আত্মঘাতী জাতি আর তার ধংসলীলার সাধনা
ড:পলাশ বন্দোপাধ্যায় ,কলকাতা,১৪ অক্টোবর ২০২০
“Toute nation a le gouvernement qu’elle mérite.~Joseph de Maistre” অর্থাৎ “Every nation gets the government it deserves.”
এদেশের মানুষের মুখে প্রায়শঃই একটা কথা শোনা যায়,’দেশটা আর মানুষ বসবাসের যোগ্য নেই।দুর্নীতি,বিশৃঙ্খলা আর বে-আইনি অসামাজিক কাজকর্মে সমাজ ভরে গেছে’।তারপরে সব দোষ,ক্ষোভ,রাজনৈতিক নেতা নেতৃত্বের উপর গিয়ে পড়ে। মানুষ ভুল বলেন না।যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে এসব বলার।কিন্তু আরো একটা বিষয় তাঁরা মাথায় রাখেন না বা এড়িয়ে যান।তা হলো, গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর একটা দেশ ততখানিই ভালো যতখানি ভালো তার সাধারণ নাগরিক কুল। তার কারণ একটি গণতান্ত্রিক দেশের মেরুদন্ড এবং চালিকাশক্তি, দুই ই হলো তার সাধারণ নাগরিক।তাঁরাই যদি বিশৃঙ্খল ,দুর্নীতিগ্রস্ত এবং আইন ভঙ্গকারী অসচেতন হন, তাহলে তাঁদের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রশ্রয় পেয়ে মাথায় উঠবেন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হবেন এতে আর দোষের কি?
তলিয়ে দেখুন তো আমাদের গড়পড়তা মানসিকতা কি? আমরা কর ফাঁকি দি।আমার পিছনের দরজা দিয়ে কিছু পেতে ঘুষের সাহায্য নি।আমরা আইন ভাঙি।আমরা অকারণে ভি এই পি কোটা খুঁজি।
আমরা প্রভাবশালী হওয়ার চেষ্টা করি।অকারণে।অকারণে গাড়ি চড়ি।গাড়িতে হুটার লাগাই।রাস্তা ঘাটে হর্ন দি।রাস্তায় বাড়ির ময়লা ফেলি।যেখানে সেখানে শিল্প বানাই।গাছ লাগাই না।গাছ কাটি।এসব বলে শেষ করা যাবে না। তা, এসব করলে দেশটা সুন্দর দুর্নীতিহীন,দূষণহীন নিয়মনিষ্ঠ হয় কি করে?রাজকোষে টাকা আসে কি করে? শাসক সবক শেখে কি করে?ফলে যা হওয়ার তাই হয়।যাদের পরিচালিত হওয়া কাজ ,তারাই মওকা বুঝে পরিচালক হয়ে গদিতে বসে ছড়ি ঘোরায়,আখের গোছায় আর ঘুমায়।
ইউরোপ অব্দি যেতে হবে না। এশিয়া আরব আফ্রিকার অন্য দেশগুলোতে গিয়ে দেখে আসুন সাধারণ মানুষ দেশকে কত ভালোবাসে।তাঁরা অকারণে গাড়ি চড়েন না,সাইকেলের আশ্রয় নেন।গাছ কাটেন না।বাগান করেন।সব্জি ফলান।যত্রতত্র শিল্প গড়েন না।রাস্তাঘাট নোংরা করেন না।কর ফাঁকি দেন না।ঘুষ লেনদেন করেন না।কাজ করেন।আর এসব করেন না বলেই তাঁদের দেশে বেড়াতে গিয়ে আমাদের মনে হয়,আহা! আমাদের দেশটাও যদি তাঁদের দেশের মতো হতো!
আসলে, কিছু না।ভাবনার ভুল।ভাবতে হতো, আহা! আমরাও যদি তাঁদের মতো হতাম!
●●●●●●●●●●●●●
পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়
১৪.১০.২০২০