শান্তি! তুমি কোথায়
ডাঃ রঘুপতি সারেঙ্গী।
কবিগুরু তাঁর চিত্রা কাব্যগ্রন্থে লিখছেন:” চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু, সাহস বিস্তৃত বক্ষপট।”
আরও কতো কিছুই না চাই আমরা। আসলে, চাওয়ার যে শেষ নেই,আমাদের ! যখন রোদে হেঁটে-হেটে প্রাইমারি স্কুল এ যেতাম তখন ভাবতাম, একটা সাইকেল যদি থাকতো…. কী মজাটাই না হতো। সাইকেল হলো। মন তখন যেইমাত্র মোটর-সাইকেল এর কথা ভাবলো…. সাইকেল চালাতে এবার কোমরে ব্যাথা হলো, পায়ে দুর্বলতা অনুভব করলাম। যে কোনমূল্যে একটা মোটর-সাইকেল ও জুটলো। কিছুদিন পরেই রোদে মাথা ধরতে শুরু করলো! আসলে মনে ঢুকে গেছে,চার-চাকা’র চিন্তা!
দোষের কিছুই নেই। এটাই আমাদের মনের স্বাভাবিক গতি। এটা আছে বলেই তো জীবন বহমান। নইলে সে তো থেমেই যেতো।
কিন্তু বিপদটা ঘটে তখন, যখন ঘোড়ার মালিকের হাতে লাগাম থাকলেও তা ঠিকমতো কাজ করে না। মনের শান্তি কে ভুলে, সফলতা চাইতে চাইতেই জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দিই। এই মুসিক- দৌড়ের মাঝে পড়ে, আমরা খালি “ত্রাহি মধুসূদন, ত্রাহি মধুসূদন”….. করি। ভুলে যাই, Success is definitely not the ”be all and end all” of our life.
সফলতা বা পার্থিব কামনার পূর্তি’র ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকলে তবেই মানসিক শান্তি আসে। আর এই দৈহিক সুখ ও মানসিক শান্তির সফল-সংমিশ্রণ ই পরিপূর্ণতা। Pleasure + Peace Fulfillment.
তাহলে একটা জিনিস আমরা দেখলাম, মনের শান্তি’র ওপর দৈহিক সুখ নির্ভর করলেও সুখের ওপর শান্তি একদমই নির্ভরশীল নয়। তাইই যদি হতো তবে, অর্থ-যশ -প্রতিপত্তি, যৌনতা এবং জনপ্রিয়তা র শিখরে উঠেও হলিউড-নায়িকা, মেরিলিন ম্যানরোওকে মাত্রা-ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেয়ে, মাত্র ৩৩ বছর বয়সে, প্রাণ টাকেই সঁপতে হতো না।😔 বিশ্বের ছাব্বিশটি ভাষাতে অনুবাদ হওয়া Life-style Management এর সেই প্রবাদ-প্রতিম লেখক, Dale Carnegie কে আত্মহত্যা করতে হোত না। মুড়ি-মুড়কি’র মতো আজও Anti-depressant pill খেয়ে ঘুমাতে হোত না আমেরিকান সাহেব-সুবোদের। ছোট্ট-বেলায়…খড়-পেতে… মাটিতে বসে দেখা, সেই যাত্রা পালা আজও মনে পড়ে…….
” দিকে-দিকে সাড়া জাগানো এ বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ যাত্রা-পালাগান বেলা দাশগুপ্ত অভিনীত…
“শান্তি তুমি…ই…কোথা…য় “।
সেদিন কিছুই বুঝি নি। শুধু
“একটি পাঁচ, দু’টি দশ… যত চুষবে ততো রস ” শুনে বায়না করতে করতে, শেষ-মেস বাবা’র কোলেই মাথা গুঁজে রাত কাটিয়েছি। কীসের আবার যাত্রা-পালা ?
এখন বেশ বুঝতে পারি শান্তির একটাই ঠিকানা…. আর সেটা কেবল মন…….. মন।
প্রশ্ন উঠবে, কোন্ অবস্থায় মন
তার শান্তির ঠিকানা খুঁজে পাবে ?
আসুন, একটা উর্দু শায়রী’র সাহায্যে বোঝার চেষ্টা করি।
” কাগজ কো ফুলোঁ মে যো
খুশবু ঢুঁড় লেতে হ্যাঁয়…
যো ছোটে ছোটে চিজোঁ মে
বড়া সুখ পাতে হ্যাঁয়…..
যো আপনে পরিবার মে
ফরিস্তে ঢুঁড় লেতে হ্যাঁয়….
ওহি লোক জিন্দেগী জিৎ লেতে হ্যাঁয়। “
কাগজের তৈরি ফুলেও যেদিন আমরা সুগন্ধ খুঁজে পাবো, ছোট ছোট ঘটনার মধ্যেও বড়ো আনন্দের হদিশ মিলবে, ভাই-বোন দাদা-কাকা-মামা সহ পরিবার ও পরিজনদের মাঝে থাকতেই সুখের অনুভূতি জাগবে সেদিন প্রকৃত শান্তি পাওয়া সম্ভব।
সর্বশক্তিমানের কাছে, আসুন, প্রার্থনা করি…..
” দিয়া হ্যায় দরদ্ তো
রঙ্গে কবুল দে অ্যয়সা
যো ওষ্ঠআঁগকে টপকে
ও দস্তা মহাকাব্য হো যায়ে।”
“দুঃখ যদি দাও হে প্রভু
শক্তি দাও সহিবারে ।”
যেদিন আমাদের মনে সেই “রঙ্গে-কবুল”… অর্থাৎ Creative-acceptance আসবে ঠিক সেদিনই জীবনের নাম হয়ে যাবে…. কবিতা ( “মহাকাব্য হো য়ে…….”)।
ঠিক সেই দিন থেকে আমরা বুঝতে পারেবো, কেমন করে
“প্যায়ার কা জশবা নয়া রঙ্
দিখা দিতা হ্যায়।” …. জীবনের রং টা ঠিক কেমন।
তাহলে, আমাদের করনীয় কী?”শির ঝুঁকানে মে
নমাজে আদানি নেহি হোতি।
দিল্ ঝুঁকানে পড়তা হ্যায়….
ইবাদত্ কে লিয়ে।”
লোক-দেখানো ভক্ত সেজে, গুরু-গোবিন্দের পায়ে মাথা ঠুকলে শান্তি মিলে না। অহঙ্কার-শূণ্য হৃদয়কে ঝুঁকাতে পারলেই শান্তি আসে মনে।
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.