আপনি নিজেই নিজের ডাক্তারী করেন কি ? আপনি এবং আপনার ওষুধপত্র সম্পর্কে কিছু কথা
ড: পলাশ বন্দোপাধ্যায় , কলকাতা , ২১ অগাস্ট ২০২০
এগুলো জেনে রাখুন।মনে রাখুন।কাজে আসবে।
■বাচ্চাদের ক্ষেত্রে, শরীরে ওষুধ প্রবেশ করা, রক্তে মেশা এবং শেষে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া,পুরোটাই পরিণত বয়স্ক মানুষের তুলনায় অপরিণত।সূতরাং বাচ্চার ওজন দেখে আনুপাতিক হারে পরিণত বয়স্কর তুলনায় নিজে নিজে তার ডোজ নির্ধারণ বিপজ্জনক।
■মা যে ওষুধ খান,কম বেশি তার সবই তার বুকের দুধে ক্ষরিত হয়।সুতরাং কোন ওষুধটা বাচ্চার পক্ষে নিরাপদ তা জেনেই তবে তার জন্য ওষুধ নির্বাচন করতে হবে।ওটা,সুতরাং আপনার কাজ নয়।
■কেবলমাত্র চিকিৎসকের উপদেশ মতোই ওষুধ খাওয়ান।ওষুধ নিজের ইচ্ছেমতো খাওয়া গেলে দেশে চিকিৎসক তৈরির দরকার পড়তো না।
■বিভিন্ন ওষুধের বিভিন্ন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, ব্যক্তি বিশেষে তার তীব্রতা ভিন্ন ভিন্ন।কোনো অসুবিধা হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।ওষুধ বন্ধ রাখতে হবে।
■একটা ওষুধে প্রথমবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়নি মানে এই নয় যে দ্বিতীয়বার হবে না,আবার প্রথমবার কাজ করেনি মানে এই নয় যে দ্বিতীয়বারও কাজ করবে না।প্রতিবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।
■গর্ভবতী মা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া একটা ওষুধও খাবেন না।কিছু ওষুধে শিশু বিকলাঙ্গ হতে পারে।গর্ভস্থ শিশুর বিকাশের সমস্যা হতে পারে।
■ওষুধের অপব্যবহার করবেন না।হয়তো ওষুধের প্রয়োজনই নেই অথচ আপনি ওষুধ খাচ্ছেন বা খাওয়াচ্ছেন।
■কিছু মলমে স্টেরয়েড থাকে।তা দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে চামড়ার উপরের স্তর পাতলা হয়ে চামড়ার সংক্রমন শরীরের গভীরে নিয়ে গিয়ে বিপত্তি ঘটায়।সুতরাং মলম নির্বাচনও আপনার কাজ নয়।
■তারিখ পেরিয়ে যাওয়া ওষুধ ভুলক্রমে খেয়ে ফেললে তার থেকে বিষক্রিয়া হবে না,ওষুধের কাজ করার ক্ষমতা কমে যাবে এ দেখা আপনার কাজ নয়।আপনি ওষুধ খাওয়ার আগে তার manufacturing এবং expiry date টা দেখে নেবেন।
■চিকিৎসক দুটো ওষুধের ডোজ একসঙ্গে দিলে আপনার সুবিধের জন্য তা যদি মিশিয়ে খেতে চান তাহলে তা চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে করুন।দুটো ওষুধের মধ্যে অবাঞ্ছিত ও শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর রাসায়নিক বিক্রিয়া হলে কিন্তু আপনার বিপদ।সে ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
■চিকিৎসক চারবার ওষুধ খাওয়াতে/খেতে বলেছেন,আপনি দ্বিগুন ডোজে দুবার করে তা খেলে লাঞ্চ এবং ডিনার একসাথে খাওয়ায় থেকেও অবাস্তব,অযৌক্তিক ও হাস্যকর হবে।
■ড্রপ জাতীয় ওষুধ সিরাপ জাতীয় ওষুধের থেকে ঘনত্বে বেশি শক্তিশালী।সে ওষুধ চামচে পরিমাপ করে নিয়ে খাওয়া/খাওয়ানোই ভালো।
■ব্যাথা নিরোধক জেল জাতীয় ওষুধ শরীরে মালিশ করবেন না।ওটি পরিমান মতো ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে দিলেই তা চামড়ার গভীরে প্রবেশ করে,কার্যকরী হয়।সেভাবেই তা তৈরি।
■মুখের ভিতরে লাগানোর ওষুধ খেয়ে ফেললে অসুবিধে নেই।সেভাবেই তাও তৈরি।
■চোখের কাছাকাছি কোনো ক্ষততে জীবাণুরোধী মলম দিতে হলে তা চোখের জন্য প্রস্তুত মলম হলেই নিরাপদ।কারণ তা চামড়াতেও কিছুটা হলেও কাজ করে।
■একই ওষুধ দুটো ব্র্যান্ড দিয়ে কোর্স কমপ্লিট করা কাম্য নয়।কার্যকারিতার হেরফেরে ফল উনিশবিশ হতেই পারে।
■ওষুধ বমি হয়ে গেলে আধঘন্টা পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ মতো তা পুনরায় খাওয়া/খাওয়ানো যেতে পারে।পরামর্শটা জরুরি।
■বাচ্চাদের ওষুধ অল্প অল্প করে দশমিনিট ধরে খাওয়ালে বমির সম্ভাবনা কমে।ভরা পেটে ওষুধ খেলে বমির সম্ভাবনা বাড়ে।বেশিরভাগ ওষুধই খালি পেটে খাওয়ানো/খাওয়া যায়।আপনার চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করুন।
■চোখের জীবাণুরোধী ড্রপ দিনে অন্ততঃ 5 বার করে দিতে হবে,কারণ তার কার্যক্ষমতা সময় খুব অল্প।দুই থেকে তিন ঘন্টা।রাতে তা কার্যকরী থাকার জন্য চোখের মলম শ্রেয়।
■নাকের ড্রপ জাতীয় ওষুধ কিছু সময় পরে গলায় চলে যায়।বাচ্চাদের খালি পেটে নাকের ড্রপ দেওয়ার চেষ্টা করবেন,নতুবা বিস্বাদ ড্রপের কারণে খাবার বমি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।নাক বন্ধের ড্রপ বেশি ব্যবহার করতে নেই।সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে নাক আরো তীব্র ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।দীর্ঘদিনের ব্যবহারে নাকের শ্লেষ্মাঝিল্লীর ক্ষতি হয়ে নাকের গন্ধ নেওয়ার কার্যকারিতা বিনষ্ট হতে পারে।সাবধান।
আজ এটুকুই।ভালো থাকুন।সুস্থ থাকুন।
পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়, ২১.০৮.২০২০
*** Please follow your medical advisor before changing any advice. These are the general advice needs to be checked with your doctor before application.***