অনেকদিন ধরে বুদ্ধিজীবী হবো আশা ছিলো, আজ আমার নীরবতা আমাকে বুদ্ধিজীবী করেছে।
ছোটবেলায় বাবা বলতেন মানুষের মতো মানুষ হবি, বিপদে মানুষের পাশে থাকবি, নিজে সারা জীবন আত্মীয়, বন্ধু ও দুস্থের সেবা করে, যাওয়ার বেলায় সম্পদ নিঃস্ব হয়ে গেলেন , কিন্তু মানুষ হিসাবে বোধহয় ওপরের খাতায় ফুলমার্কস নিয়ে গেলেন । তিনি কিন্তু কোনো বুদ্ধিজীবী ছিলেন না ।
নির্বোধ বলে সংসারে আমার সুনাম সবাই করে, তাই বুদ্ধিজীবী হওয়ার খুব লোভ । দেশ বিদেশে কিছুদিন লেখাপড়া কাজ করলাম, ভাবলাম এইবার নিশ্চিত বুদ্ধিজীবী হলাম, কিন্তু রঙিন হতে পারলাম না তাই কলমজীবী থেকে গেলাম বুদ্ধি আর হলোনা ।
একটু পিছনে যাই সাল টা ১৯১৩ এক দাড়িওয়ালা বুড়ো একটু আধটু কবিতা গল্প লিখতো, সুইডিশ কর্তারা একটা কি যেন চাকতি দিলো, বাস সারা বিশ্ব পাগল হয়ে তাঁর পিছনে দৌড়োলো। কোথায় তাই নিয়ে খুশি থাকবেন,তা না করে, জালিওলানাবাগে সামান্য ঘটনা দেখে Sir থেকে আবার Sri হয়ে গেলেন। যেন এতদিন Sri বানান ভুল করে Sir লেখা হচ্ছিলো এবং তাতে শ্রীহীন হয়েছিলেন ।
সেই শুরু কবিতা,গল্প , ছবি আঁকার দল হয়ে গেলো রবিজিবী পরে বুদ্ধিজীবী । একটু ভাব নিয়ে চলুন, প্রশ্ন করলে এমন সব আন্তর্জাতিক মানুষের রেফারেন্স দিন, যা সাধারণ অসাধারণ কেউই প্রায়ই বুঝবে না । সন্ধ্যায় একটু বিলেতি বা আরো উচ্চ মার্গীয় হলে বাংলা যোগে আড্ডা দিন । সপ্তাহে কয়েক দিন ফিতে কেটে ফেলুন, বা টিভিতে প্রভুদের হয়ে ত্বাত্তিক খিচুড়ি রাঁধুন । অনুপ্রেণায় থাকলে বুদ্ধিজীবী বলে অ্যাওয়ার্ড পাবেন সাথে কিছু পদ পরে বিরাগ হলে পদাঘাত ।
আর কে পায় রবি দাদু সম্মান পাক না পাক, আপনার দাড়ি যেন সম্মান পায় । বিদ্যাসাগরের বিদ্যা থাকে আর না থাকে চটি কিন্তু সম্মান পেতেই হবে ।
সুতরাং বাঙালি জাতি যে এই যাতনায় পরবে তা রবি ঠাকুর বুঝেছিলেন আর লিখলেন “ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু”, “এই দীনতা ক্ষমা করো প্রভু” । শতবর্ষ এগিয়ে ভাবতে পারতেন তাই তিনি প্রকৃত বিদ্যান, তাঁর কবিতায় কন্ডোম পরাতে হয়না, প্রতিবাদ করতে প্রতিপক্ষ হিসাবে রানীকে বা রাজাকে বেছে নিতে পারেন। ধর্মকে মিলাতে পারেন রাখী বন্ধনে। বুদ্ধিকে চালাকী দ্বারা চালিত করেননি, তাই ২৫শে বৈশাখ বাঙালীর প্রকৃত বুদ্ধিজীবী দিবস ।
বাংলা যখন জ্বলছে তখন পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকতে রবি ঠাকুর কি চপ খেয়ে চুপ থাকতেন? রং দেখে ঢং করে বুদ্ধিজীবী হতে পারবেন, কিন্তু মৃত্যুর পর একবছর ও লাগবে না জনতার আপনাকে ডাস্টবিনে ছুড়ে দিতে,অনেকে বেঁচে থাকতেই আঁস্তাকুড়ে যতই কণ্ঠ ছাড়ুন জোরে ।
আসলে বুদ্ধিজীবী মানে এখন মধ্যমেধার আঁতেল, তেল দিয়ে না চললে তাদের চলবে না । পেটের দায় বড় দায় । তাই বাংলা জ্বলে তো জ্বলুক আমি নীরব থাকি, তবেই তো বুদ্ধিজীবী ।
কে যেন বলেছিলো “Speech is Silver but Silence is Golden” তাই বুঝি আমিও নীরব তাই বুঝি আজ আমিও বুদ্ধিজীবী !