ড:পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়,কলকাতা ,২২.০৭.২০২০
আমাদের দেশে রঙ মাখা সং বেশি,নাগরিক কম।এবং যত দিন যাচ্ছে তত এর প্রাবল্য বাড়ছে।’নাগরিক’ শব্দটা আমরা অনেক জায়গাতে আলটপকা দুলকি চালে ব্যবহার করলেও এটা আসলে যে এক অতি দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ও অধিকার সচেতন স্ট্যাটাস,এই স্ট্যাটাস রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া যায় না,অর্জন করতে হয় কমিটমেন্ট দিয়ে,এ কথা আমরা ভুলে গেছি অথবা বলা ভালো,ভুলতে হয়েছে।নাগরিকত্বের মানেই হলো একা নয়, সমাজকে নিয়ে একসাথে পরিচ্ছন্ন ভাবে বাঁচার বোধ।এই বোধ তৈরি করতে গেলে প্রথমে বুঝতে হবে ইতিহাসের দলিল মুখস্ত করে নয়, বাস্তবিক ও ব্যবহারিক অর্থে নাগরিক অধিকার কি?
খুব সংক্ষেপে নাগরিক অধিকার হলো যোগ্যতার নিরিখে সমাজের কাছ থেকে প্রাপ্য স্বীকৃতি এবং সন্মান টুকু পাওয়া।অবশ্যই যোগ্যতার উপর নির্ভর করে এর মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন।
সামাজিক অধিকার অর্জনের পথ তত্ত্বগত ভাবে সোজাসাপটা মনে হলেও কার্যক্ষেত্রেএ পথ বেশ কঠিন।আমাদের মতো রাজনৈতিক কাঠামো ও মতাদর্শের দেশে ন্যূনতম প্রাপ্যটুকুও নিজে নিজে অর্জিত হয় না।তার জন্য চিৎকার করতে হয়।যৌক্তিক চাপ সৃষ্টি করতে হয় স্বীকৃতি দাতার উপর।নইলে জীবন কেটে যায়।কিছু মেলে না।
অর্জনের আরো একটি পথ আছে।সেই অর্জনে যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে না।শুধু শিরদাঁড়াটি সোজা থাকলে চলবে না। এ পথে কেবল মাত্র চোখ কান বুজে শাসকের শিবিরে তার ছাতার তলায় থাকতে হয়।শাসকের গাজীর গানে ,’আহা বেশ বেশ বেশ’! করে পোঁ ধরতে হয়।তাঁর আপাত মহান নগরকীর্তনের পিছন পিছন খঞ্জনি বাজাতে বাজাতে বা হাত তুলে নাচতে নাচতে চেতনা যা বিশ্বাস করে না তা বলতে বলতে চলতে হয়।শাসকের পরিবর্তনের সঙ্গে নিপুণ ভাবে শিবির পরিবর্তন করতে হয়।কম বেশি দেশের সব রাজ্যের ক্ষেত্রেই এই ফর্মুলা কার্যকরী।
আপনি প্রথম দলভুক্ত হলে প্ৰতি ইঞ্চি অর্জনের জন্য আপনাকে লড়াই করতে হবে ।দ্বিতীয় দলভুক্ত হলে মজ্জা হি মজ্জা।আপনার কোনো চাপ নেই।নামাবলীটি গায়ে চাপিয়ে পুজোআচ্চা করার অভিনয়টা করতে পারলেই হলো।
তারপর আপনি আকাম করুন,গাড়ি করুন,বাড়ি করুন,নাকে তেল দিয়ে ঘুমোন, যাকে ইচ্ছে অপমান করুন,যাকে ইচ্ছে তোল্লাই দিন,কোনো ক্ষতি নেই।
“রাজকাপুরের বিখ্যাত চলচিত্র মেরা নাম জোকার – আর আজকে আমরা সবাই যেন দেশের একেকটা জোকার “~সুমন মুন্সী ,সম্পাদক আইবিজি নিউজ
আমাদের দেশে সৎ নাগরিক হতে চাওয়া সংবেদনশীল মানুষেরা সব অর্থেই কোণঠাসা। একঘরে।কারণ তাঁরা সংখ্যায় কম।তাদের মাথা উঁচু।সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলার দম রাখেন।অন্ধ ভক্তের মতো, ভিখারির মতো স্বঘোষিত প্রভুদের দয়া ভিক্ষা করেন না।
আমাদের খাদ্যের অভাব,এবং শস্য ভান্ডারে খাদ্য পচে।আমাদের সুস্থ থেকে বাঁচার জন্য নির্মল পরিবেশ চাই এবং এর পিঠোপিঠি জনস্বার্থহীন শিল্পনীতি সেই নির্মল পরিবেশকে দূষণের হাত ধরে পাঠিয়ে দেয় নরকে।আমাদের শিক্ষার মানে উন্নয়ন চাই এবং সেখানে পিছনের দরজা দিয়ে চুপি চুপি রঙধারী কম যোগ্যতার মানুষেরা গদিতে বসে শিক্ষা অঙ্গনের দন্ডমুন্ডের কর্তা হয়ে ছড়ি ঘোরায়। আমাদের শ্রদ্ধা নেই।বিরোধিতা আছে।নীতিশিক্ষা ও মূল্যবোধ নেই অবক্ষয় আছে। অন্যকে বঞ্চিত করে নিজেকে স্ফীত করার বাসনা আছে।নিজের উঠানের নোংরাটা অন্যের উঠানে ফেলে দিয়ে পরিচ্ছন্ন সাজার উচ্চাশা আছে।অভাবী সেজে সরকারি অনুদান নেওয়ার শঠতা আছে।
আমি ভোট দিয়েছি।আমার কাজ শেষ।শাসক শাসক হয়েছেন তাঁর জীবনে আরো উঁচুতে ওঠার টার্গেট তখন থেকে শুরু।একমাত্র আমাদের এই উপ মহাদেশেই তথাকথিত দেশের কাজ করার জন্য ভোটে ঘোড়া কেনা বেচা হয়।এতটাই স্বার্থহীন দেশ সেবক দেশপ্রেমী আমরা।
আমরা লড়াই জানি।ঝগড়া জানি। সমাজবাদী সাম্রাজ্যবাদীকে গাল দেই।সাম্রাজ্যবাদী সমাজবাদীকে হ্যাটা করি।কিন্তু কাজ করি না।নাগরিক, স্তাবক, এবং শাসক তিনটি ভিন্ন জায়গায় থেকে তাদের অস্তিত্ব জানান দেন।বিশাল পরিখা কেটে তার উল্টো দিকে সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে শাসকের প্রাসাদ।এপারে শ্বাপদ সংকুল নৈরাজ্যের জঙ্গলে মুষ্টিমেয় নাগরিককুল।মাঝের পরিখায় রাজপ্রাসাদে যাবার নৌকার বৈঠা হাতে জামার রঙ সময়ে সময়ে বদলে যাওয়া মাঝিরা।এটিই নিয়ম ।বাকিটুকু ব্যতিক্রম।যতই যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর গণতন্ত্রের কথা বলিনা কেন আমরা।
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●
পলাশ_বন্দ্যোপাধ্যায়
২২.০৭.২০২০