দিলীপ তথাগত দ্বৈরথে দিলীপের থেকে সহস্র যোজন এগিয়ে তথাগত রায়

0
842
Tathagata Roy and Dilip Ghosh
Tathagata Roy and Dilip Ghosh
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:12 Minute, 57 Second

দিলীপ তথাগত দ্বৈরথে দিলীপের থেকে সহস্র যোজন এগিয়ে তথাগত রায়

হীরক মুখোপাধ্যায় (৩১ অগস্ট ‘২০):- ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন ও সেই নির্বাচনকে ঘিরে ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’-র পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ শাখার মধ্যে ইতিমধ্যে একটা সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।

নির্বাচনকে মাথায় রেখে মেঘালয়ের রাজভবন থেকে বেরিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গে আস্তানা গেড়েছেন তথাগত রায়।

দিলীপ ঘোষ এই মুহুর্তে যেমন ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’-র অন্যতম সাংসদ, তেমনই দলের পশ্চিমবঙ্গ শাখার দুবারের নির্বাচিত সভাপতি।
অন্যদিকে তথাগত রায় সাম্প্রতিক অতীতে ত্রিপুরা ও মেঘালয় রাজ্যের রাজ্যপাল পদের অভিজ্ঞতা লব্ধ এক ঝকঝকে ব্যক্তিত্ব, শ্রী রায়ের পকেটেও ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’-র পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ শাখার দুবারের সভাপতি হওয়ার পরিচয়পত্র রয়েছে।

‘ভারতীয় জনতা পার্টি’-র অনেক প্রবীণ সদস্য এই সমস্ত বিষয় দেখে আপ্লুত হয়ে ভাবছেন, “দিলীপ তথাগতর যুগলবন্দিতে রাজ্যের গদি পরিবর্তন ঠেকায় কে ?

‘ভারতীয় জনতা পার্টি’-তে প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক রূপে আসার আগে দিলীপ ঘোষ দীর্ঘদিন ধরে ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ’-র সদস্য ছিলেন। অবিবাহিত ব্যক্তি, তাই জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়ে লোভী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুব কম।

অন্যদিকে, মেট্রো রেলের প্রাক্তন চিফ ইঞ্জিনিয়ার তথা দু’দুটো রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল যাঁর পরিবার ও কন্যা বেশিরভাগ সময় বিদেশে থাকেন তাঁর পক্ষেও ক্ষমতার চিটেগুড়ে আটকে পড়ার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায় দল যদি ঠিকমতো এগোতে পারে তাহলে রাজ্যে ঘাসফুল থেকে পদ্মফুল ফুটতে বেশি সময় লাগবেনা।”

অনেকে ইতিমধ্যে দিলীপ ঘোষ আর তথাগত রায়-এর মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।

অনেকেই বলছেন তথাগত রায়-এর তুলনায় সভাপতি রূপে দিলীপ ঘোষ অনেক এগিয়ে।

আসুন, অমল আলোয় একটু কাটাছেঁড়া করে দেখা যাক; কে কার থেকে কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে।

ব্যক্তিগত শিক্ষার নিরিখে ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’-র পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ শাখার বর্তমান সভাপতি দিলীপ ঘোষ-এর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে।

দিলীপ ঘোষ নির্বাচনের আগে ‘ভারতের নির্বাচন আয়োগ’-কে হলফনামা দিয়ে বলেছিলেন ঝাড়গ্রামের ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পলিটেকনিক’ থেকে তিনি ডিপ্লোমা পাস করেছেন। যদিও পরে ওই সংস্থার অধ্যক্ষ এক ঘোষণায় জানান, এই তথ্য ঠিক নয়।

অন্যদিকে তথাগত রায় শিবপুরের ‘ইণ্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং সায়েন্স এণ্ড টেকনোলজি’ থেকে পাশ করা একজন ইঞ্জিনিয়ার। দেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যক্তিগত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি ভিজিটিং লেকচারার রূপে পড়িয়েছেন।

অতএব, ব্যক্তিগত শিক্ষার নিরিখে দিলীপ ঘোষের থেকে অনেক এগিয়ে তথাগত রায়। লন টেনিসের ভাষায় বললে বলতে হয় এডভান্টেজ তথাগত।

কার আমলে বেশি আসন পেয়েছে ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’, এই বিষয়ে চর্চা করতে গেলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে এই সময়ে ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’-র পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ শাখার নিজস্ব বিধায়ক ও সাংসদের সংখ্যা তথাগতর আমলের তুলনায় অনেকগুণ বেশি।

এই ঘটনা নিঃসেন্দহে সঠিক, যে তথাগতবাবুর সময় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির এত বিধায়ক, সাংসদ ছিলনা।

কিন্তু এক্ষেত্রে যেটা বিচার করতে হবে, এই সাফল্যের পেছনে দিলীপ ঘোষের কতটা হাত রয়েছে !

দিলীপবাবুকে কোনোরকম অসম্মান না করেও বলা যায়, মোদী হাওয়া আর মুকুলের সহায়তা না থাকলে দিলীপ ঘোষ কখনোই রাজ্যের সর্বকালের সফল রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হয়ে উঠতে পারতেননা।

এবার উল্টোদিকে দেখুন, তথাগতবাবু যখন রাজ্য সভাপতি তখন বামফ্রন্টের সাথে প্রতি পদক্ষেপে লড়তে হয়েছে ওঁনাকে।
তথাগতবাবুর সময় উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার ১০ টা ব্লকে যেভাবে পদ্মফুল ফুটেছিল তা দিলীপবাবু পরে আর ফোটাতে পারেননি।
অরাজনৈতিক ব্যক্তি রূপে এটা শুধু একটা উপমা দিলাম, বাকিগুলোর কথা বিজেপির প্রবীণ নেতারা আমার থেকেও ভালো বলতে পারবেন।
মোদী হাওয়া ও তৃণমূল কংগ্রেস-এর ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’ তুল্য মুকুল রায়-এর মতো কোনো ব্যক্তির কোনোরকম সহায়তা না পেয়েও তথাগত রায় সেই সময় যেটুকু সফল হয়েছিলেন তাকে কখনোই অবজ্ঞা করা ঠিক নয়।

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে একক ক্ষমতায় লড়ে আসন বার করে নিয়ে আসার ঘটনাতেও এডভান্টেজ তথাগত।

এবার দেখে নেওয়া যাক দলে কার জনপ্রিয়তা বেশি দিলীপ ঘোষের না তথাগত রায়ের।

বর্তমান অবস্থায় উপর উপর দেখতে গেলে এই মুহুর্তে দলের অভ্যন্তরে জনপ্রিয়তার নিরিখে নিঃসেন্দহে এগিয়ে দিলীপ ঘোষ।

কিন্তু প্রশ্ন, সারা দেশে ভারতীয় জনতা পার্টি-র কোথাও যেখানে শ্রমিক সংগঠন নেই, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দল যেটা কখনোই করতে পারেনা, সেই রকম আবহে দলের গঠনতন্ত্রর সর্বনাশ করে যে সভাপতি বিজেএমটিইউ, বিজেএমটিইউসি-র মতো শ্রমিক সংগঠন বানিয়ে কিছু কাছের লোককে কামিয়ে নেওয়ার সুবিধা করে দেন, দলে তিনি জনপ্রিয় হবেননা তো আর কে হবে ?

এতো গেলো দলের ভুঁইফোঁড় শ্রমিক সংগঠনগুলোর কথা, এবার যদি দলের লিগাল সেলের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে লিগাল সেলেরও কোনো কম্বাইণ্ড প্লাটফর্ম নেই, তিনটুকরো অবস্থায় জেলায় জেলায় চলছে লিগাল সেলগুলো। ফলতঃ প্রত্যেকবার ‘বার এসোসিয়েশন’-এর নির্বাচনে গোহারা হারছে বিজেপি প্রার্থীরা।

শুধুমাত্র সাংগঠনিক স্তরের অযোগ্যতা ও অযোগ্য ব্যক্তিদের যেনতেনভাবে পদে রাখার অদম্য বাসনা কখন যে দিলীপ ঘোষের এগিয়ে চলার পথে একমাত্র অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে তা তিনি এবং তাঁর পারিষদরা কেউই ধারণা করতে পারছেননা।

আসা যাক জেলা নেতৃত্বর বিষয়ে, মূলতঃ দিলীপ ঘোষের সময়েই দেখা গেছে, উত্তর ২৪ পরগনার যে নেতা দলীয় কার্যালয়ে মদের আসর বসিয়ে রাতারাতি সোস্যাল মিডিয়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিলেন, তাঁকে শাস্তি না দিয়ে দিলীপবাবু জেলা সভাপতি বানিয়ে ছাড়লেন।
দীর্ঘদিন আরএসএস করে আসা রাজ্য সভাপতির এই যদি বিচার হয়ে থাকে, তাহলে বলার কিছু থাকেনা।

মানছি বিজেপির বারাসাত জেলা পার্টি অফিস নিয়ে সমস্যা আজকের নয়, তথাগতবাবুকেও এই বিষের জ্বালা সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কোনোদিন অন্যায়ের সাথে আপস করেননি। তিনি কোনোদিন শিষ্টাচার ভঙ্গ করেননি, তিনি কোনোদিন দলীয় অধিনিয়ম উল্লঙ্ঘন করে দলে শ্রমিক সংগঠন খোলেননি, লিগাল সেলকে ঝগড়াঝাঁটির পীঠস্থান বানাননি। তথাগত রায় হয়তো খাঁকি হাফপ্যান্ট পড়ে লাঠি হাতে রাস্তায় রাস্তায় প্যারেড করেননি, কিন্তু দলকে নিয়ে কাউকে প্যারডি করতেও দেননি। আর ঠিক এই কারণেই দলের ভেতর কামানেওয়ালা লবি কোনোদিনই তথাগত রায়কে নিয়ে লাফালাফি করেননি।

সুতরাং এক্ষেত্রেও দিলীপ তথাগত দ্বৈরথে এডভান্টেজ তথাগত। তাছাড়া তথাগত বাবু যে শুধু উচ্চ শিক্ষিত তাই নয় , শিক্ষক মানুষ ,ছাত্র পড়ানোর অভিজ্ঞাতা ,এই বাংলার ভেঙে পড়া শিক্ষা ব্যবস্থা কে আবার সঠিক পথ দেবেন, এ কথা আশা করে যায় ।

দিলীপ ঘোষ কবীরের অনুগামী রূপে কোনো কিছু সমস্যার বিষয়ে দশবার না ভেবে দুমদাম কাজ ও বক্তব্য রাখতে ভালোবাসেন। তাঁর মনের কথা, “যা আমাকে করতে হবে তা এখনই করে ফেলা দরকার।”

কিন্তু বর্তমান রাজনীতিতে এই পথ সবসময় কাঙ্ক্ষিত নয়, ফলস্বরূপ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অপমান, মারধরের শিকার হয়েছেন দিলীপ ঘোষ।
অন্যদিকে প্রকৃত শিক্ষিত ব্যক্তি রূপে অনেক বেশি পরিপক্ক তথাগত রায়।

তাই তাঁর সময়ে সন্দেশখালি থানার অধীন মাঠবাড়ি গণধর্ষণ কাণ্ড নিয়ে তিনি অনেক বেশি সরব হলেও বামফ্রন্টের কোনো হার্মাদই তার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি।

সুতরাং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পরিপক্কতার নিরিখেও এডভান্টেজ তথাগত রায়।

এই পর্যন্ত পড়ে অনেকেই কৌতূহলী হতে পারেন যে তথাগতবাবুর কী ঋণাত্মক কোন বিষয় নেই ?
আছে, আর সেটাই সর্বনাশের মূল। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে দিলীপবাবুর বয়স কমবেশি ৫৬ বছর, সেখানে তথাগতবাবুর বয়স ৭৪-এর আশেপাশে।

বাহাত্তুরে বুড়োদের যেখানে বানপ্রস্থ শেষে সন্ন্যাস নেওয়ার কথা, সেখানে তথাগত রায়-এর ওয়াইল্ড কার্ডে দলীয় রাজনীতিতে ফিরে আসাটা যথেষ্ট রোমাঞ্চকর হলেও, ভাবী জীবনে উনি কতটা দৌড়ঝাঁপ করতে পারবেন সে বিষয়ে ষোলোআনা সন্দেহ আছে।

তবে পরিশেষে বলা যেতেই দিলীপ ঘোষ যদি নির্বাচনে লড়াই করে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড় থেকে সরে এসে ওই স্থান অন্য কারোর জন্য ছেড়ে দিয়ে নিজে দায়িত্ব নিয়ে দলীয় সংগঠনটা দেখতে শুরু করেন, তাহলেই দিলীপ তথাগত যুগলবন্দি রাজ্যে মণিকাঞ্চন যোগে পরিবর্তিত হতে পারে। অন্যথায় ফল ছত্রভঙ্গ।

তবে বর্তমান সংগঠন হাতের তালুর মতো চেনেন দিলীপ বাবু ,তাই তাঁকে ছাড়াও নির্বাচন পার করা কঠিন । কারণ ২ থেকে ১৮ যে দিলীপ বাবুদের লড়াইয়ের ফল ।

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD