সম্পর্কহীন আবেগ ও আবেগহীন সম্পর্কের খোঁজে মনবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী মন
#মনওবিজ্ঞান
#সম্পর্ক
ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় ,কলকাতা ,০৮.০৮.২০২০
আজ দুটো মানুষের সম্পর্ক আর তা বয়ে চলা নিয়ে কিছু বিষয়ে দৃষ্টিপাত করছি।
■দুজন মানুষ,তারা নারী পুরুষ, সম বা অসম বয়স্ক যা’ই হন না কেন,মানসিক ও শারীরিক গঠন, জিন এবং ভিন্ন পরিবেশে বেড়ে ওঠার জন্য প্রকৃতিতে ভিন্ন।
■অথচ তারা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্কে যুক্ত।এই সম্পর্কগুলো সুন্দর ভাবে বয়ে চলাটা কাম্য ও কাঙ্খিত।
■এই সম্পর্কগুলো টিকিয়ে রাখার জন্য কিছু পূর্ব শর্ত কিছু নিয়ম আছে,যেগুলোকে নিজের মতো করে গুছিয়ে সাজিয়ে নিতে হয়।
■প্রথম শর্ত হলো সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষের আগ্রহ।এটি না থাকলে যে কোনো আলোচনাই অর্থহীন।
■পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা বিষয়টা খুব জরুরি।এটা ভিতরে থাকে।তাকে লালন করে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।
■পরস্পরের জীবন চর্যার প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এগুলো থাকতে হবে।কোনো ব্যাপারে কোনো বিভ্রান্তি হলে আলোচনার টেবিল বা গঠনমূলক ঝগড়া আছে।মন কষাকষি নয়।
■প্রত্যেকেরই নিজের পেশার বাইরে ভিন্ন ভিন্ন ভালোলাগা থাকে।কেউ আঁকেন,কেউ গান শোনেন,কেউ ফটোগ্রাফি করেন,কেউ বন্ধুবৎসল…পরস্পরের এই ব্যাপারগুলোকে বুঝে তাকে নারচার করা,তাতে নৈতিক সমর্থন দিয়ে পাশে থাকা খুব কঠিন বস্তু নয়।
■প্রত্যেকটা মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক লালন করা ছাড়াও একটা একান্ত নিজস্ব জগৎ থাকে,গোপন কুঠুরি সে জগতের মালিক,তার দরজা দিয়ে ঢোকা এবং বেরোনোর অধিকার একমাত্র তারই।সে জগতের আঘাত,ভালোলাগা এগুলোও তার।সে যদি না চায়,তার সেই গোপনীয়তায় নাক গলাতে নেই।মনে রাখতে হবে কেউ কারো প্রভু নয়,কেউ কারো দয়া দক্ষিণ্যে বাঁচে না।বরং এর উল্টোটা কোনো পরাধীনতার গ্লানি থেকে
কম যন্ত্রণার নয়।পৃথিবীর প্রতিটি সম্পর্কের নষ্ট হওয়ার মূলে হলো কোনো এক তরফে প্রভুত্ববাদ।অপরপক্ষে উল্টোটাকে বলে স্পেস।
■যারা কাজ করে,তাদের ভুল হয়।ত্রুটি বর্জিত মানুষ হলে মানুষ মানুষ না থেকে মহা মানুষ হতো।সুতরাং ,তোমার এটা খারাপ,তোমার এটা ভুল,আমি তোমার মতো নই,অবিবেচকের মতো এই দোষারোপের খেলা সাঙ্গ করে পরস্পরকে
বুঝতে হবে ,একের খামতি অপরকে ঢাকতে হবে।
■পারস্পরিক বেঁচে থাকার চাহিদা,ন্যূনতম মৌলিক অধিকার এগুলোকে যত্নে,শ্রদ্ধায় বাঁচিয়ে রাখবেন।কেউ যেন নিজেকে নিজভূমে পরবাসী না না ভাবে।সবার একরকম অন্তর্দৃষ্টি থাকে না কিন্তু শুভবুদ্ধি অবশ্যই থাকে।তাকে বাড়ান
■পরস্পর এক সঙ্গে থাকতে থাকতে বহমান নদীর মতো মানবিক সম্পর্কেও পলি পড়ে।পারস্পরিক অভিমান,ভুলবোঝাবুঝি পরিণত মনন দিয়ে মেটাতে হবে উভয় পক্ষকে।জীবন হার জিতের খেলা নয়,যুদ্ধ নয়।
■আমিত্ব হলো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আর একটি বড় অন্তরায়।বাইরের কাজের জগতের রোল প্লে,তার ইরিটেশন বাইরে ছেড়ে এসে ঘরে পরতে হবে গেরস্থালির জামাকাপড়,যেখানে আমরা কেবকমাত্র সংবেদনশীল ভাই,বোন,বাবা,মা,স্বামী, স্ত্রী,বন্ধু…অন্য কিছু না।কিচ্ছু না।আমার ভুল,আমার ভুল।তাকে স্বীকার করা,মানা কোনো উদারতার কাজ নয়,মানুষ হিসেবে দায়িত্ব।
■পরস্পরের মানসিক স্থিতি বিঘ্নিত ক্ষতিগ্রস্ত হয় ,বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরস্পরের প্রতি আচরণগত ত্রুটিতে।এর জন্য নিজেদের শোধরানো জরুরি।মানসিক রোগের কাউন্সেলিং নয়।
■শ্রদ্ধা,ভালোবাসা,আস্থা ও স্বাধীনতায় বাঁচুন। এর পরেও সবকিছু আপনার হাতে নয়।শুধু এটুকু মনে রাখবেন নিজেদের কারণে আত্মজের,উত্তরপুরুষ ও আগামী পৃথিবীর ক্ষতি না হয়ে যায়।এখনো জীবন ও পৃথিবী বড় সুন্দর।যৌথ দায়িত্বের সোপান তার ভিতকে আরো মজবুত করুন।নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে সম্মানে বাঁচা এ নাতিদীর্ঘ জীবনের মন্ত্র হোক।
ধন্যবাদ।নমস্কার।ভালো থাকবেন সবাই।
পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়
০৮.০৮.২০২০