স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকেই দিল্লীর কদর্য নেপটিজমের শিকার পশ্চিমবঙ্গ

0
707
War Memorial Darjeeling
War Memorial Darjeeling
0 0
Azadi Ka Amrit Mahoutsav

InterServer Web Hosting and VPS
Read Time:12 Minute, 44 Second

স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকেই দিল্লীর কদর্য নেপটিজমের শিকার পশ্চিমবঙ্গ

এম রাজশেখর (২৮ অগস্ট ‘২০):- বর্তমানে ‘নেপটিজম’ বা স্বজনপোষণ এক বহুশ্রুত শব্দবন্ধ রূপে দেশবাসীর কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
আজ একদিকে যেমন অনেক বাঙালী নব্য যুবক ‘নেপটিজম’ নিয়ে চর্চা করছেন, অন্যদিকে কঙ্গনা রানাওয়াত না সুশান্ত সিং রাজপুত না দিব্যা ভারতী কে প্রথম নেপটিজমের শিকার; এই চর্চা করতে করতে প্রায়শই লকডাউনের বাজারে ডালে লবন কম বা বেশি দিয়ে রান্নার প্রায় সর্বনাশ ঘটিয়ে চলেছেন বাঙালী মা বোনেরা।

কিন্তু অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা প্রথম থেকেই ‘নেপটিজম’-এর শিকার পশ্চিমবঙ্গ বা বাঙালীকুল।
আসুন আপনাদের অবগতির জন্য একটু একটু করে পিঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো ‘ভারতের জাতীয় কংগ্রেস’ বা ‘ভারতীয় জনতা পার্টী’-র গা থেকে একটা একটা করে পোষাক সরানো শুরু করি।

ভারত তখনও স্বাধীন হয়নি, কংগ্রেসের বিশাল বোলবলা অবস্থা। সেই সময় প্রথম বাঙালী রূপে ‘হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশন’ থেকে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’-এর সর্বভারতীয় সভাপতি রূপে মনোনীত হন সুভাষচন্দ্র বোস। ব্যাস আর যায় কোথায়, গান্ধী ও জওহরলালের মাথা গরম হয়ে উঠল। ভারতের এই দুই মহাপুরুষ বা কালপুরুষ মিলে দলের ভেতর ঘোঁট পাকানো শুরু করলেন, স্বভাবতই দলে সমস্যা বাড়তে শুরু করল। এভাবেই একটা বছর কেটে গেলো।
পরের বছর ‘ত্রীপুরী কংগ্রেস অধিবেশন’-এ পট্টভী সীতারামাইয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য কোনো যোগ্য বাঙালী ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’-এর সর্বভারতীয় সভাপতি ঘোষিত হতেই পুনরায় মুখ ভার হলো ওই দুই মহাপুরুষ বা কালপুরুষ সম কংগ্রেস নেতার। এই দুই মহাপণ্ডিত বা মহামুর্খের মধ্যে একজনের আবার ঘনঘন গোঁসা করে না খাওয়ার ব্যায়রাম ছিল। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ভাবলেন সুভাষচন্দ্র দলের হাল ধরলে তাঁর এবং তাঁর আত্মজ তুল্য জওহরলাল নেহরু-র ভবিষ্যত অন্ধকার। আধুনিক ভারত কস্মিনকালেও তাঁদের আর মনে রাখবেননা। ব্যাস এই দুর্ভাবনার কথা মাথায় আসতেই গান্ধী সুভাষচন্দ্র-কে ডেকে পদত্যাগ পত্র পেশ করার জন্য চাপ দিতে লাগলেন। সুভাষচন্দ্র ভালো রকম বুঝতে পেরেছিলেন এই ব্যক্তিদের ত্রিসীমানার মধ্যে থাকলে ভবিষ্যতে তাঁর মান সম্মান কিছুই আর অবশিষ্ট থাকবেনা, তাই সুভাষচন্দ্র ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’-এর নির্বাচিত সর্বভারতীয় সভাপতি-র পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে বেরিয়ে এসে ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’-এর জন্ম দিয়েছিলেন।

এতো গেলো ‘নেপটিজম’-এর গেরোয় ধমকে চমকে পদত্যাগ করানোর ঘটনা। পাঠক বন্ধুরা নিশ্চয়ই জানেন যে সুভাষচন্দ্র বসু-র মৃত্যু রহস্যের কিনারা আজও হয়নি। হওয়াটা সম্ভবপরও নয়। কারণ তাঁর মৃত্যু রহস্য যত ঢাকা থাকবে ততই একটা দলের পক্ষে বিশেষ মঙ্গলকর।
‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ দল চালাতে গিয়ে নেতাজীর সাথে জওহরলাল নেহরু ও মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী-র বিভিন্ন বিষয়ে মতান্তরের ঘটনা সামনে এলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কোনো ভারতীয়ই নেতাজীর ওভাবে মৃত্যু ও মৃত্যু রহস্য মেনে নিতে পারেননি।

ছাড়ুন নেতাজীর কথা, আসুন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি-র ঘটনায়। আশুতোষ মুখার্জি-র এই ছেলে শিক্ষাবিদ হিসেবে যতটা প্রণম্য ঠিক ততটাই প্রণম্য দেশের প্রথম সারির একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে।
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি জওহরলাল নেহরু মন্ত্রীসভার শিল্প ও সরবরাহ মন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে জওহরলাল নেহরু ও লিয়াকত-এর মাঝে যে চুক্তি হতে চলেছিল তার তীব্র প্রতিবাদ করায় পদত্যাগের আড়াল তাঁর মন্ত্রীত্ব গিয়েছিল।
তারপর ১৯৫৩ সালের ঘটনা, কাশ্মীরের বুকে দাঁড়িয়ে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা তোলার দায়ে তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস-এর প্ররোচনায় বিনা চিকিৎসায় বিনা পথ্যে তাঁকে কালাতিপাত করতে হয় কারাগারের কুঠুরিতে। ২৩ জুন ১৯৫৩ নিবে যায় তাঁর জীবনপ্রদীপ। না বাঙালী নেতা বলে এঁনার জন্যও সেভাবে কোনোদিন শোকস্তব্ধ হয়নি দিল্লী বা ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ নেতৃত্ব।

কী বাঙালী পীড়নের কথা শুনে পায়ের রক্ত চড়বড়িয়ে মাথায় উঠছে নাকি !
তাহলে শুনুন কণ্ঠ সঙ্গীত শিল্পী কিশোরকুমারের দুর্দশার কাহিনী।
আপনারা সবাই জানেন স্বল্পায়ু এই গায়ক তাঁর জীবদ্দশায় যত ভাষায় যত জনপ্রিয় গান গেয়েছেন তাঁর ধারেকাছে নেই ভারতের অন্য কোনো শিল্পী।
তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, তাঁর যোগ্য পুত্র সঞ্জয় গান্ধী একবার কিশোরকুমারের কাছে গিয়ে ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’-এর সভায় দলবল সহ বিনা পারিশ্রমিকে গান শোনানোর আবদার করেছিলেন।
কিশোরকুমার এই কিম্ভুতকিমাকার তুল্য বেয়াড়া আবদারে কর্ণপাত না করায় সঞ্জয় গান্ধী এবং ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ মিলে কিশোরকুমারের ঘোরতর সর্বনাশ করে ছাড়লেন।
প্রথমে বেতার ও দূরদর্শন-এর স্বীকৃত শিল্পী তালিকা থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হলো যাতে তিনি কোনোদিন আর বেতার বা দূরদর্শন থেকে ডাক না পান, তারপর মুম্বইয়ের প্রথিতযশা সঙ্গীত নির্মাণকারী সংস্থাদের হুকুম দিয়ে কিশোরকুমারকে দিয়ে কোনো রকম গান গাওয়ানো বন্ধ করা হলো।
শুধু তাই নয়, ওঁনার জীবদ্দশায় তো বটেই মরণোত্তর সময়েও তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানেও বঞ্চিত করা হয়েছে।
এর পরেও কেউ কী বলতে পারবেন সুভাষচন্দ্র, শ্যামাপ্রসাদ থেকে কিশোরকুমার কেউ নেপটিজম-এর শিকার নন। আপনারা অনেকেই ভাবতে পারেন এঁরা নেপটিজম-এর নয় বরং প্রাদেশিকতাবাদের শিকার। কিন্তু এই কথা আমাদের ভুললে চলবেনা, নেপটিজম আর প্রভিনশিয়ালিজম আসলে একই সিক্কার এদিক ওদিক।

এতক্ষণ ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’-এর খোসা ছাড়াচ্ছিলাম আসুন এবার একটু ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’-র খোসা ছাড়ানো যাক।
এই মুহুর্তে পশ্চিমবঙ্গে ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’-র নির্বাচিত সাংসদের সংখ্যা ১৮। ভেবে দেখেছেন, এই ১৮ জনের মধ্যে নাম-কা-ওয়াস্তে না ঘর কা না ঘাট কা তুল্য কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী থাকলেও একটাও পূর্ণমন্ত্রী নেই। অথচ রাজ্যের কোঠায় পশ্চিমবঙ্গের জন্য পূর্ণমন্ত্রী বরাদ্দ থাকাটাই সমীচীন, অথচ আজ পর্যন্ত এই নিয়ে কোনো রাজনৈতিক শিবিরকে কোনোরকম হাঙ্গামা করতে দেখেছেন ?
দেখেননি। আপনাদের কী মনে হয় এই রাজনৈতিক নেতারা সবাই মূর্খ, এঁরা কী কেউ বোঝেননা পশ্চিমবঙ্গ দিল্লীর নেপটিজম-এর শিকার।
হ্যাঁ বোঝেন, এবং আমার আপনার থেকে ভালো রকম বোঝেন। কিন্তু সামান্য লাভের উদ্দেশ্যে বাঙালী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দিল্লীর প্রতি বিদ্রোহ না করে তাঁদের পদলেহনে ব্যস্ত।

আগের লেখায় আমি বলেছিলাম, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের অসঙ্গতি দেখলেই কালক্ষেপ না করে জুতানো দরকার, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রায় ১০ কোটি পশ্চিমবঙ্গবাসীর স্বার্থে সেটা যে কতো প্রয়োজন তা নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবেনা।

দিল্লীর নেপটিজম-এর বিরুদ্ধে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গবাসীর একাত্ম হয়ে প্রতিবাদ করার সময় এসে গেছে। নেপটিজম-এর এতো ঘটনার পরেও চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে থাকলে ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে পস্তাতে হবে।
দিল্লীর নেতারা জানেন, তাঁদের বিরুদ্ধে জনগণকে একত্র করার মতো ভূভারতে যদি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি থাকেন তো তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আবার ওঁনারা এটাও জানেন, আর পাঁচটা আটপৌড়ে অশিক্ষিত মহিলার মতো মমতাও ভয়ঙ্কর লোভী, উনি নিজের প্রশংসা বরাবর শুনতে ভালোবাসেন।
তাই গভীর ষড়যন্ত্র অনুযায়ী মাঝে মাঝে দিল্লীওয়ালারা দেশে ধান উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম বা মাছের পিন উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম কিংবা কোরোনা নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গ দেশের সেরা এইরকম একটা তকমা দিয়ে মমতা এবং রাজ্যবাসী উভয়কেই লক্ষভ্রষ্ট করে চলেছে।

দিল্লীর এই ষড়যন্ত্র মূলক নেপটিজম-এর চক্কর থেকে বেরতে না পারলে বাঙালীর ভবিষ্যত অন্ধকার।
একবারও কী আপনারা ভেবে দেখেছেন, যখন বিহারে শিক্ষার মান জাতীয় মানের সবচেয়ে নীচে ছিল সেই সময়েও বিহার থেকে যত আইএএস আইপিএস বেরিয়েছে তার ধারেকাছেও ছিলনা পশ্চিমবঙ্গ !
এর মানেটা কী নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। দিল্লীওয়ালারা বরাবরই বাঙালী আধিকারিকদের মেধাকে ভয় পান। তাঁরা জানেন, একমাত্র বাঙালী আধিকারিকরা চাইলেই দুর্নীতি বন্ধ করে দিতে পারেন। অতএব সর্বভারতীয় প্রশাসনিক কৃত্বক থেকে ওদের যত পারো দূরে রাখো।

জাগো বাঙালী জাগো, নেপটিজম-এর জাল কেটে স্বমহিমায় গর্জে উঠে নিজের জাতীয় পাওনা বুঝে নাও।

About Post Author

Editor Desk

Antara Tripathy M.Sc., B.Ed. by qualification and bring 15 years of media reporting experience.. Coverred many illustarted events like, G20, ICC,MCCI,British High Commission, Bangladesh etc. She took over from the founder Editor of IBG NEWS Suman Munshi (15/Mar/2012- 09/Aug/2018 and October 2020 to 13 June 2023).
Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %
Advertisements

USD