বাংলার সংস্কৃতি আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের মানবিক মুখের যুগলবন্দী – ডাক্তার পার্থসারথী মুখার্জী “A Golden Heart in true sense”
আমি ভগবান কে দেখিনি, দেখেছি ডাক্তার পার্থসারথী মুখার্জী কে আর জেনেছি কেন ভালো ডাক্তার হওয়ার অনেক আগে ভালো মানুষ হওয়া উচিত । এক আশ্চর্য ঘটনার মাধ্যমে পার্থদার সাথে প্রথম দেখা প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে ,সেই দিনই প্রথম দাদাগিরি দেখলাম । দাদা বললাম কারণ , এ সাধারণ বাঙালী সম্মানসূচক সম্ভাষণ নয়, ক্রিকেট মাঠ ছাড়াও দাদাগিরি বাঙালী দেখতে পারে অন্য মাঠে । আর তা তাঁর জীবন দায়ী কাজের মাধ্যমে । অনায়াসে জটিল কিডনি রোগের ব্যাখ্যা করছেন সাধারণ মানুষের বোঝার মতো করে, পরক্ষনেই সহকর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন ক্রিটিকাল রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে ।
বিলেত ফেরত অনেক ডাক্তার আছেন এবং ধন্বন্তরি চিকিৎসাও করেন, কিন্তু পার্থসারথী বাবু শুধু ওষুধে নয় তাঁর মানবিক গুণে রোগীর মনের যাতনাকে সযতনে দূর করে দেন । রাত সাড়ে এগারোটায় ছুটে এলেন বাবা কে দেখতে, কেউ ডাকেনি, শুধু রিপোর্ট শুনেই হাজির কারণ জানেন এক মুহূর্তের দেরিও যে বাবা জীবন কেড়ে নেবে যেকোনো সময় । কোনো ভিআইপি নয়, এক অতি সাধারণ মানুষের বাবা, আর তার জন্য মাঝ রাতে ছুটছেন ডাক্তার বিরল না হলেও সাহজলভ্য নয় আজকের দিনে ।
কোথা থেকে পেলেন এই অমানবিক সমাজে, এমন মানবিক গুণ । প্রণাম করি তাঁর পরিবারের গুরুজনদের ও শিক্ষকদেরও , স্বার্থক আপনাদের বড় করে তোলা মানুষের মতো মানুষকে ।
প্রস্তাবনায় যে কথা বললাম এবার সেই কথার প্রমান দিতে কিছু পরিচয় দেয়া যাক ।
UK থেকে MRCP ,FRCP ,USA থেকে FACP ,FASN , ক্রিটিকাল কেয়ার ফিজিসিয়ান ও পৃথিবী খ্যাত নেফ্রোলজিস্ট আর কলকাতার বিখ্যাত হাসপাতাল গুলির অন্যতম ভরসা ডক্টর মুখার্জী । কিন্তু এতো ব্যস্ততা সত্ত্বেও কলকাতার সাংস্কৃতিক জগতের সাথে নিবিড় যোগাযোগ তা সে ICCR ,Calcutta Heritage Collective ,রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি বা সুতানুটী পরিষদের কাজেই হোক, তাঁকে পাবেন সদা হাস্য মুখে ।
আসলে বাঙালির ফিকে হয়ে আসা সংস্কৃতির আলো কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাটা আন্তরিক । উচ্চ শিক্ষা অনেক সময় বিনয়ী হতে ভুলিয়ে দেয় অথচ প্রকৃত শিক্ষা বিনয়ী হতে শেখায়, তার উদাহরণ ডাক্তার মুখার্জী নিজে ।
উত্তর কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে যদি পুজোর সময় যান আর সবচেয়ে পুরোনো বিখ্যাত বনেদিবাড়ির পুজো ঘুরে দেখেন, তবে অবশ্যই নজরে আসবে স্টেথিস্কোপের সাথে মায়ের পুজোর কাজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন ডাক্তার বাবু । একজন নিষ্ঠাবান বাঙালী হিসাবে পুজোর কয়দিন তাঁর লড়াই হলো বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ।
আমার বাবা বয়সজনিত কারণে প্রস্টেট অপারেশন করেন শহরের এক নামি প্রতিষ্ঠানে, কিন্তু দুর্ভাগ্য পোস্ট অপারেশন ইনফেকশন এ মৃত্যুর সাথে লড়ছেন গত একমাস । হঠাৎ ডাক্তার মুখার্জীর সাথে ফোনে কথা বললাম, হাজার ব্যাস্ততার মধ্যে পরের দিন ই সময় দিলেন । তার পর দেখলাম যমে মানুষে টানাটানি কাকে বলে ।
আমি নিজে ওষুধ আবিষ্কারের রিসার্চ ল্যাবের সাথে দীর্ঘ ২০ বছর প্রায় জড়িত, বুঝেছিলাম বাবা খুব বেশি হলে কয়েক ঘন্টা কিন্তু আজ মানুষটি উঠে বসেছেন খুব দুর্বল কিন্তু খেতে পারছেন, আর তা সম্ভব হয়েছে ডাক্তার মুখার্জীর অমানুষিক পরিশ্রমে আর চ্যারিং ক্রস প্রতিষ্ঠানের সকলের চেষ্টায় । যদিও সম্পূর্ণ সুস্থ হতে ভগবানের আশীর্বাদ ছাড়া কোনো রাস্তা নেই ,তবু বলি, বাবা আমাকে অনুরোধ করেছেন এই দেবতুল্য ডাক্তারের কথা যেন আমি লিখি ।
পরিশেষে বলি মেডিক্যাল নিয়ে যারা পড়ছেন একবার হলেও এই রকম ডাক্তারের সাথে পরিচিত হবেন, যাকে, দেখলেই নিজের ভাই বলে মনে হবে, কিন্তু চোখ বন্ধ করে অর্জুনের মতো এই পার্থসারথী কে ভরসা করতে পারবেন ।
রোগীর পরিণতি ঈশ্বরের হাতে কিন্তু এইটুকু শান্তি নিয়ে সকলে ফিরছি যে আমি নিজে ডাক্তার হলেও বাবার জন্য এর থেকে ভালো কিছু করতে পারতাম না ।
পরিশেষে জানাই আমার বিনম্র অনুরোধ ডাক্তার মুখার্জী কে এই যে , বেশি করে অসহায়দের পাশে থাকুন আর আরো সুন্দর কাজ করে কলকাতা তথা বাংলার বিধান রায় ,নীলরতন সরকার সহ সকল পূর্বসূরিদের পতাকা যোগ্য হাতে নিয়ে চলুন।