গল্প হলেও সত্যি …
ড.বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
কলকাতা, ২৪ জুন ২০২১
দেশ বদলাচ্ছে, পরিস্থিতি আর সময়ও। অর্থনীতি আর সমাজের চাকাটা যে গতিতে ঘুরছিল বর্তমান করোনা পরিস্থিতি তার গতি তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামী কয়েক বছরে জীবিকা উপার্জনের বেশকিছু মাধ্যম যেমন অবলুপ্ত হবে, তেমনি তৈরি হবে নতুন নতুন কিছু সুযোগের। দেশের যুব সমাজকে বুঝতে হবে তারা কিছু আগডুম বাগডুম ইউটিউবার বা ফেসবুকার কে নিয়ে সময় নষ্ট করবে, নাকি নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুনভাবে বাঁচার রাস্তা খুঁজবে।
সরকারি চাকরির ভাবনা মাথা থেকে মুছে ফেলে, নিজেকে স্বাবলম্বী আর সরকার তথা দেশের সহযোগী করে তোলার ভাবনা যত তাড়াতাড়ি ভাবতে পারবে, ততই মঙ্গল। পাশাপাশি সরকারকেও ভাবতে হবে, কিভাবে, এই বৃহত্তর মানবসম্পদকে, তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একটা বৃহত্তর মানব সংগঠন বা মানব শৃংখল তৈরি করা যেতে পারে। তার জন্য প্রয়োজনে বদলাতে হবে সরকারি নীতি, পরিকল্পনা এবং তার প্রায়োগিক কৌশল। শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থে এই বৃহত্তর জনসম্পদ এর ব্যবহার করে গেলে, তা আখেরে দেশের তথা সরকারের পক্ষেই হানিকারক হয়ে দাঁড়াবে । আর এই কথা বুঝেও না বুঝে থাকার ভান করে গেলে আখেরে বিপদ সকলেরই।
একটি পরিবারের সবাই যদি তার পিতার মাসিক মাইনে এবং পরবর্তী পেনশনের ওপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকে তবে সেই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যেমন আর্থিক এবং মানসিক টানাপোড়েন তৈরি হয়, এই রাজ্য বা দেশটাও ঠিক তাই। বরং পরিবারের সকল সদস্য যদি আয়ের রাস্তা তৈরি করতে পারে, তবে সেই পরিবারের সকলেই স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে এবং সেই পরিবারের সকল সদস্যের সকল আবদারই হয়তো খানিকটা হলেও মেটানো যেতে পারে। ঠিক তেমনি ভাবে সেই পিতারও কর্তব্য তাদের সন্তানকে কারো মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে স্বাধীনভাবে ভাবতে উৎসাহ দেওয়া এবং তাকে নিজের পেটের ভাতটা জোগাড় করার মত স্বাবলম্বী করে তোলা। কিন্ত শুধুই সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা কিংবা সরকার কর্তৃক তাদেরকে মুখাপেক্ষী করে রাখা – এই দুটো মানসিকতা যে কোন দেশকে মুহূর্তে ভেনেজুয়েলা করে দিতে পারে এবং তা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
তাই এখনো সময় আছে ঘুরে দাঁড়ানোর, আর সমাজকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর। জানি শীতের কম্বল ছেড়ে ওঠা খুব কষ্টকর , তবু কম্বল সরিয়ে উঠতেই হবে। না হলে কথায় আছে না “যে শুয়ে থাকে, তার ভাগ্যও শুয়ে থাকে”। কথা হচ্ছে আমরা কোনটা চাই , সেটা আমাদেরকেই ভাবতে হবে। কারণ বিশ্বাস করুন আমাদের হয়ে ভাবার বা বলার সত্যিই কেউ নেই।