জন্মদিনের বাঙ্গালী – মেরা জুতা হায় জাপানি, ফিরভি দিল হায় হিন্দুস্থানী
ড: পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা ,২৬.০৭.২০২০
দেবেন বাবু একজন অন্তঃসারশূন্য মধ্যবয়স্ক বড়লোক বাঙালি।তার এক্সপোর্ট ইম্পোর্টের ব্যবসা।সমাজে থাকলেও কোনোরকম সামাজিক দায় দায়িত্ব নিতে তাঁর একদম ভালো লাগেনা।
গতকাল তাঁর জন্মদিন গেল।স্পেশ্যাল দিন বলে কথা।অনেককিছু করতে হবে…
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়লেন তিনি।উৎসব অবশ্য রাত বারোটার পর থেকেই শুরু হয়েছিলো।পরোটা,কষা মাংস ও দামি স্কচ খেয়ে পুরোনো বউয়ের খাটের উপর পেতে দেওয়া নতুন চাদর ও নতুন পিলো কভারের বিছানায় তিনি ঘুমুতে গেছিলেন।ঘুম থেকে উঠতে না উঠতে গায়ে নতুন নতুন গন্ধ।
টয়লেটে সকালের পোশাক রেডি করাই ছিলো।বাড়িতে বউ নামে এক বিশ্বস্ত কাজের মহিলা থাকে।সে সব কিছু দেখভাল করে। সাদা দামি বারমুডা পরে, পিঙ্ক রঙের টি শার্ট, পারফিউম লাগানো গায়ে গলিয়ে ব্যালকনিতে আয়েশ করে বসলেন দেবেন বাবু।সামনের চা গাছের তৈরি সৌখিন গ্লাস টপ টেবিলে সুদৃশ্য দামি কাপে দামি চা এবং গরম গরম চিকেন পকোড়া।খাওয়া শেষ করে বাবু টায়ার্ড হয়ে পড়লেন।খবরের কাগজের সিনেমার পাতাটা খুলে আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন তিনি।হাতের দামী আইফোনে জন্মদিনের নোটিফিকেশনে হাত বুলাতে বুলাতে চোখ এঁটে এলো।নাক ডাকাতে লাগলেন শুয়ে।
নটার সময় আবার প্রবল খিদেতে কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেল তাঁর।ব্রেকফাস্টটা করতে দশ মিনিট দেরি হয়ে গেল আজ।লক ডাউন উপেক্ষা করে অনেক কায়দা ও টাকার বিনিময়ে গতকাল মেনল্যান্ড চাইনা থেকে মিক্সড চাউমিন ও জাম্বো প্রণের একটা প্রিপারেশন আনিয়ে রেখেছিলো বউ।সেটা দিয়ে কোনদিকে না তাকিয়ে জমিয়ে ব্রেকফাস্ট সারলেন দেবেন।বড্ড ভালো বানায় ওরা খাবারটা।
খেয়ে আবার প্রবল ঘুম পেয়ে গেল।
সকাল থেকে খাওয়া, ব্রাশ করা এবং ঘুম থেকে ওঠার ধকলে বারমুডা আর টি শার্টটা ঘামে একদম ভিজে গেছিলো।সেগুলো ছেড়ে ফ্রেশ একটা সেট পরে প্রেসার ও সুগারের ওষুধ খেয়ে আবার তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।ঘুম থেকে উঠলেন বেলা একটা নাগাদ।কি ভালো লাগে খেতে আর ঘুমুতে!গোটা সপ্তাহ টিভির সামনে বসে বসে অনর্গল ব্যবসায়িক কথা বলতে হয় ফোনে।খেয়াল করে দেখেছেন রোজ দশ ঘন্টার বেশি ঘুম হয়না তাঁর।শরীরটাকে তো রাখতে হবে! তাই শনি আর রবিবার শুধু খান আর ঘুমোন তিনি।খুব ফ্রেশ লাগে।তার উপর আজ তো বার্থডে!
দুটো পর্যন্ত দামি সাবান শ্যাম্পু কন্ডিশনার সহযোগে খুব ভালোভাবে স্নান করা হলো।স্নান তাঁর বিলাসিতা।যাতে অন্য কেউ জ্বালাতন না করে,বলতে ভুলে গেছিলাম,নিজের জন্য আলাদা একটা বাথরুম বানিয়েছেন তিনি।
বেরিয়ে দেখলেন লাঞ্চ রেডি হয়নি।বাড়িতে তিনি একদম বেশি কথা বলেন না।এই অবসরে অনিচ্ছুক ভাবে মোবাইলের বিজনেস ফোল্ডারে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলেন,কালকে কি কি কাজ আছে।
লাঞ্চ এলো এরপর।গাওয়া ঘি, আলু ভাজা, বেগুনি, মুগের ডাল, কচি পাঁঠার ঝোল,দই, মিষ্টি ও আইসক্রিমের সামান্য আয়োজন।খাওয়া দাওয়ার পর প্রবল নিম্নচাপ।খুব স্বভাবিক।ব্যস্ত মানুষ।গোটা সপ্তাহ ভালো করে ও কাণ্ডের সময় হয়না।সুতরাং অবসর আর ছুটিছাটার দিনই ভরসা।
আধঘন্টা পরে সেখান থেকে বেরোলেন তিনি।পেট খালি ।মুখে তৃপ্তি।ভাত ঘুমটা এরপর দিব্যি জমলো।ঘন্টাখানেক বাদে ঘুম ভেঙে উঠে
হোম থিয়েটারের সামনে বসলেন সিনেমা চালিয়ে।কি সিনেমা মনে থাকে না।দেখেনও না।এই সময় পরিবারকে সামান্য একটু সময় দয়ার দান করেন তিনি।সঙ্গে চলে লাগাতার স্ন্যাক্স,চা,পুরোনো ও নতুন বন্ধুদের সঙ্গে গুলতানি। এসব শেষ হতে হতে রাত দশটা।ডিনার রেডি ।আর বেশি ভারী কিছু খাবেন না।কাতলার পাতলা ঝোল।মসুর ডাল।বেগুন ভাজা।বাসমতি রাইস।রসগোল্লা।
রাত এগারোটা বাজলো।ঘুমুতে হবে।বিছানা পাতা হয়ে গেছে।খুব অবসন্ন লাগছে দেবেনবাবুর। আড়ামোড়া ভাঙলেন তিনি।বললেন ,’উফফ’!
তারপর সোজা নাক ডাকিয়ে ঘুম।পৃথিবীও বললো, ‘উফফফফ! আজকের মতো বাঁচা গেল’!
●●●●●●●●●●
২৬.০৭.২০২০