এক যে ছিল দেশ যেখানে মুড়ি মিছরি এক দর – সাবধান সত্যি বলে আত্মসম্মান হারাবেন না
ছোট বেলায় এক পিসির কাছে গল্প শুনেছিলাম , আজ সেই গল্প টা শুনুন ।
একজন টাউট কিসিমের লোক এক গ্রামে বাস করতো। ছোটখাট মিথ্যা বলা, মানুষ ঠকানো আর মানুষের মধ্যে ঝগড়া লাগানো ছিল তার প্রিয় কাজ। যেহেতু বড় ধরনের অপকর্ম করতো না – তাই গ্রামবাসী তাকে সহ্যই করতো। কিন্তু এক সময় ওর উপদ্রপ এতো বেড়ে গেলো যে, গ্রামবাসীরা অতিষ্ঠ হয়ে তাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিলো।
টাউট আর কি করবে, গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা রাস্তার পাশে বসে ভাবতে লাগলো। এরই মধ্যে একজন সাধক তার দলবল নিয়ে সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। টাউট ভাবলো – ভালই হলো, সাধুর পিছনে হাটা শুরু করি। পরের গ্রামে গেলে নিশ্চয় আমাকে মানুষ সাধুই ভাববে।
দিন যায়, মাস যায় – টাউট সাধুর দলের সাথে হাটে আর হাটে।
এভাবে একসময় ওরা অচিন এক রাজ্যে চলে এলো। আস্তানা গেড়ে সাধু আর তার দলবল খাবারের আয়োজন শুরু করলো। সাধু নতুন শিষ্যকে নির্দেশ দিলো বাজারে যেতে। নতুন শিষ্য বাজার থেকে ফিরে মহা উল্লাসে জানালো – সে রান্নার জন্যে তেলের বদলে ঘি কিনে এনেছে। কারন এই রাজ্যে তেল আর ঘিয়ের দাম সমান। এমনকি মুড়ি আর মুড়কি, চিনি আর মিছরি সবই একই দামে বিক্রি হয়। এই দেশের রাজার নির্দেশে এই ভাবে বাজারে বেচাকেনা হয়।
শোনা মাত্রই সাধু তাঁর শিষ্যদের দ্রুত পাততাড়ি গুটাতে নির্দেশ দিলেন । সব শিষ্যই বিনা বাক্য ব্যয়ে নির্দেশ পালনে লেগে গেলেও নবদীক্ষিত শিষ্যটি রাজী হলো না। এই বিষয়ে সে সাধুর মতামত জানতে চাইলে – সাধু শুধু বললো – “যে দেশে মুড়ি আর মুড়কি এক দরে বিক্রি হয় – মানুষ সেই দেশে নিরাপদ নয়।”
সাধুসহ সবাই চলে গেলেও নবদীক্ষা প্রাপ্ত শিষ্যটি মনে আনন্দে লোকালয়ের দিকে চলে গেল।
এদিকে সেই দেশে এক চোর চুরি করতে গিয়ে বাড়ীর জানালা ভেঙ্গে মারাত্বক আহত হয়ে মৃত্যু শয্যায়। খবর গেল রাজ দরবারে – শুনে রাজা ভীষণ রেগে – নির্দেশ দিলেন চোরটিকে রাজ দরবারে হাজির করা হোক।
রাজা ভাবতেই পারছিলেন না – তার দেশে বিনা বিচারে একটা মানুষ মারা যাবে! যথারীতি রাজদরবারে আহত চোর হাজির। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তার দুরবস্থার জন্যে জানালা বানানো ছুতারকে সে দায়ী করলো।
সেই দেশের আইন অনুসারে হত্যা বা হত্যার চেষ্টার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। রাজা আগামী প্রত্যুষে সেই ছুতারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিলেন। পুরো রাজযন্ত্র সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে নেমে পড়লো।
একদল কর্মচারী গেল ফাঁসীর মঞ্চ বানাতে, আরেকদল গেল সেই ছুতারকে ধরতে। ছুতারকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো ফাঁসির মঞ্চ নির্মানস্থলে – কারন তার উচ্চতা অনুযায়ী ফাঁসীর কাঠামোটা বানাতে হবে। এইটাই নিয়ম – একজনকে একটা মঞ্চে ফাঁসী দেবার পর কাঠামোটি নদীতে ফেলে দিতে হয়।
যখন মাপ অনুসারের মঞ্চ বানানো হলো – তখন দেখা গেল ছুতার বেচারা হাউ মাউ করে কাঁদছে আর বলছে – “আমাকে ভুল করে ফাঁসী দেওয়া হচ্ছে, আমি অপরাধী না।”
কথাগুলো রাজার কানে গেল – রাজা আবার চিন্তিত হলেন। কারন তার রাজ্যে অন্যায় বিচার, ভাবাই যায় না! তাই ছুতারকে ডাকা হলো রাজদরবারে। ছুতার বললো – “জাঁহাপনা, আমার কি দোষ? আমি জীবনে অনেক জানালা বানিয়েছি, কিন্তু কোনো একটা জানালাও ভাঙ্গেনি। এটা ভেঙ্গেছে, কারন আমি যখন কাজ করছিলাম, তখন পাশের বাড়ীর সুন্দরী বৌয়ের দিকে চোখ চলে গিয়েছিলো।”
রাজা ভাবলেন – তাইতো, দোষী তাহলে পাশের বাড়ীর সুন্দরী বৌটা।
এবার রাজা বললেন – বৌটাকেই ফাঁসিতে ঝুলানো হোক।
ততক্ষনে গভীর রাত – রাজা মদিরারসের আবেশে ঝিমুচ্ছে আর ঠুমরী উপভোগ করছিলেন।
বৌ বললো রাজা মশায় আমি সুন্দরী নই , সেদিন লাল বেনারসি পরেছিলাম তাই সুন্দরী মনে হয়েছে । তাই জোলা দায়ী ।
তারপর ন্যায় বিচার বলে কথা – রাজার নির্দেষে জোলাকে ফাঁসীর জন্যে নিয়ে যাওয়া হলো। আসন্ন মৃত্যুর ভয়ে জোলা বাকরুদ্ধ – তাই তারপক্ষে আর কোনো বিতর্ক তৈরী করা সম্ভব হলো না।
কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। জোলা মহাশয় ছিলো বেশ লম্বা। যখন তাকে মঞ্চে দাঁড় করানো হলো – দেখা গেল তার গলা উঠে গেল আড়া কাঠের উপরে । কোনো ভাবেই তাকে ঝুলানো যাচ্ছে না। মহা ফ্যাসাদে পড়ে গেল রাজন্যবর্গ।
একজন ভয়ে ভয়ে রাজার কানের কাছে কথাটা বললো। রাজা শুনে মহারেগে গেল। বললো – “তোমরা সবাই অপদার্থ। সকাল হবার আগেই একজনকে ফাঁসী দিতেই হবে। যাও, একজন সুবিধামতো লোককে এনে ঝুলাও।”
রাজার আদেশে রাজকর্মীরা ছুটলো গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। অবশেষে পাওয়া গেল একজন। বেশ নাদুসনুদুস। সে যেন কি বলতে চাইছিলো – কিন্তু তার ভাষা বুঝলোনা কোনো রাজকর্মী। মনে হলো ভিন দেশী সে। তার ভাষা বুঝার মতো কাউকে পাওয়া গেল না – যারা কিছুটা বুঝতো – তারা ভয়ে সামনে এলো না। ভিন ভাষায় হৈ চৈ করতে করতে লোকটা ফাঁসীতে ঝুলে গেল|
দীর্ঘদিন পর সাধু তার দলবলসহ সেই রাস্তা দিয়ে ফিরে যাচ্ছিলো। কৌতুহল বসত দলবলের সঙ্গে সাধু থেমে তাঁর ফেলে যাওয়া শিষ্যের কথা জানতে চাইল, স্থানীয়দের কাছে। তাকে বলা হলো তার শিষ্যকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। সাধু বিস্তারিত জানতে না চেয়ে শুধু জিজ্ঞাসা করলো – “এখনও কি তোমাদের এখানে মুড়ি আর মুড়কি এক দরে বিক্রি হয়?”
পাঠকগণ,
শুনলাম নাকি চোপড়ার সেই নির্যাতিতার ভাই ও বাবা গেরেপ্তার হলেন। মেয়েটা নাকি নির্যাতিতা নয় ?
সুধী সাবধান , আমার শোনা গল্পটা কি চেনা লাগছে ?
গল্পের সেই টাউট কে যেকোনো সুযোগ সন্ধানী রাজনৈতিক দালাল কর্মী ,আর রাজাকে যেকোনো গড়পড়তা রাজনৈতিক নেতা ভাবুন আর নিজেকে ফ্রি ঘর ,ফ্রি চিকিৎসা ,ফ্রি খাবার খেয়ে হারাম হি আরাম হ্যায় ভাবা আম আদমি ভাবুন , তাহলে বুঝবেন কেন ঠাকুমার ঝুলির গল্পের বেড়াল কি বলে গেলো ।
কাট মানি চোর বা আমফান ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ করলে সেই টাউটের দশা না হয় অভিযোগকারীর ।
ফ্রি ফ্রি ফ্রি এই আনন্দে আত্মসম্মান হারাবেন না । সঠিক নির্বাচন করুন আর আত্মনির্ভর হয়ে দেশ কে এগিয়ে নিয়ে চলুন ।
শুধু শ্ৰীযুক্ত হলে চলবে না , সত্যিকারের শ্রী বৃদ্ধি হোক দেশের । আর সৎ কোনো যোগী গুরু পেলে, গুরুবানী শুনে আত্মোপলব্ধি করুন ।