া ও ফিবুলা এবং ওপরে একটি হাড় ফিমার। মনে রাখতে হবে উপর ও নিচে যদি একটি করে মাত্র হাড় হতো তাহলে সন্ধি অনেক বেশি মজবুত হতে পারতো। কিন্তু গন্ডগোলটা করে এই এক এবং দুইয়ের (হাড়ের সমীকরণ)
দুটো হাড় সরাসরি নিজেদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করলে কিন্তু হাড়ে হাড়ে ঘর্ষণ এবং ধাক্কার কারণে দুটো হাড়ই তাড়াতাড়ি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় সংযোগের স্থলে এবং তাদের কার্যকারিতা বিনষ্ট হয়। ধরুন চাপকলের বাঁধানো প্ল্যাটফর্মের একই জায়গাতে আপনি রোজ একটা কলসি রাখেন জল ভরার জন্য। আপনি একদিন দেখবেন তাতে প্ল্যাটফর্মটি এবং কলসির তলভাগটি ক্ষয় হতে শুরু করেছে রোজ পারস্পরিক সামান্যতম ঘর্ষণের কারণেই। এবং এটা চলতে থাকলে বেশ কিছুদিন পরে কলসির তলা ফুটো হয়ে যাওয়া এবং প্ল্যাটফর্মের সিমেন্ট ক্ষয়ে ইট বেরিয়ে যাওয়া বিচিত্র নয়। কিন্তু এই দুইয়ের মাঝে যদি আপনি যদি এজটি গোলাকার রাবারের ব্যাগ অল্প ফুলিয়ে রেখে দেন তাহলে কিন্তু এই ক্ষয় বহুদিন পর্যন্ত আটকে থাকে।
ঠিক একই ভাবে হাঁটুর তিনটি হাড়ের মাঝখানে একটা এরকম বেলুনের মতো স্তর থাকে যার ভিতরে হওয়ার বদলে জল থাকে। বেলুনটির নাম সাইনোভিয়াল মেমব্রেন এবং তরলটির নাম সাইনোভিয়াল ফ্লুইড। এর কারণে তিনটি হাড় সরাসরি পরষ্পরের স্পর্শে আসেনা। ফলত ক্ষয় হয় দেরিতে। তাছাড়াও এই সন্ধিকে চারিদিক থেকে জড়িয়ে রাখে অসংখ্য লিগামেন্ট ও কার্টিলেজ, যারা হাঁটুর উপর চাপ পড়াকে অনেকখানি কমিয়ে দেয় নিজের কিছুটা দায়িত্ব নিয়ে। (ক্ষয় কাজ করতে গেলে হবেই)। একটা সময় এই মেমব্রেনেরর শক্তি কমে এবং তা আস্তে আস্তে ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে শুরু করে। একটা সময় এমনও হয় যখন ভিতরের তরল ওই মেমব্রেন ফেটে বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করে, ফলে তিনটি হাড় মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়।
এর ফলে হাড়ের এই ক্ষয়ে যাওয়াকেই অত্যন্ত সহজ ভাষায় বলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস। এখন প্রশ্ন হলো এক একজন মানুষের এক এক বয়সে হাঁটুর কার্যকারিতা কমে কেন? তার মূলত তিনটি কারণ। প্রথম কারণটি জেনেটিক। বংশ পরম্পরা কিছু মানুষের হাঁটুর অস্থি সন্ধি, তার লিগামেন্ট ও কার্টিলেজ বেশি শক্ত হয়। দ্বিতীয় কারণ হলো নিয়মিত এক্সারসাইজ ও এ অংশকে বেশি মজবুত করে। তৃতীয় কারণ হলো অস্টিওপরোসিস। এর মানে হলো একটা বয়সের পর থেকে হাড়ে ক্যালসিয়াম কমে যাওয়ার কারণে তার ঘনত্ব ও শক্তি কমে আসা এবং ভার বহনের ক্ষমতা কমে যাওয়া। ঋতুবন্ধের পর আমাদের দেশের নারীদের শরীরে ইস্ট্রজেন হরমোনের অভাব হেতু এই অস্টিওপরোসিস বেশি হয়। ফলে তাঁদের অস্টিওআর্থ্রাইটিসের হারও বেশি। আজকাল হরমোন ও ক্যালসিয়াম রিপ্লেসমেন্ট করে এ ভাঙন অনেকখানিই ঠেকানো যায়।
একটা বয়সের পরে শরীরের সন্ধিগুলিতে অবাঞ্ছিত ক্যালসিয়াম জমে সেগুলির স্থিতিস্থাপকতা কমে। ফলে তখন হাঁটুর বেশি ব্যবহারে তার আশপাশের কার্টিলেজ লিগামেন্ট এবং হাঁটুর হাড় সবই তুলনায় দ্রুতগতিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস শুরু হওয়ার প্রথম উপসর্গ হলো হাঁটু যন্ত্রণা এবং হাঁটতে ও হাঁটু চালনা করতে অসুবিধা। এইসময় থেকে হাঁটু মুড়ে ব্যায়াম করা এবং স্কিপিং করা, যা হাঁটুতে চাপ দেয়, ক্ষতিকর। খালি পায়ে না হেঁটে বাড়িতেও হাঁটতে হবে নরম চটি পরে। আর হাঁটুর অস্থি সন্ধির ঠিক উপরের ও নিচের অংশের পেশীগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য সেগুলোর ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং শুরু করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো। এতে করে সেসব পেশিও হাঁটুর ভার লাঘব করবে খানিক। যে ভাবে বললাম, বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপারটা ততখানি সহজ নয়। কিন্তু এটুকু বিষয় সহজ ভাবে বুঝলেই মানুষের অনেক কাজে আসবে বলে মনে হয়। ধন্যবাদ।
Dr. Palash Bandopadhyay, popular pediatrics expert with Post Graduate of Pediatric Nutrition,(Boston University). Doctor, Author, Poet, and a beautiful mind. He, always a great content provider for the readers with value to the core of the subject.