৫০০ কোটি পিকেকে না দিয়ে রাজ্যের ৫০ হাজার বেরোজগারের মধ্যে বন্টন করলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত হতনা
এম রাজশেখর (৫ নভেম্বর ‘২০):- প্রশান্ত কিশোরকে ৫০০ কোটি টাকা না দিয়ে রাজ্যের ৫০ হাজার বেকার যুবক যুবতীদের হাতে ১ লাখ টাকা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বন্টন করলে তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমোকে আজ পায়ে ফোস্কা ফেলে চারদিকে উদ্ভ্রান্তের মতো হেঁটে বেড়াতে হতনা।
অনেকেই জানতে চাইতে পারেন, হঠাৎ এই কথা বলার মানে ?
উত্তরটা এরকম যে, যবে থেকে মুখ্যমন্ত্রী গদিতে বসেছেন তবে থেকে রাজ্যের কল্যাণের চিন্তাই তিনি করে চলেছেন।
নিজে শুকনো মুড়ি আর চপ খেয়ে আটপৌড়ে শাড়ি পড়ে মহাত্মা গান্ধীর অনুগামিনী রূপে সারা বাংলা হেঁটে বেড়ালেও রাজ্যের উঠতি কিশোর কিশোরীদের হাতে তিনি সাইকেল তুলে দিয়েছেন।
পড়ালেখা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিদ্যালয় জীবনের শেষেই কিশোর কিশোরীদের হাতে টাকা বা ল্যাপটপ তুলে দেবার ব্যবস্থা করেছেন।
নিজে অবিবাহিতা থেকে আইবুড়ো বয়সে যৌবনের জ্বালা বুঝেছিলেন বলেই হতদরিদ্র ঘরের অবিবাহিতা যুবতীদের বিবাহের জন্য ২৫ হাজার টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
মদ খেয়ে মরলে টাকার ব্যবস্থা করেছেন, ধর্ষিতাদের বয়স অনুসারে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন…এমনকি মারা গেলেও অন্তিম সংস্কারের টাকা দিচ্ছেন।
মোটামুটি এইসব পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি করেই এতদিন ভোট বৈতরণী নির্বিঘ্নে পেরিয়ে এসেছেন।
গোল বেঁধেছে গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গবাসী জানতে পারেন, মুখ্যমন্ত্রী ভোটের জন্য তাঁদের উপর ভরসা না করে কোথাকার এক প্রশান্ত কিশোর-কে নাকি বেশি ভরসা করেন। প্রশান্ত কিশোর বা সংক্ষেপে পি কে-র নাকি এত ক্ষমতা যে তিনি নাকি স্রেফ চাতুরি দেখিয়েই জনগণের ভোট তুলে নেবেন।
বিরক্ত, লজ্জিত, হতভম্ব আমজনতা সেইদিন প্রথম বুঝেছিলেন মমতার নিজের উপর আস্থা ফুরিয়েছে, তাই ভোট কিনতে পেশাদার নিয়োগ করেছেন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সেই গুঞ্জন লোকসভা নির্বাচনের সময় পল্লবায়িত হয়ে চারদিকে এমন ছড়িয়েছিল যে শুধুমাত্র তার ছাঁওয়াতেই অনেক জায়গায় ঘাসফুল ফুটতেই পারেনি।
একটা সহজ অঙ্ক একটু বুঝে নেওয়া যাক, অভিষেক ব্যানার্জীর মধ্যস্থতায় মমতা ব্যানার্জী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থাকে যে ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছেন বলে আকাশে বাতাসে শোনা যায়, সেই টাকাটাই যদি জনপ্রতি ১ লাখ টাকা করে বেশকিছু শিক্ষিত বা প্রশিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের হাতে তুলে দিতেন তাহলে কমকরে ৫০,০০০ জন প্রত্যক্ষ ভাবে উপকৃত হতেন। উপকৃত পরিবার পিছু ৪ জন মতদাতা বা নির্বাচক বা ভোটার থাকলে ২ লাখ ভোট বিনা আয়াসেই তৃণমূলের ঝুলিতে আসত।
অথচ কোনো বিরোধী রাজনৈতিক শিবির কোনোরকম ট্যাঁ ফোঁ করতে পারতনা। কারণ কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম নিলে কোনো সরকারের নামেই বদনাম করা যায় না।
৫০ হাজার ব্যক্তি একঝটকায় স্বাবলম্বী হতে পারলে একদিকে যেমন রাজ্যের কল্যাণ হত, তেমনই আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি হত।
অর্থ যেহেতু একহাত থেকে অন্য হাতে ঘোরে, তাই এর প্রভাব অতিদ্রুত সমাজেও এসে পৌঁছত। চারদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের জয় জয়কার হত।
মমতার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সমাজ উপকৃত হলে, মমতাকে ভোট ভিক্ষা করতে হতনা, না চাইলেও তৃণমূল কংগ্রেস-ই রাজ্যের অধিকাংশ ভোট পেত। কারণ মানুষ বাক সর্বস্ব, দেখনদারী নেতানেত্রী অপেক্ষা আদর্শ কল্যাণকর সরকারকেই বেশি পছন্দ করেন।