প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ইণ্ডিয়ার সুখস্বপ্নকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নিজেই রামের ভোগে পাঠাচ্ছেন|
এম রাজশেখর (২৩ জুলাই ‘২০):- অনেকেই হয়তো আমার সাথে একমত হবেননা, কিন্তু এটাই বাস্তব যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র ‘ডিজিটাল ইণ্ডিয়া’-র সুখস্বপ্নকে সরকার নিজেই রামের ভোগে পাঠাচ্ছেন।
বলতে খারাপ লাগলেও এটাই প্রকৃত সত্য যে কেন্দ্র ও বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকারগুলো একটু যদি বুদ্ধির পরিচয় দিত, তাহলে ‘ডিজিটাল ইণ্ডিয়া’-ই কিন্তু ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর চাবিকাঠি হতে পারত। প্রধানমন্ত্রী মোদী কিন্তু সঠিক রাস্তায় হেঁটে ছিলেন । প্রথাগত রাস্তার বদলে আগামী দিনের মহাসড়ক , যা নিশ্চিত সাফল্য এনে দিতো কানেক্টেড ইন্ডিয়া উইথ গ্লোবাল ইন্ডিয়ান স্তরে ।
মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে কমবেশি লকডাউন চলছে। সময়টা কিন্তু কম নয়, কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারগুলো একটু যদি সদিচ্ছা দেখিয়ে উদ্যোগ নিত, তাহলে এই সময়টায় কিন্তু হার্ডকপিগুলোকে সফ্টকপিতে পরিবর্তন করে নিয়ে ‘ডিজিটাল ইণ্ডিয়া’-র পথে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া যেত।
কতগুলো ছোটো ছোটো উদাহরণ দিচ্ছি একটু চোখ বুলিয়ে নিন তাহলে বিষয়টা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
এই মুহুর্তে দিল্লীর আদালত বা সুপ্রিম কোর্টের কার্যালয়গুলোতে গিয়ে যদি কেউ অমুক কেসটা কবে কোন আদালতে উঠেছিল বা পরে কোনদিন আবার উঠবে জানতে চান তাহলে কাউকেই কোনো আইনজীবী, পেশকার বা মুহুরীর মুখাপেক্ষী হতে হবেনা। সব সময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেই তথ্য লব্ধ না হলেও আদালতের স্থানীয় ডেটাবেস-এ ওই তথ্য মজুদ থাকে। উল্টোদিকে অন্য রাজ্যগুলোর দিকে ফিরে দেখুন কোনো আনাড়ী লোক বিশেষ কিছু ব্যক্তির স্মরণাপন্ন না হলে এই তথ্য কোনো অবস্থাতেই জানতে পারবেনা।
শুধু আদালত সংক্রান্ত বিষয় নয়, এই রকম বিভিন্ন বিষয়ে সারা ভারতেই মানুষ আজ চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হন। কিন্তু দু একটা খুচরো বিষয় ছাড়া কোনো সরকারই এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত দৃঢ় পদক্ষেপে এগোতে পারেনি, যার ফলশ্রুতিতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধেছে দুর্নীতি।
শুধুমাত্র কোন গ্রাহক কোন ব্যাঙ্কে কত টাকা জমা দিলেন বা তুললেন কিংবা গ্যাস কোম্পানী কবে কোন গ্রাহকের গ্যাস বুকিং করার অর্ডার পেলেন সেটা জানানোই ‘ডিজিটাল ইণ্ডিয়া’-র একমাত্র লক্ষ্য কোনোদিন ছিল না এমনকি হতেও পারেনা।
লকডাউনের এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে যদি শিয়ালদা রেল স্টেশন-এর বিভিন্ন সরকারী কার্যালয় তাঁর বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ইতিকর্তব্য সেরে ফেলতে পারে তবে কেনো অন্যান্য সরকারী বিভাগগুলো ‘ডিজিটাল ইণ্ডিয়া’-কে এগিয়ে নিয়ে যেতে অপারগ হচ্ছে! লকডাউনের এই সময়টাকে তো স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে লাগানো যেতেই পারত।
অবশ্য একথাও ঠিক, এমনিতেই যাঁরা ডিজিটাল প্লাটফর্মে কাজ করেন তাঁরা বোধহয় ভালো রকম রসিক অথবা একেবারে অপদার্থ, তাই সরকার বাহাদুর এঁদের উপর বেশি ভরসাও করতে পারেনা।
ভোটার কার্ডে দেখা গেছে নাম পুরুষের তো ছবি জানোয়ারের, আবার আধার কার্ডে দেখা গেছে কোনো এক বিশ্বকর্মা শর্মা-র ক্ষেত্রে তাঁর ছবির জায়গায় কলকারখানার দেবতা বিশ্বকর্মা-র ছবি রয়েছে।
না এই রকম ‘ডিজিটাল ইণ্ডিয়া’ কোনো ভারতবাসীই চায়না, যেমন কোনো ভারতবাসীই ১০০% ক্যাশলেস লেনদেনও চায়না।
এখনও যে ভারতে কয়েক হাজার গ্রাম আক্ষরিক অর্থে বিদ্যুত বিহীন, কোটি কোটি লোক এখনো নিরক্ষর, কয়েক কোটি লোক এখনো দিন আনি দিন খাই অবস্থায় বসবাস করছে, যাঁদের অনেকের কাছেই ডিজিটাল জিনিসটা বোধগম্য নয় , সেখানে ‘ডিজিটাল ইণ্ডিয়া’ আকাশকুসুম ভাবনা হলেও দেশ বা জাতিকে আগে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এটা অনেকাংশেই আবশ্যক।
কিন্তু ভারতের দুর্ভাগ্য এর বাস্তব প্রয়োগ এখনো সম্মক অর্থে ঘটলনা।
এ কথা অনস্বীকার্য যে বামপন্থী সহ একাধিক রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজীব গান্ধী দেশে কম্পিউটার এনে এক গতির সূচনা করেছিলেন। সেই লাভ আজ ভারতবাসী উপভোগ করছে। নরেন্দ্র মোদী ‘ডিজিটাল ইণ্ডিয়া’-র ডাক দিয়ে সেই গতিকেই আরো ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর দুর্ভাগ্য এবং সরকারী আমলাদের অযোগ্যতা ও নির্বুদ্ধিতার ফলে দেশ আর এক বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন হারাতে চলেছে।
কিছুই না লকডাউনের এই বিপুল সময়টা সরকারী ও বেসরকারী কর্মীদের বিনাশ্রমে ঘরে বসিয়ে না রেখে যদি ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর কায়দায় ‘ডিজিটাল ইণ্ডিয়া’-র অসামাপ্ত কাজগুলো করিয়ে নিতে পারা যেত, তাহলে দেশ প্রকৃত অর্থেই লাভবান হত। ফেলে আসা কয়েকমাসে ভারতকে এভাবে সরকারী কর্মী ও আমলাদের পেছনে নন প্রডাকটিভ ওয়েজেসও গুনতে হতনা।