পাঁচদিন না হলে নিউ-ব্যারাকপুরবাসীরা কেউই কোভিড পরীক্ষার ফলাফল হাতে পাচ্ছেন না
হীরক মুখোপাধ্যায় (৬ অক্টোবর ‘২০):-পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যে কেন্দ্র থেকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে দলীয় মহলে স্থির আছে, সেই কেন্দ্রের অধীন নিউ ব্যারাকপুর পৌরসভা-র কোনো কোরোনা সন্দেহভাজন (সাসপেক্ট) রোগীই
পাঁচদিন না হলে কোভিড পরীক্ষার ফলাফল হাতে পাচ্ছেননা।
সরকারীভাবে বলা হয়েছে, রোগ সংক্রমণ হওয়ার পর রোগ লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পেতে অনেক সময় দুই সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
কিন্তু রোগ লক্ষণ শরীরে প্রকাশ পেলেই অতিদ্রুত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিসরে চিকিৎসা নেওয়াটা বাঞ্ছনীয়।
কিন্তু, সমস্যা হচ্ছে ফলাফল আসতে এত দেরি হওয়ার ফলে অনেক সময় রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। কারণ, হাতে রিপোর্ট না এলে কোথাও সামান্য চিকিৎসাটুকু পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আইসিএমআর-এর মতো বিভিন্ন চিকিৎসা নিয়ামক সংস্থার নির্দেশ মেনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখন প্রতিদিন অনেক বেশি সংখ্যায় ‘কোরোনা ভাইরাস’ সম্পর্কিত রোগ ‘কোভিড ১৯’-এর নির্ণায়ক পরীক্ষা করছে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের হলেও সত্যি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নিউ ব্যারাকপুর পৌরসভা অঞ্চলে সরকারীভাবে কোভিড নির্ণায়ক যে পরীক্ষা হচ্ছে তার ফলাফল হাতে আসতে ৫ দিন লেগে যাচ্ছে।
আর এই ৫ দিনে রোগাক্রান্ত ব্যক্তি নিজে রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত না হওয়ার জন্য যত্রতত্র ঘুরে বেড়াবার ফলে এই অঞ্চল থেকে রোগটা সেভাবে নির্মূল হচ্ছে না।
এই মাসের শুরুর দিন থেকে নিউ ব্যারাকপুর ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের জনৈক বাসিন্দার শরীরে জ্বর আসে। প্রথমদিন আর্ণিকা, রাসটক্স জাতীয় হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে কাজ না হওয়ার ফলে দ্বিতীয়দিন এলোপ্যাথি ওষুধ খেয়ে জ্বর কমানোর চেষ্টা করেন ওই বাসিন্দা। ইতিমধ্যে তিনি বুঝতে পারেন তাঁর জিহ্বার স্বাদগ্রন্থী কাজ করছেনা, সর্দির প্রভাবে নাক বন্ধ থাকায় তিনি গন্ধও সেভাবে পাচ্ছেননা।
এরপরেই ওই বাসিন্দা তড়িঘড়ি এক চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়ে তাঁর নির্দেশ মেনে গত ৩ অক্টোবর ‘কোরোনা ভাইরাস’-এর পরীক্ষা করান।
সংবাদ পরিবেশনের সময় পর্যন্ত তাঁর হাতে কোনো রিপোর্ট এসে পৌঁছয়নি।
যেহেতু তাঁর হাতে এখনো কোনো রিপোর্ট এসে পৌঁছয়নি তাই তিনি নিজেই বুঝতে পারছেননা তিনি আদৌ কোরোনা আক্রান্ত কিনা !
বলে রাখা ভালো, নিউ-ব্যারাকপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পৌরমাতা লিপিকা দাস, যদিও প্রবীর (বাবুন) সাহা এখন সরাসরি দেখছেন এই ওয়ার্ড।
নোয়াই খালপাড় সংলগ্ন এই ওয়ার্ডের একদিকে রয়েছে হতদরিদ্র, প্রায় অশিক্ষিত মানুষের বসবাস স্থল বা বস্তি।
এই ওয়ার্ডে বা সমগ্র পৌরাঞ্চলে স্থানীয় পৌরপ্রশাসন যদি ঠিকমতো নজরদারি না চালায়, তাহলে হাতে রিপোর্ট না আসাকে ছুতো দেখিয়ে অনেক কোরোনা সেন্দহভাজন (সাসপেক্ট) রোগী সমগ্র অঞ্চলে বেপরোয়া ভাবে ঘুরে বেরিয়ে রোগটা ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে।
যতক্ষণ না হাতে রিপোর্ট এসে পৌঁছবে ততক্ষণ প্রশাসন যেমন কোনো সাধারণ রোগীকে বাড়ি বসে থাকতে বাধ্য করতে পারেনা, ঠিক তেমন এই ফাঁকটাকে কাজে লাগিয়ে যদি (কোনো কোরোনা সাসপেক্ট রোগী যিনি ভবিষ্যতে কোরোনা পজিটিভ রোগী বলে ঘোষিত হলেও হতে পারেন) কোনো রোগী নিজের অজান্তেই চারদিকে রোগ ছড়িয়ে বসেন তার দায়টা কে নেবে !
স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বকে মাথায় রাখতে হবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে পারেন রাজ্যের বর্তমান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
নির্বাচনে দাঁড়াবার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব গত ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষক দিবসের দিন স্থানীয় এলাকায় বসবাসকারী সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য-এর পক্ষ থেকে স্মারক, কলম সহ ফুল মিষ্টিও পৌঁছে দিয়েছে।
এই রকম পরিস্থিতিতে নিউ-ব্যারাকপুর পৌরসভা নিজেই যদি ‘কোভিড ১৯’-এর আঁতুড়ঘর হয়ে থাকে তাহলে তার মতো অস্বস্তিকর বিষয় আর কিছুই হতে পারেনা।
১৫ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড় সংলগ্ন যে রোগীর বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে এত কথা বলতে হচ্ছে, তিনি আজ সকালে ফোন করে জানতে পেরেছেন, “আগামীকাল বিকালের আগে কোনোমতেই রিপোর্ট তাঁর হাতে পৌঁছবেনা।”
জানিয়ে রাখা ভালো, খালপাড়ের এই সন্দেহজনক রোগী নিউ-ব্যারাকপুর পৌরসভা পরিচালিত বিনামূল্যের কোভিড নির্ণায়ক পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলেন।
তাঁকে জানানো হয়েছিল, ‘এখান থেকে নমুনা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হবে। নমুনা পরীক্ষার পরে সরকারীভাবে আপনার মোবাইলে ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হবে।’