মানুষ মানুষের জন্য – কিন্তু মানুষ আজ কোথায় ?
ড:পলাশ বন্দোপাধ্যায় ,কলকাতা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
সাধারণ মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে কি খুব তত্ত্বজ্ঞানী হতে হয় বা বই পড়তে হয় ,নাকি সংবেদনশীল মন নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে থাকলেই হয়?আগে এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি ছিলো না,কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাবনা চিন্তার বিস্তারে এবং বিন্যাসে কেমন যেন গন্ডগোল হয়ে যাচ্ছে।
সহজ কথা সহজ ভাবে বলা,অথবা সহজ কাজ সহজ ভাবে করা এসব কিছুর জন্য পান্ডিত্য বা পড়াশোনার দরকারটা কি,তা কি একটু সহজে ক বুঝিয়ে দিতে পারেন কেউ? এসব কিছুর কি বিশেষ কোনো পদ্ধতি বা ব্যাকরণ আছে?আলাদা পথ আছে?নাকি এর দ্বারা আসলে সমস্যার দিক থেকে দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়? এও এক আন্তর্জাতিক চক্রান্ত?
জলের মতো পরিষ্কার এ বস্তুটি অবশ্য পন্ডিতেরা তাত্ত্বিকেরা মানেন না।এমন কিছু প্রসঙ্গ উঠলেই তাঁরা নাকে চশমা এঁটে ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পরে খানদানি চেয়ারে বসে যান সমাজবাদ বা পুঁজিবাদের পেষাই কলে তাকে পিষে তার গুষ্টির ষষ্টি পুজো করে দিতে।গোল টেবিল বৈঠক হয়,সেমিনার হয়,ওয়েবিনার হয়।পন্ডিতেরা বই পড়ে,নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে আবার বই লেখেন।প্রাইজ পান।জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান। তারপর সেই প্রাইজ ও স্বীকৃতি বুকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
বিপন্ন মানুষ,আক্রান্ত মানুষ,অভাবী মানুষ আরো বিপন্ন আক্রান্ত ও ক্ষুধার্থ হন।সেই বিপন্নতা নিয়ে সিনেমা হয়।সিনেমা ফের আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়।এই ভাবে রোজ রোজ প্রতিদিন ঘুরেই চলে নিস্ফল অকর্মণ্যতার চাকা। না পড়া ও না জানার অনর্থক অপরাধবোধে ভুগতে থাকা পদাতিক কাজ করতে চাওয়া মানুষেরা অশ্বারোহীর ক্ষুরের তলায় চাপা পড়ে হাত পা ছোঁড়েন।তাঁদের কাজ করার স্বপ্ন ও সাধ মাঠে মারা যায়।
আচ্ছা!পড়াশোনা করা তাত্ত্বিক গোষ্ঠী, যাঁদের কাজ কম্মে অনীহা,এবং যাঁরা মাঠে ঘাটে কাদা জলে নেমে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা কর্মী এদের মধ্যে একটা দুর্লঙ্ঘ বিভেদের প্রাচীর তুলে দিলে হয়না? যাতে তা পেরিয়ে কেউ কারো কাজের ও অধিকারের সীমারেখায় ঢুকে পড়তে না পারে? এরকম তো কত অপ্রয়োজনীয় বিভেদের প্রাচীরই তৈরি হলো! ভবিষ্যৎ পৃথিবীর ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তো রইলোই কারা যুদ্ধে জেতে সে বিষয়ে রায় দেওয়ার জন্য!
বিভ্রান্তি বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উৎপাতের কারণে কত সাধারণ মানুষের ছোট ছোট স্বপ্ন ও সাধ মাঠে মারা যায়,এ নিয়ে সঠিক জবাবদিহি করার দায়িত্ব কারা নেবে?কর্মীরাও কেন স্বীকৃতি পাবে না?
●●●●●●●●●
পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়
২৯.০৯.২০২০