ভারতীয় সনাতনত্বের অন্যতম স্তম্ভের নাম শ্রীমৎ ভগবৎ গীতা

0
1049
Krishna teaching Arjuna, from Bhagavata Gita, House decoration in Bishnupur, West Bengal, India. Image by Wikipedia
Krishna teaching Arjuna, from Bhagavata Gita, House decoration in Bishnupur, West Bengal, India. Image by Wikipedia
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:9 Minute, 7 Second

জানামি ধর্মং ন চ মে প্রবৃত্তি…. কেন ?
ভারতীয় সনাতনত্বের অন্যতম স্তম্ভের নাম শ্রীমৎ ভগবৎ গীতা। সাকুল্যে সাত শত শ্লোক দিয়ে গাঁথা, ভারতবাসীর কাছে, এ এক অমূল্য সম্পদ।
মূলতঃ শ্রীকৃষ্ণ-অর্জুনের বাক্য-বিনিময়ই আমাদের জড়-জাগতিক ও পারমার্থিক …..

এই উভয়ের প্রাপ্তি। জীবন-দর্শনে ঋদ্ধ লেখক, ধৃতরাষ্ট্রের মুখে দিয়েছেন ১ টি শ্লোক, সঞ্জয়ের মুখে ৪০টি, অর্জুনের জন্য রেখেছেন ৮৫ টি আর বাদবাকি, ৫৭৪ টি তুলে দিয়েছেন শ্রীকৃষ্ণের শ্রীমুখে।

প্রশ্ন জাগে, ভগবান এতোগুলো শ্লোক শুধুই অর্জুন কে না শুনিয়ে তো দুর্যোধন কেও শুনাতে পারতেন! তাতে কী, ১৮ দিনের এই দীর্ঘ যুদ্ধ ঠেকানো যেত না?বাস্তবে, শ্রীকৃষ্ণ গেছিলেন ও। দুর্যোধনের মুখে…….”জ্ঞান মত দো না”……… শুনে, একটি মুচকি হাসি দিয়েই ফিরে এসেছিলেন। কী বলেছিলেন তিনি সেদিন ?
পান্ডব গীতা জানাচ্ছে, দুর্যোধন বলেছিলেনঃ
” জানামি ধর্মং ন চ মে প্রবৃত্তি,
জানাম্যধর্ম ন চ মে নিবৃত্তি….”।

আমি জানি, ধর্ম কাকে বলে…. কিন্তু এর প্রতি আমার কোনো আকর্ষণ তৈরি হচ্ছে না। অধর্ম কী…. এও আমি জানি, আর এর প্রতি আমার কোনো অনিহা তৈরি হচ্ছে না। তো, আমার কী করার আছে ?

এবার, অর্জুনের মুখেও এই একই মার্মিক প্রশ্নের সম্মুখীন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। অর্জুন প্রশ্ন করলেনঃ
“কথং ন জ্ঞেয়মস্মাভিঃ পাপাৎ অস্মান্নিবর্তিতুম্।
কুলক্ষয়কৃতং দোষং প্রপশ্যদ্ভিঃ জনার্দন।।” (??)

কুলের ক্ষয় সৃষ্টিকারী দোষের কথা জেনেও মানুষ পাপ কাজ থেকে দূরে সরে থাকতে পারে না কেন ? এক মুহুর্ত দেরি না করেই শ্রী ভগবানের সোজা সাপটা উত্তরঃ
” ইন্দ্রিয়স্য ইন্দ্রিয়স্য অর্থে রাগদ্বেষৌ ব্যাবস্থিতৌ।
তয়োর্ন বশমাগচ্ছেৎ তৌ হ্যস্য পরিপন্থিনৌ।।”

আসলে, আমাদের সদা-চঞ্চল এই পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের প্রত্যেকটির ভোগ্যবস্তু নির্দিষ্ট করা আছে। কান এর রাগ (অনুরাগ) নজরুল গীতি’র প্রতি, দ্বেষ (বিতৃষ্ণা) পপ- সংগীত এর ওপর। চোখের তৃষ্ণা সবুজ পাহাড়ে,বিতৃষ্ণা শুষ্ক বালুতটে। নাক এর রাগ শরতের শিউলীতে, বিতৃষ্ণা বকুল এর গন্ধে….. এইভাবে জনে-জনে প্রতি ইন্দ্রিয়ের রাগ ও দ্বেষ আলাদা। আমাদের সকল ইন্দ্রিয় সারাটি সময় তাদের এইসব ভোগ্যের বিচার করতেই ব্যস্ত থাকে। আর এদের জন্যই মানুষ জেনেশুনে ও দোষ করে। যদিও আদর্শের পরিপন্থী এই সবের বশে মনকে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই,খুব স্বাভাবিক ভাবেই, দুঃখ করে শ্রীকৃষ্ণ আবারও জানাচ্ছেন….
” সদৃশং চেষ্টতে স্বস্যাঃ প্রকৃতেঃ জ্ঞানবান্ অপি।
প্রকৃতিং যান্তি ভূতানি নিগ্রহঃ কিং করিষ্যতি।।”
মানুষ ঠিক-ভুল যা করুক সে করে তার প্রকৃতি বা সংস্কার অনুযায়ী। প্রতিটি মানুষের অবচেতন মনে (Sub-conscious mind) জমে থাকে তার অনন্ত চাওয়া-পাওয়া, উচিৎ-অনুচিৎ, ভালো-মন্দ, রাগ-দ্বেষ এর দীর্ঘ তালিকাই গড়ে তোলে সংস্কার।

এর ওপরে থাকে চেতন মন (Conscious mind)। এখানে থাকে ‘বৃত্তি’…… যে জীবকে ভাবায়, বলায় এবং পরিশেষে ভাবনাকে কর্মে রূপান্তরিত করে। তাই, ‘নিগ্রহ’ নামক বস্তুটি কী আর বিশেষ করবে?
মহামুনি পতঞ্জলি তার যোগ-দর্শনে লিখছেন,
” এবং বৃত্তি সংস্কার চক্রম্ আবর্তমানম্ “….

অর্থাৎ যা’র যেমন জন্মগত বা অর্জিত সংস্কার তার বৃত্তিও তদনুসারী। পাশাপাশি, চেতন মনে যার যেমন বৃত্তি থাকে তার সংস্কার ও তেমনই হয়। আবহমান কাল থেকে এই চক্র (vicious cycle) ঘুরে চলেছে। প্রকৃতির দ্বারা তাড়িত হয় বৃত্তি; আবার বৃত্তি দ্বারা উদ্দীপিত হয় প্রকৃতি।

ঠিক এই কারণেই হয়তো বা কঠোপনিষদ এর ঋষির সেই ‘শ্রেয়-প্রেয়’ এর তত্ব। ভুলে যাওয়া, বোধ হয় ঠিক হবে না, ‘Desire’ does not mean to select but to cut-off……”নেতি-নেতি” বা “ইন্দ্রিয়-নিগ্রহ”। আসলে, যা একটু আগেই আমাদের আলোচনার মাঝে এসেছিল…. মনের সেই চেতন স্থিতি ও অবচেতন স্থিতির সংযোগ স্থলে, এরই অধীনে, ওজন লেয়ার এর মতো অতি পাতলা একটি স্তর রয়েছে। সেই স্তরটি ই “নেতি-নেতি” র স্থান।

এটি যেন সজীব কোষে থাকা এক Semi-permissible membrane ……সব আকাঙ্খাকে আটকায় না, আবার সব কামনাকে বৃত্তিস্তরে পৌঁছাতে ও দেয় না।বাস্তবে দেখা গেছে, কামনার পরিপূরণে যিনি যত বেশি ধৈর্যশীল….. তিনি ততো উঁচু স্থিতিতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

১৯৬০ এর কাছাকাছি কোনো এক সময়ে, বিশ্ববিখ্যাত মনস্তত্ববিদ, ড. ওয়ালটার মিশন একটি Kinder- garden স্কুলে কতগুলি ৪ বছরের শিশুদের নিয়ে একটি পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি আলাদাভাবে এক একজন করে শিশুকে ডেকে তার হাতে একটি করে মিষ্টি ধরিয়ে বলেন, “এখন আমি এটা তোমাকে দিলাম। বাইরে, একটু কাজে বেরোচ্ছি। ফিরে এসে যদি দেখি, তুমি এই মিষ্টিটি না খেয়ে হাতে ধরে রেখেছ, তাহলে আরও একটি পাবে।” ৪০ টি বাচ্চাকে এইভাবে আলাদা আলাদা ডেকে একই কথা বলেন। ১৪ বছর পরে স্কুলের Record-Book থেকে নাম সংগ্রহ করে জানা গেল যেই ১৩ টি বাচ্চা মিষ্টি না খেয়ে সেদিন হাতে ধরে রেখেছিল আজ তারা বহু গুনে বেশি প্রতিষ্ঠিত, বেশি অলঙ্কৃত।

তাই প্রবৃত্তি-মার্গ অপেক্ষা “নেতি-নেতি” মানে সেই নিবৃত্ত-মার্গ ই বেশি মূল্যবান, বেশি প্রয়োজনীয়।

এই সত্যের উপলব্ধি টাই জৈনধর্মের ‘বিবেক’ আর’ বুদ্ধের ‘বোধিলাভ’।

কিন্তু, যে সমস্ত মানুষ জনের এইটুকুও বুঝার ক্ষমতা নেই তারাই বা কী করবেন ? তাঁদের ঔষধি দিচ্ছেন অষ্টাবক্র-মুনিঃ
” ময়ি অনন্ত মহাম্বুধৌ বিশ্ববিচি স্বভাবতঃ
উদেতু বস্তু মায়াতু নমেবৃদ্ধি নমেক্ষতি।।”

আমাদের মধ্যে অন্ততঃ এই ভাবনা টা আসুক যে আমার হৃদয় একটা অর্ণব (মহা-সাগর)। এতে লক্ষ কোটি ঢেউ প্রতি মুহুর্তে উঠবেই উঠবে। ঢেউ এর এই ওঠা-পড়ার সাথে আপনার-আমার বা মহা-সাগরের কোন্ সম্পর্ক? আমরা যে হিরণ্যগর্ভ (বিশ্ববিচি) এর ই এক রূপ। তাই ” ন মে বৃদ্ধি, ন মে ক্ষতি “….কিসের লাভ- অলাভ, কিসের ভালো-মন্দ, কিসের শত্রু… কে কার মিত্র? কোথায় পাপ…. কিসের পুন্য! কেন মান, কোথায় অপমান? ব্যাস এটুকু বুঝলেই সব দ্বন্দ্ব
নির্দ্বন্দ্ব হয়ে যায়। আমাদের একবার দুর্যোধন এর পোশাক পরতে হয় না, পরক্ষনে আবার গ্রিন-রুমে গিয়ে পোশাক বদলে অর্জুন ও হতে হয় না!

Raghupati Sharangi
Raghupati Sharangi

Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD