তুম্ হি রাম
ড.রঘুপতি ষড়ংগী
” তোমায় হৃদ-মাঝারে রাখবো…. ছেড়ে দেবো না।
ছেড়ে দিলে সোনার গৌর……. আর তো পাবো না
না…. না…. ছেড়ে দেবো না।”
আজকের দিনে বাঙলার অন্যতম জনপ্রিয় বাউল গানগুলির মধ্যে এটি অবশ্যই একটি। গানটির লেখক কে….…সঠিক আমার জানা নেই কিন্তু গানটিকে সপ্রতিভ আঙ্গিকে প্রচারের আলোতে আনতে যিনি সবচেয়ে বেশি উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেই প্রবাদপ্রতিম লোকশিল্পী কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্য আজ লোক চক্ষুর অন্তরালে অমৃতলোকে ঠাঁই নিলেও.. সৃষ্টি তাঁর আজও জ্বলজ্বল করছে।
“সোনার-গৌর” তো এক প্রতিক মাত্র। তাঁকে ছেড়ে দিলে আর কখনো ফিরে আসবেন কি না সেটা সঠিক তিনিই বলতে পারেন। কিন্তু এটা সত্য, জীবনে এমন কিছু জিনিস থাকে, যা কোনো কিছুর বিনিময়ে ই ত্যাগ করা যায় না, করা উচিৎ ও নয়।
বৃহতি স্বরে ঋষি মেধাতিথিও দেবরাজ ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে এমনই এক মর্মস্পর্শী প্রার্থনা করছেন।
“মহে চন ত্বাম্ অদ্রিবঃ পরা শুল্কায় দেয়াম্।
ন সহস্রায় নাযুতায় বজ্রিবো ন শতায় শতামঘ।”
১ম সুক্ত, 8ম মন্ডল ঋক্ বেদ
‘
অদ্রিব’ মানে হে আদরণীয়, ‘মহে শুল্কায়’ মানে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে, ‘সহস্রায়’..… আমোদ- প্রমোদময় জীবনের জন্য, ‘অযুতায়’…. পরিবারের সাথে সদা সম্পৃক্ত থাকতে চেয়েও, ‘শতামঘ’… অনন্ত ঐশ্বর্যময়,’ন শতায়’…. শতবর্ষব্যাপী বাঁচতে চেয়েও নয়।
হে দেবরাজ-ইন্দ্র! যথেচ্ছ ধনের প্রাপ্তি-বিলাস- ভরপুর পরিবার পরিজন, এমন কি, দীর্ঘ্য জীবনের বিনিময়েও আমি আপনাকে ছাড়তে পারবো না।
ঠিকই তো। সত্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা সম্ভব হোলেও…… কোনো কিছুর জন্যই সত্য কে যে ত্যাগ করা যায় না।
সভ্য ও সুশিক্ষিত একজন মানুষ কোনোকিছু ত্যাগ করেন কখন, বলুন তো? হয় তিনি এটা উপলব্ধি করেছেন যে এই জিনিসটি মূল্যহীন অথবা আরও অধিক মূল্যবান কিছুর স্বাদ পেয়েছেন। কিন্তু আসলেই যা আমাদের একমাত্র সহায়-সুহৃদ-সম্পদ এবং সম্বল…… তা’কে ছেড়ে আপনি যাবেন কোথায়? চাইবেন বা কী?
ছেড়েই বা আপনি নতুন পাবেন টা কী?
উনি ছাড়া আর অন্য কোনো তত্ব নেই…ই তো।
উনি ই “Omnipotent, Omniscient and Omnipresent.”
উনিই ” একমেবাদ্বিতীয়ম্ “। সর্বম্ খলু ইদম্ রহ্ম… “তত্বমসি”.. পরিণামে ” অহং ব্রহ্মাস্মি ” আর এটাই আচার্য শংকর এর “অদ্বৈতসর্বভাবানাম্”। তাই ধরবে কে আর ছাড়বে কে? ধরবেন ই বা কী আর ছাড়বেন ই বা কী ! ঘুরেফিরে আপনিই যা আপনার চারিদিকে যা যা রয়েছে সে সবই তো আপনি ই……. সেই পঞ্চ তন্মাত্রা’র খেলা!
এই বোধ যেদিন আসবে, ঠিক সেদিন এটা মনে হোতে বাধ্যঃ
” বিশ্বম্ দর্পণ দৃশ্যমান নগরীতুল্যম্ নিজান্তর্গতম্
পশ্যন্ আত্মনা মায়য়া বহিরিব উদ্ভুতম্ যথা নিদ্রয়া
এ সাক্ষাৎ কুরুতে প্রবোধ সময়ে
স আত্মানম্ একাত্ময়ম্”।
—– দক্ষিণামূর্তি স্তোত্রম্।
উপনিষদ এর কথায়, সেদিনই হবে আমাদের “আত্যন্তিক দুঃখ নিবৃত্তি… সাথে,” পরমানন্দ প্রাপ্তি” ধরা-ছাড়ার বালাই থাকবে না আপনার সেদিন।
” তুম্ জানো ইয়া না জানো
তুম্ মানো ইয়া না মানো
তুম্ হি রাম।”
Dr. Raghupati Sharangi, a renowned homeopath and humanitarian who lives for the people’s cause. He is also a member of the Editor panel of IBG NEWS. His multi-sector study and knowledge have shown lights on many fronts.