প্রয়াত বাংলার প্রথম হিন্দী থিয়েটার “রঙ্গকর্মী”-র নাট্যব্যক্তিত্ব উষা গাঙ্গুলী
রাজকুমার দাস
বেশ কয়েকবার হিন্দী নাটক দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার।মাঝে মাঝে নানান অনুষ্ঠানে দেখা ও কথা দুই হয়েছে।ভালো মানুষ তো ছিল।আমাদের পাড়ায় ছোটবেলা তার রিহার্সাল রুমে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম।একদিন দেখতে পেয়ে কাছে এসে বলেছিল কাছে এসে দেখো।তখন নাটক কি বুঝতাম না।সবাই মহড়া কক্ষে চেঁচামেচি করতো ,সেটা মহড়া তাও জানতাম না।পড়ে একটু বড় হতো বুঝলাম,তারপর বহু নাটক থিয়েটারে গিয়ে দেখেছি।সেই মানুষটি আজ হঠাৎ মারা গেল ।(২৩শে এপ্রিল২০২০),যদিও জানতে পারলাম কিছুদিন আগেই তার ভাই মারা যায়।সেই শোক সামলে উঠতে তিনি পারেন নি।তাই এই হঠাৎ করে চলে যাওয়া।
ঊষা গাঙ্গুলি (জন্ম ২০শে আগস্ট ১৯৪৫) হলেন একজন ভারতীয় পরিচালক-অভিনেত্রী এবং সক্রিয় সমাজকর্মী, যিনি ১৯৭০ এবং ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের দশকে কলকাতা শহরে হিন্দি থিয়েটারের জন্যে পরিচিত। তিনি ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে রঙ্গকর্মী গ্রুপ থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন, যারা মহাভোজ, রুদালি, কোর্ট মার্শাল এবং অন্তর্যাত্রার মতো নাটকগুলো প্রস্তুত করেছিল।এই নাটক ছাড়াও পদাতিক-এর শ্যামানন্দ জালান (১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত), তিনি কলকাতার একমাত্র হিন্দি থিয়েটার পরিচালক যেখানে অনেকটা বাংলায় সংলাপ বলা চালু ছিল।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটি কলেজে একজন শিক্ষিকা হিসেবে ঊষা গাঙ্গুলি তার কর্মজীবন শুরু করেন, যেটা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত। ওই একই বছর তিনি সংগীত কলা মন্দিরের সঙ্গে অভিনয় জীবন শুরু করেন এবং তার প্রথম অভিনয় হল, মিট্টি কি গাড়ি (শূদ্রক লিখিত ‘মৃচ্ছকটিকম’ ভিত্তিক) (১৯৭০), যেখানে তিনি নটী বসন্তসেনার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। তিনি ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণ করা পর্যন্ত কলকাতার পাশাপাশি ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটিতে একজন হিন্দি লেকচারারের শিক্ষকতা চালিয়ে যান।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে তিনি রঙ্গকর্মী নামে এক থিয়েটার গ্রুপ গঠন করেন। প্রথম দিকে একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে তালিম নেওয়ার সময় এই গোষ্ঠী বাইরের পরিচালকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যেমন ‘মা’-এর পরিচালক অ্যানবেস, ইবসেন-এর এ ডল’স হাউস অনুসরণে তৃপ্তি মিত্র পরিচালিত ‘গুড়িয়া ঘর’; তিনি নিজে নাট্য পরিচালনার আগে পর্যন্ত রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং বিভাস চক্রবর্তির পাশাপাশি তৃপ্তি মিত্র এবং মৃণাল সেনের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
তিনি ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের দশকে তার পরিচালনর কাজ শুরু করেন এবং অল্পদিনের মধ্যেই তার কর্মচাঞ্চল্যের ধারা এবং নবীন প্রজন্মকে নিয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ ঐকতানে বড়ো ধরনের পরিবর্তন এনে শহরের হিন্দি থিয়েটারে একটা পুনরুত্থান ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার গুরুত্বপূর্ণ নাট্যকর্মগুলো হল: ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের মনু ভাণ্ডারি লিখিত উপন্যাস ভিত্তিক মহাভোজ (গ্রেট ফিস্ট), ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে রত্নাকর মতকারি কৃত লোককথা (ফোকটেল), ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে নাট্যকার মহেশ এলকুঞ্চওয়ার কৃত হোলি এবং ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে মহাশ্বেতা দেবী লিখিত গল্পে তার নিজস্ব নাট্যরূপ দেওয়া রুদালি, বের্টোল্ড ব্রেশট-এর মাদার কারেজ অনুসরণে হিম্মত মাঈ এবং নাট্যকার স্বদেশ দীপক লিখিত বিখ্যাত কোর্ট মার্শাল।[৯] কাশিনাথ সিং-এর উচ্চাঙ্গের লেখা কাশি কা আসি থেকে কানে কৌন কুমতি লাগি-এর ওপর ভিত্তি করে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাশিনামা নাটকের নাট্যরূপ দেন এবং নিজে একটা সম্পূর্ণ নাটক লেখেন খোজ।
ও হেনরি লিখিত দ্য গিফট অফ দ্য ম্যাজাই অবলম্বনে ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত রেনকোট হিন্দি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের ওপরও ঊষা গাঙ্গুলি কাজ করেছিলেন।
গৌতম ঘোষের ছবিতেও অভিনয় করেন।তার নাট্যদলে অভিনয় শুরু করেন বহু বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত অভিনয় শিল্পী।রাজেশ শর্মা উল্লেখযোগ্য।
তার উল্লেখযোগ্য নাটকের প্রোডাকশন গুলি হলো
মহাভোজ(১৯৮৪)
লোক কথা (১৯৮৭)
হোলি(১৯৮৯)
কোর্ট মার্শাল (১৯৯১)
রুদালি(১৯৯২)
হিম্মত মাই(১৯৯৮)
মুক্তি(১৯৯৯)প্রথম বাংলা নাটক।
শোভাযাত্রা(২০০০)
কাশিনামা(২০০৩)
চন্ডালিকা(২০০৩)
সারহাদ পার মানটো
মানসী(বাংলা)প্রমুখ।
তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।