এক ডাক্তার ও পাল্টে যাওয়া অমানবিক দুনিয়ায় মানবিকতার ধারক
রাজ্যপালের থেকে অনন্য সম্মান লাভ করলেন ডাক্তার পার্থসারথী মুখার্জী ।
শুরুতেই বলে দেয়া ভালো পার্থসারথী মুখার্জী একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার এবং নানা পুরস্কার পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও পাবেন আশা রাখি , কিন্তু এ লেখা ডাক্তার মুখার্জীর জন্য নয় মানুষ পার্থসারথী কে নিয়ে । আজ যখন ডাক্তার এক্সেলেন্স পুরস্কার নিচ্ছেন ডক্টরদের মধ্যে থেকে রাজ্যপালের হাত থেকে নিশ্চয় তাঁর পরিবার ও পরিচিতরা আনন্দিত এবং গর্বিত ,এবং তা হওয়া স্বাভাবিক । আমি বলি আজ আসুন দেখা যাক মানুষ পার্থসারথীকে ।
অন্যের কথা নয় আমি আমার নিজের কথা বলবো যাতে কোনো প্রতিবাদ আসলে সত্যের সামনে থেকে জবাব দিতে পারি । গত ২৯ অগাস্ট ২০১৯ আমার বাবার অপারেশন হয় বাগবাজারের এক নামি বেসরকারি নার্সিংহোমে এবং অপারেশন করেন একজন এসিট্যান্ট প্রফেসর পদমর্যাদার ডাক্তার আপাত সাধারণ প্রোস্টেট অপারেশন । কিন্তু দুর্ভাগ্য অপারেশন ভুল হলো এবং পোস্ট টিইউআরপি ইনফেকশন হলো বাবার । সেই ডাক্তার কোনো দায় বা দায়িত্ব নিলেন না বললেন বয়েস হয়েছে কিছু করার নেই ।
আরো এক বার সেই নার্সিংহোমে ভর্তি করা হলো কিন্তু ডাক্তার এলেন না । বাবা ক্রমশ মৃত্যুর সাথে লড়তে শুরু করলেন , চলাফেরা বন্ধ হলো শুরু হলো বেডসোরের যন্ত্রনা । এমন সময় হেরে যাওয়া কেস নিলেন ডাক্তার পার্থসারথী মুখার্জী ও চারিংক্রস নরসিংহোমের রাহুল জি । নিশ্চিত মৃত্যু এক সপ্তাহের মধ্যে সেখান থেকে লড়াই শুরু করলেন ডাক্তার মুখার্জী ।
উত্তম কুমারের অগ্নিস্বরের সেই চরিত্র আর ছায়াছবির ডাক্তার যেন রক্ত মাংসে নিজে হাজির । বাবা একটু সুস্থ হলেন বাড়ি ফিরলেন আরো কিছু দিন আমার মাথা আলো করে বাঁচলেন । যদিও সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার কথা নয়, তবে চলে যাওয়ার আগে একটু হলেও জেনে গেলেন ডাক্তার ই ভগবান হয় ।
নিজের মা ও বাচ্ছা হাসপাতাল এ ভর্তি মরণ ডেঙ্গু ও নিমুনিয়া নিয়ে আর মাঝ রাতে ডাক্তার ছুটছেন রোগী কে দেখতে , এই আবেগ আজ নিজের লোকের কাছেও মেলেনা, কিন্তু মানুষ পার্থসারথী দেখিয়ে দিলেন স্বার্থকনামা কাকে বলে । পরের দিন বাবার কাছে গিয়ে জানলাম মাঝরাতে ডাক্তার এসেছিলেন ,চোখে জল এসে গেলো । কখন ডাক্তার বাবু থেকে “পার্থদা” হয়ে গেলেন জানি না ।
আজ কেউ যদি বিরুদ্ধ মত প্রকাশ করেন তবে বলবো মানুষ মাত্রই ভুল হয়, কিন্তু মানবিক ব্যাবহারই মানুষের শেষ কথা হয় উচিত । আর ডক্টর মুখার্জী সেই বিরল মানবিক মুখ ।
আজ ডাক্তার এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড তার পেশাকে সম্মানিত করলো, কিন্তু তিনি ইতিমধ্যেই তার রোগীর পরিবাবের আপনজন কাছের মানুষ । রাজ্যপাল মহামান্য ধানকার সাহেবের উপস্থিতিতে এই অনন্য সম্মান, শুধুমাত্র একজন ডক্টরের স্বীকৃতি নয়, এ এক হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির ও উত্থান কাহিনী ও বটে ।
আপনি আরো এগিয়ে যান ঈশ্বর আপনার জীবন কে সকল সম্মানে ও আনন্দে ভরিয়ে তুলুন । আপনার পরিবার ও মা কে আন্তরিক ধন্যবাদ আপনার শক্তি ও প্রেরণা হয়ে ওঠার জন্য ।
Photo Md. Khairul Amin