দুর্গাপুজো মণ্ডপে ঢোকা কার্যত অসম্ভব করে দিল কোলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়
এম রাজশেখর (১৯ অক্টোবর ‘২০):- এতদিন ভারতীয় জনতা পার্টি-র পশ্চিমবঙ্গ শাখা গলার শিরা ফুলিয়ে বলে বেড়াতো, ‘পশ্চিমবঙ্গে পুজো করতে গেলেও আদালতের স্মরণাপন্ন হতে হয়।’
কালের বিচিত্র পরিহাসে কোরোনা আবহে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবছর দুর্গাপুজো করার ছাড়পত্র দিলেও কোলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয় এমন রায় দিলো যে, এই বছর সপরিবারে মণ্ডপ মুখো হওয়াটাও নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক হবে।
যদিও ‘কোলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়’-এর সময়োপযোগী এই রায় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি-র পালে হাওয়া দেবে বলেই তথ্যাভিজ্ঞ মহলের বিশ্বাস।
এই কথাটা শুনে যাঁরা বিষম খেলেন তাঁদের অবগতির জন্য জানাই….মামলাকারীর হয়ে এই মামলায় লড়ছিলেন বিজেপির চোখে অতিবিশিষ্ট গোভক্ষণকারী রূপে পরিচিত বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
আজ এক বিরল রায় বেরনোর পর নিজের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিকাশবাবু বলেছেন, “আমরা প্রত্যেকটা পুজো মণ্ডপকে ‘কন্টেইনমেন্ট জোন’ ঘোষণা করার অনুরোধ করেছিলাম, ন্যায়াধীশ ‘নো এন্ট্রি জোন’ ঘোষণা করেছেন।”
আজ এক ঐতিহাসিক রায় দিতে গিয়ে ‘কোলকাতা উচ্চ ন্যায়ালয়’-এর ন্যায়াধীশ সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, “কোলকাতায় মোট পুজো হচ্ছে ৩ হাজার, অথচ পুলিশ রয়েছে ৩০ হাজার, রিজার্ভ থেকে পুলিশ নামালে তা ৩২ হাজারের বেশি কিছুতেই হবেনা, এই পুলিশ ব্যক্তিদূরত্ব দেখবে না দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা দেখবে ?”
ন্যায়াধীশ তাঁর রায়ে জানিয়েছেন,
“? রাজ্যে যেখানে যত পুজো হচ্ছে প্রতি মণ্ডপের বাইরে ৫ থেকে ১০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত ব্যারিকেড করে রাখতে হবে।
? ব্যারিকেড করা অংশকে ‘নো এন্ট্রি জোন’ ঘোষণা করতে হবে।
? যাঁরা এই ‘নো এন্ট্রি জোন’-এ ঢুকবেন, ‘নো এন্ট্রি জোন’-এর বাইরে তাঁদের নামের তালিকা টাঙিয়ে রাখতে হবে।
? নির্দিষ্ট নামের তালিকার বাইরে ‘নো এন্ট্রি জোন’-এ কেউ ঢুকতে পারবেনা।
? মণ্ডপের ভেতরে ১৫ থেকে ২৫ জনের বেশি একসাথে ঢোকানো যাবেনা।
? দূরত্ববিধি মানানোর দায়িত্ব পুলিশের সাথে পুজোর আয়োজক বৃন্দকেও নিতে হবে।
?পুজো মিটে গেলে কোলকাতার পুজো মণ্ডপগুলোর বিষয়ে কোলকাতা পুলিশের নগরপাল ও রাজ্য পুলিশের ক্ষেত্রে মহানির্দেশক-কে পৃথক পৃথক হলফনামা জারি করে ন্যায়ালয়কে জানাতে হবে।”
আজকের এই প্রায় ঐতিহাসিক রায় বেরনোর পর কোলকাতা সহ রাজ্যের সব পুজোর আয়োজকবৃন্দই আক্ষরিক অর্থে মুষড়ে পড়েছেন।
আজকের মামলায় সরকারের পক্ষে সওয়াল করেন এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। রায়দানের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শ্রী দত্ত জানিয়েছেন, “আদালতের নির্দেশ অবশ্যপাল্য।”
যদিও কোলকাতা ন্যায়ালয়ের এই রায় বাইরে আসতেই ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে শুরু করে রাজ্যের সর্বত্র।
প্রায় বিরক্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রশ্ন, “শহরে মুসলিমদের উৎসবের সময় কী ন্যায়ালয় জেগে ঘুমচ্ছিল। ন্যায়ালয় নিজেও তো স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তখন মামলা দায়ের করতে পারত, তখন তো কিছুই দেখা যায়নি। যত বিধিনিষেধ কী শুধু হিন্দুদের জন্য !”
“বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি ,না , সময়ের দাবি সেটাই বুঝতে পারছে না বুদ্ধিজীবী থেকে নির্বোধ কেউই ।
তবে জীবন ও বিজ্ঞান স্বাগত জানাচ্ছে।”