কোলকাতায় বসবাসকারী বাবা মা’র শারীরিক অসুস্থতার কথা শুনলে বিদেশে থাকা সন্তানরা বেশি আসেন না
এম রাজশেখর (১৯ নভেম্বর ‘১৯):- ‘আদিত্য বিড়লা ক্যাপিটাল লিমিটেড’-এর নিজস্ব সংস্থা ‘আদিত্য বিড়লা হেল্থ ইন্সিওরেন্স কোম্পানী লিমিটেড’ সম্প্রতি ভারতে এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, “দেশের অন্যান্য প্রদেশে স্থায়ী বাসিন্দা রূপী বসবাসকারী বাবা মা’রা অসুস্থ হয়েছে জানতে পেরে বিদেশ থেকে যেখানে ৪৭ শতাংশ সন্তান তাদের অসুস্থ বাবা মা’কে দেখতে দেশে চলে আসেন, সেখানে কোলকাতার সন্তানরা আসেন মাত্র ২৬ শতাংশ।”
সম্প্রতি এক লিখিত প্রেস বিবৃতি জারি করে এই তথ্য পরিবেশন করেছেন ‘আদিত্য বিড়লা হেল্থ ইন্সিওরেন্স কোম্পানী লিমিটেড’ (এবিএইচআইসিএল)-এর মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মায়াঙ্ক বাথওয়াল।
যদিও সমীক্ষায় এটাও উঠে এসেছে, কোলকাতায় বসবাসকারী বাবা মা’র শরীর খারাপ নিয়ে যেখানে বিদেশে থাকা ৯৯ শতাংশ সন্তান দুঃশ্চিন্তায় থাকেন, সেখানে জাতীয় গড় ৮৬ শতাংশ।
এর পাশাপাশি বিদেশে থাকা কোলকাতার তিন চতুর্থাংশ অর্থাৎ ৭৪ শতাংশ সন্তান যেখানে তাদের কোলকাতায় বসবাসকারী বাবা মা’কে প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে চান সেখানে জাতীয় গড় ৪০ শতাংশ।
কোলকাতায় বসবাসরত ৬২ শতাংশ বাবা মা জানিয়েছেন, তাঁদের বিদেশে থাকা সন্তানরা সপ্তাহে অন্তত একবার তাঁদের শরীর সম্পর্কে খোঁজ নেন, যেখানে জাতীয় গড় ৫০ শতাংশ।
কিন্তু মজার বিষয়, যে সমস্ত অভিভাবকদের সন্তানরা প্রবাসী, কোলকাতায় বসবাসকারী এমন বাবা মায়েরা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে শতকরা ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয়দের সহযোগিতা পেলেও দেশের অন্যান্য প্রদেশের মানুষ এই ধরণের সহায়তা পান মাত্র ৩০ শতাংশ।
ভারতের সব কটা মেট্রো শহর এবং টায়ার ১ শহর সমেত মোট ১০ টা শহর নিয়ে করা এই সমীক্ষা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ।
এই সমীক্ষায় একদিকে দেখা যাচ্ছে কোলকাতায় বসবাসকারী অভিভাবকেরা বলছেন তাঁদের প্রবাসী সন্তানরা তাঁদের সপ্তাহে সপ্তাহে খোঁজ খবর নেন, অসুস্থ হলে বিদেশে বসেও ছটফট করেন প্রয়োজনে কোলকাতায় বসবাসকারী মা বাবাকেও বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে চান, অথচ বাবা মা অসুস্থ হলে খুব কম সন্তানই (২৬ শতাংশ) তাঁদের বাবা মাদের দেখতে আসেন।
এই সমীক্ষা যদি সঠিক হয়ে থাকে তবে নিঃসেন্দহে এই ফলাফল নীরবে অনেক কিছুই বলছে।
পশ্চিমবঙ্গের সব বাঙালী পরিবার একসময় যখন তাদের পারিবারিক বন্ধনকেই সর্বাগ্রে স্থান দিত, তবে কি সেই বন্ধন এখন ভোগবাদী সমাজের মায়াজালে বাঁধা পড়ে এখন যথেষ্ট আলগা হয়ে গেছে; না কি সন্তানদের চোখে বাবা মা’য়েরা তাঁদের হৃত সম্মান হারাচ্ছেন!
নইলে বাবা মা’দের শারীরিক অসুস্থতার কথা শুনেও কেনো সন্তানদের দেশে আসার সংখ্যা জাতীয় গড়ের তুলনায় কম ?
যদি ধরেই নেওয়া যায় বিদেশ থেকে দেশে আসার এবং পুনরায় বিদেশে ফিরে যাওয়ার যে খরচ সেটাই বাবা মা’কে দেখতে আসার প্রধান অন্তরায়, তাহলে প্রশ্ন সারা দেশে যেখানে ৪৭ শতাংশ হারে সন্তানরা জরুরী ভিত্তিতে দেশে ফিরতে পারছেন সেখানে বাঙালীরা কেনো মাত্র ২৬ শতাংশ!
প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক, বাইরের লোকেদের কাছে যাতে নিজেদের সন্তানদের বদনাম না হয়, সেইজন্যই কী বাঙালী অভিভাবকগণ বাইরের লোকের সামনে ইচ্ছাকৃতভাবেই নিজেদের সন্তানদের ভালো বলছেন।
কথায় বলে ‘ফল দেখে বৃক্ষের পরিচয় বোঝা যায়’, যেখানে ফলই এমন তিক্ত কষা সেখানে বাঙালী বাবা মা’দের দেওয়া তথ্য কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিঃসেন্দহে প্রশ্নযুক্ত।