মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ
By PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০৮ আগস্ট, ২০১৯
আমার প্রিয় দেশবাসীগণ,
এক রাষ্ট্র হিসাবে, এক পরিবারভুক্ত বলে আপনারা, আমরা, গোটা দেশ এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমন এক ব্যবস্থা, যে কারণে জম্মু-কাশ্মীর আর লাদাখে আমাদের ভাইবোনেরা অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকতো, যা তাঁদের বিকাশে বিরাট বাধা ছিল, তা এখন দূর হয়ে গেছে।
যা সর্দার প্যাটেলের স্বপ্ন ছিল, যা বাবা সাহেব আম্বেদকরের ছিল, ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জির ছিল, অটলজী আর কোটি কোটি দেশভক্তের ছিল, আজ তা সম্পূর্ণ হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর আর লাদাখে এক নতুন যুগের সূত্রপাত হয়েছে।
এখন দেশের সব নাগরিকের অধিকারও সমান হয়েছে, দায়িত্বও সমান হয়েছে। আমি জম্মু-কাশ্মীরের জনগণকে, লাদাখের জনগণকে আর প্রত্যেক দেশবাসীকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
সমাজ জীবনের কিছু কথা সময়ের সঙ্গে এমনভাবে মিলে-মিশে যায় যে অনেক সময় সেই বিষয়গুলি স্থায়ী বলে মেনে নিতে হয়। এমন ভাবনা এসে যায় যে, কিছুই বদলাবে না, এমনই চলতে থাকবে। ৩৭০ ধারা নিয়েও এমনই ভাবনা ছিল। এর ফলে, জম্মু-কাশ্মীর আর লাদাখে আমাদের ভাইবোনেদের, আমাদের সন্তানদের যে ক্ষতি হচ্ছিল, সেগুলি নিয়ে আলোচনাই হতো না। সমস্যার বিষয় হল, আপনি যদি কারও সঙ্গে আলোচনা করেন, তো কেউ এটা বলতে পারবেন না যে ৩৭০ ধারায় জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকদের জীবনে কি উপকার হয়েছে।
ভাই ও বোনেরা,
৩৭০ আর ৩৫-এ ধারা, জম্মু-কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্নতাবাদ-সন্ত্রাসবাদ-পরিবারতন্ত্র আর ব্যবস্থাতে বড় আকারে প্রভাব ফেলে এমন দুর্নীতি ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। এই দুটি ধারাকে দেশের বিরুদ্ধে, কিছু মানুষের ভাবনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য একটি হাতিয়ার হিসাবে পাকিস্তান ব্যবহার করছিল।
এই কারণে গত তিন দশকে আনুমানিক, ৪২ হাজার নির্দোষ মানুষকে তাদের প্রাণ দিতে হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীর আর লাদাখের বিকাশ সেই গতিতে হতে পারেনি, যা তাদের অধিকার ছিল। এখন ব্যবস্থায় এই খামতি দূর হওয়ায় জম্মু-কাশ্মীর আর লাদাখের মানুষের বর্তমান অবস্থা ভাল হবে, তাঁদের ভবিষ্যতও সুরক্ষিত থাকবে।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশে যে কোনও সরকারই হোক, সে সংসদে আইন বানিয়ে দেশের ভালোর জন্য কাজ করে থাকে। যে কোনো দলেরই সরকার হোক, যে কোনও জোটেরই সরকার হোক, এই কাজ নিরন্তর চলতে থাকে। আইন তৈরির সময় প্রচুর তর্ক হতে থাকে, চিন্তা ও মননশীলতা চলতে থাকে, তার প্রয়োজনীয়তা, তার প্রভাব নিয়ে গুরুতর যুক্তির অবতারণা হয়। এই প্রক্রিয়া পার হয়ে যে আইন তৈরি হয়, তা গোটা দেশের মানুষের উপকারই করে। কিন্তু কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না যে, সংসদ এত বেশী সংখ্যায় আইন বানায়, কিন্তু দেশের একটি অংশে তা কার্যকর হতেই পারে না।
এমনকি, আগের যে সরকারগুলি, একটি আইন তৈরি করে প্রশংসা পেতো, তাঁরাও এই দাবি করতে পারবে না যে, তাঁদের বানানো আইন জম্মু-কাশ্মীরেও কার্যকর হবে।
যে আইন দেশের সমগ্র জনগণের জন্য বানানো হয়, তার লাভ থেকে, জম্মু-কাশ্মীরের দেড় কোটিরও বেশি মানুষ বঞ্চিত থেকে যেতেন। ভাবুন তো, দেশের অন্য রাজ্যে শিশুদের শিক্ষার অধিকার আছে, কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরের বাচ্চারা তার থেকে বঞ্চিত ছিল।
দেশের অন্যান্য রাজ্যে কন্যা-সন্তানরা যে সব অধিকার পায়, সেই সব অধিকার জম্মু-কাশ্মীরের কন্যারা পেতেন না। দেশের অন্য রাজ্যগুলিতে সাফাই কর্মীদের জন্য সাফাই কর্মচারী আইন চালু আছে। কিন্তু, জম্মু-কাশ্মীরের সাফাই কর্মচারীরা তার থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
দেশের অন্য রাজ্যে দলিতদের উপর অত্যাচার রুখতে কঠোর আইন কার্যকর আছে, কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে এমন ছিল না। দেশের অন্য রাজ্যে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য মাইনোরিটি অ্যাক্ট কার্যকর আছে, কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে এমন ছিল না। দেশের অন্য রাজ্যগুলিতে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য, ন্যুনতম মজুরি আইন (Minimum Wages Act) চালু আছে, কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে কর্মরত শ্রমিকরা এটা শুধু কাগজে কলমেই পেতেন।
দেশের অন্যান্য রাজ্যে ভোটে লড়ার সময় তফশিলি উপজাতির ভাই-বোনেরা সংরক্ষণের সুবিধা পেতেন, কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে এমনটা ছিল না।
বন্ধুগণ,
এখন ৩৭০ আর ৩৫-এ ধারা আর ইতিহাসের বিষয় হয়ে যাওয়ার পর, এগুলির নেতিবাচক প্রভাব থেকে জম্মু-কাশ্মীর দ্রুত বেরিয়ে আসবে, এটা আমার নিশ্চিত বিশ্বাস।
ভাই ও বোনেরা,
নতুন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের সেটা অগ্রাধিকার থাকবে যে, রাজ্যের কর্মচারীরা, জম্মু-কাশ্মীরের পুলিশরা, অন্য কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের কর্মচারী আর সেখানকার পুলিশের সমান সুবিধা পাবেন। এখন কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিতে, অনেক এমন সুবিধা আছে, যেমন এলটিসি, হাউজ রেন্ট এলাউন্স, শিশুদের শিক্ষার জন্য এডুকেশন অ্যালাউন্স, স্বাস্থ্য প্রকল্পের মতো অনেক সুবিধা দেওয়া হয়, যার অধিকাংশই জম্মু-কাশ্মীরের কর্মচারীরা পান না। এমন সুবিধাগুলিকে পর্যালোচনা করিয়ে, দ্রুত জম্মু-কাশ্মীরের কর্মচারীদের আর সেখানকার পুলিশদের এই সুবিধাগুলি দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।
বন্ধুগণ, আর রাজ্যের খালি পদ পূরণের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তাতে স্থানীয় তরুণরা রোজগার করার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন। সেই সঙ্গে, কেন্দ্রীয় সরকারের পাবলিক সেক্টর ইউনিটগুলিতে আর প্রাইভেট সেক্টরের বড় কোম্পানিগুলিকে রোজগারের নতুন সুযোগ করে দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হবে।
এছাড়া, সেনা ও আধাসেনা বাহিনী দ্বারা স্থানীয় যুবকদের ভর্তির জন্য র্যালির আয়োজন করা হবে। সরকারের প্রধানমন্ত্রী স্কলারশিপ যোজনাকে প্রসারিত করা হবে, যাতে আরও বেশি বেশি ছাত্রছাত্রী এর থেকে লাভ পেতে পারেন। জম্মু-কাশ্মীরে রাজস্ব ঘাটতি অনেক বেশি। কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চিত করবে, কিভাবে এর প্রভাব কম করা যায়।
ভাই ও বোনেরা,
কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ ধারা বাতিলের সঙ্গে সঙ্গেই এখনও কিছু সময়ের জন্য জম্মু-কাশ্মীরে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন বজায় রাখার সিদ্ধান্ত অনেক ভেবেচিন্তেই নিয়েছে। এর কারণ জানাটাও আপনাদের দরকার। যখন সেখানে গভর্নরের শাসন ছিল, জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসন, সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই কারণে গত কয়েক মাসে ওখানে সুপ্রশাসন গুড গভর্ন্যান্স আর বিকাশ বা ডেভেলপমেন্টের ভাল প্রভাব মাটির কাছাকাছি স্তরে দেখা যাচ্ছে। যে সব প্রকল্প আগে শুধুই কাগজেই রয়ে গিয়েছে, এখন সেগুলিকে কার্যকর করা যাচ্ছে। দশকের পর দশক আটকে থাকা প্রকল্পে গতি এসেছে। আমরা জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনে এক নতুন কর্মসংস্কৃতি ও পারদর্শিতা আনার চেষ্টা করেছি। তারই ফলাফল হ’ল – আইআইটি, আইআইএম, এইমস্, যাবতীয় সেচ প্রকল্প হোক, বিদ্যুৎ প্রকল্প হোক, অথবা অ্যান্টি কোরাপশন ব্যুরো এগুলির কাজে গতি বেড়েছে। এসব ছাড়া এখানে কানেক্টিভিটির সঙ্গে যুক্ত প্রকল্পই হোক, সড়ক বা নতুন রেল লাইনের কাজই হোক, এয়ারপোর্টের আধুনিকীকরণই হোক, সমস্ত কাজই দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
আমাদের দেশের গণতন্ত্র এতটাই শক্তিশালী। কিন্তু আপনারা এটা জেনে চমকে যাবেন যে, জম্মু-কাশ্মীর দশকের পর দশক ধরে, হাজার হাজার এমন ভাই-বোনেরা বসবাস করেন, যাঁদের লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার ছিল, কিন্তু তাঁরা বিধানসভা আর স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন না। তাঁরা হলেন, যাঁরা ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছিলেন। এদের প্রতি এই অন্যায় কি এভাবেই চলতে থাকবে।
বন্ধুগণ,
জম্মু-কাশ্মীরে আমাদের ভাইবোনেদের আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আরও স্পষ্ট করতে চাই। আপনাদের জনপ্রতিনিধি আপনাদের দ্বারাই নির্বাচিত হবেন, আপনাদের মধ্যে থেকেই আসবেন। যেভাবে আগে বিধায়ক হতেন, তেমনি বিধায়ক ভবিষ্যতেও হবেন। যেমন আগে মন্ত্রী পরিষদ হতো, তেমনই ভবিষ্যতেও হবে। আগে যেমন আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী হতেন, তেমনই ভবিষ্যতেও আপনাদের মুখ্যমন্ত্রী হবেন।
বন্ধুগণ,
আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে এই নতুন ব্যবস্থার দ্বারা আমরা সবাই মিলে সন্ত্রাসবাদ – বিচ্ছিন্নতাবাদ থেকে জম্মু-কাশ্মীরকে মুক্ত করতে পারব। যখন এই ভূস্বর্গ, আমাদের জম্মু-কাশ্মীর আরেকবার উন্নয়নের নতুন নতুন উচ্চতা অতিক্রম করে গোটা বিশ্বকে আকর্ষণ করতে শুরু করবে, নাগরিকদের জীবনে সহজ জীবনযাপনের হার বৃদ্ধি পাবে, নাগরিকদের যে অধিকার পাওয়া উচিত, তা পেতে কোনও অসুবিধা হবে না। শাসন প্রশাসনের সমস্ত ব্যবস্থা জনহিতকর কাজগুলিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেবে। তাহলে আমার মনে হয় না যে, কেন্দ্রশাসিত প্রদেশের ব্যবস্থা দীর্ঘকাল বজায় রাখার প্রয়োজন হবে।
ভাই ও বোনেরা, আমরা সবাই চাই যে, আগামী দিনে জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচন হোক, নতুন সরকার হোক, মুখ্যমন্ত্রী হোন। আমি জম্মু-কাশ্মীরের জনগণকে ভরসা দিচ্ছি যে, আপনারা অত্যন্ত সততার সঙ্গে, সম্পূর্ণ স্বচ্ছ পরিবেশে নিজস্ব প্রতিনিধি নির্বাচন করা সুযোগ পাবেন।
যেমন বিগত দিনগুলিতে পঞ্চায়েত নির্বাচন স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করানো হয়েছে, তেমনভাবেই জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভারও নির্বাচন হবে। আমি রাজ্যের রাজ্যপালকে এটাও অনুরোধ করবো যে, ব্লক ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল গঠনের কাজ, যা বিগত দুই-তিন দশক ধরে স্থগিত রয়েছে, সেগুলি সম্পূর্ণ করার কাজও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করা হোক।
বন্ধুগণ,
এটা আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতা যে, ৪-৫ মাস আগে জম্মু-কাশ্মীর আর লাদাখের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তাঁরা খুব ভাল কাজ করছেন।কয়েক মাস আগে আমি যখন শ্রীনগর গিয়েছিলাম, তখন সেখানে আমার তাদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল। যখন তাঁরা দিল্লিতে এসেছিলেন, তখন আমার ঘরে আমি তাদের সঙ্গে অনেক সময় নিয়ে কথা বলেছিলাম। পঞ্চায়েতের এই বন্ধুদের জন্যই জম্মু-কাশ্মীরে গত দিনগুলিতে গ্রামস্তরে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে কাজ হয়েছে। প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার কাজ হোক বা রাজ্যকে উন্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম বিহীন করে তোলা, এতে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের অনেক বড় ভূমিকা ছিল।
আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে এখন ৩৭০ ধারা অপসারণের পর, যখন এই পঞ্চায়েত সদস্যরা নতুন ব্যবস্থায় কাজ করার সুযোগ পাবেন, তাঁরা দারুণ কাজ করবেন। আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে, জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ বিচ্ছিন্নতাবাদকে পরাস্ত করে নতুন আশা নিয়ে যাবেন। আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ সুপ্রশাসন এবং স্বচ্ছ শাসনের আবহে নতুন উৎসাহ নিয়ে নিজেদের লক্ষ্যগুলি অর্জন করবেন।
বন্ধুগণ,
কয়েক দশকের পরিবারতন্ত্র জম্মু-কাশ্মীরে আমার তরুণদের নেতৃত্বের সুযোগই দেয়নি। এখন আমার এই তরুণরা জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবেন আর নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। আমি জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের তরুণদের, সেখানকার ভাই-বোনেদের বিশেষ অনুরোধ জানাবো যে, নিজেদের এলাকার বিকাশের নেতৃত্ব নিজেরাই দিন।
বন্ধুগণ,
জম্মু কাশ্মীর এবং লাদাখ বিশ্বের সর্ববৃহৎ পর্যটন গন্তব্য হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। এজন্য যে পরিবেশ দরকার, শাসন প্রশাসনে যে পরিবর্তন চাই, তা করা হচ্ছে কিন্তু আমার এতে প্রত্যেক দেশবাসীর সঙ্গ চাই। একটা সময় ছিল, যখন বলিউডের ফিল্মের শুটিংয়ের জন্য কাশ্মীরকে পছন্দ করা হ’ত। সেই সময় এমন সিনেমা কমই তৈরি হয়েছে, যার শুটিং কাশ্মীরে হয়নি। এখন জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, শুধু দেশ নয়, সারা পৃথিবীর লোকেরাই এখানে ফিল্মের শুটিং করতে আসবেন। প্রত্যেক ফিল্ম তার সঙ্গেই কাশ্মীরের জনগণের জন্য কর্মসংস্থানের অনেক সুযোগও নিয়ে আসবে।
আমি হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, তেলুগু এবং তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এবং এর সঙ্গে যুক্ত সবাইকে অনুরোধ করবো, জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখে বিনিয়োগ সম্পর্কে, ফিল্মের শুটিং থেকে শুরু করে প্রেক্ষাগৃহ এবং অন্যান্য পরিকাঠামো স্থাপন সম্পর্কে অবশ্যই ভাববেন।
যাঁরা প্রযুক্তি বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁরা প্রশাসনে থাকুন কিংবা প্রাইভেট সেক্টরে, তাঁদের আমার অনুরোধ যে, আপনাদের নীতিতে, আপনাদের সিদ্ধান্তে, এই বিষয়কে অগ্রাধিকার দেবেন যে, জম্মু-কাশ্মীরে কিভাবে প্রযুক্তিকে আরও বিস্তৃত করা যায়।
সেখানে ডিজিটাল কমিউনিকেশন যত শক্তিশালী হয়ে উঠবে, ততই সেখানে বিপিও সেন্টার, কমন সার্ভিস সেন্টার বৃদ্ধি পাবে, ততই জম্মু-কাশ্মীরে আমাদের ভাইবোনেদের জীবন সহজ হবে, তাঁদের জীবিকা এবং রুটিরুজি অর্জনের সুযোগ বাড়বে।
বন্ধুগণ,
সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের সেই তরুণদেরও সাহায্য করবে, যারা খেলার দুনিয়ায় এগিয়ে যেতে চান। নতুন স্পোর্টস আকাদেমি, নতুন স্পোর্টস স্টেডিয়াম, সায়েন্টিফিক এনভায়রনমেন্টে ট্রেনিং, বিশ্বে তাঁদের ট্যালেন্ট প্রকাশে সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,
জম্মু-কাশ্মীরের কেসরের রঙ হোক বা কাশ্মীরি কফির স্বাদ, আপেলের মিষ্টতা কিংবা খোবানির সরসতা, কাশ্মীরী শাল কিংবা কলাকৃতি, লাদাখের জৈব ফসল হোক বা হার্বাল মেডিসিন এর প্রসার বিশ্ব জুড়ে করার প্রয়োজনীয়তা আছে। আমি আপনাদের একটা উদাহরণ দিচ্ছি।
লাদাখে সোলো নামে একটি চারাগাছ পাওয়া যায়। অভিজ্ঞদের বলেন যে, এই চারাগাছ হাই অল্টিচিউড-এ বসবাসকারীদের জন্য, বরফের পাহাড়ে মোতায়েন নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য সঞ্জীবনীর কাজ করে।
কম অক্সিজেন আছে এমন জায়গায় শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে ঠিক রাখার জন্য এর অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।
ভাবুন তো, এমন অদ্ভুত একটা জিনিস গোটা দুনিয়ায় বিক্রি হওয়া দরকার নয় কি? কোন ভারতীয়ই বা চাইবেন না!
আর বন্ধুগণ, আমি তো মাত্র একটার নাম বলেছি। এরকম অসংখ্য গাছপালা, হারবাল প্রোডাক্ট জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেগুলি পরিচিত হবে। সেগুলি বিক্রি হলে সেখানকার মানুষ, সেখানকার কৃষক এতে বিশাল লাভের মুখ দেখবেন। এজন্য আমি দেশের উদ্যোগীদের, এক্সপোর্ট বা রপ্তানির সঙ্গে যুক্তদের, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে যাঁরা আছেন, তাঁদের আহ্বান জানাবো যে, আপনারা জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের স্থানীয় প্রডাক্টকে গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসুন।
বন্ধুগণ,
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, ইউনিয়ন টেরিটরি হয়ে যাওয়ার পর লাদাখের মানুষের বিকাশ ভারত সরকারের স্বাভাবিক দায়িত্বের মধ্যে এসে যাচ্ছে। স্থানীয় জন প্রতিনিধি, লাদাখ ও কারগিলের ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের সাহায্যে ভারত সরকার যাবতীয় বিকাশ প্রকল্পের সুবিধে সেখানে আরও দ্রুত পৌঁছে দেবে।
লাদাখে আধ্যাত্মিক পর্যটন, স্পিরিচুয়াল ট্যুরিজম, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম এবং ইকো ট্যুরিজমের সবচেয়ে বড় ঠিকানা হয়ে ওঠার সক্ষমতা আছে। সোলার পাওয়ার জেনারেশন সৌর শক্তি সঞ্চারনেরও অনেক বড় কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে লাদাখ। এখন সেখানকার সামর্থ্যের দিকগুলিকে উপযুক্ত মাত্রায় কাজে লাগানো হবে। কোনরকম ভেদাভেদ ছাড়াই বিকাশের জন্য নতুন অবকাশ তৈরী হবে। এখন লাদাখের নবীন যুবকদের উদ্ভাবনী উদ্দীপনা ইনোভেটিভ স্পিরিটকে উৎসাহ যোগানো হবে, তারা উচ্চ শিক্ষার জন্য আরও ভালো প্রতিষ্ঠান পাবেন, সেখানকার মানুষ আরও ভালো হাসপাতাল পাবেন, পরিকাঠামোগত আধুনিকীকরণ আরও দ্রুত হারে হবে।
বন্ধুগণ,
গণতন্ত্রে এটাও খুব স্বাভাবিক যে, কেউ এই সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকবেন, কেউ এর বিপক্ষে থাকবেন। আমি সেই বিরোধীতার সঙ্গে তাঁদের আপত্তিকেও সম্মান জানাই। এনিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকার তার জবাব দিচ্ছে। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কেন না, এটা আমাদের গণতান্ত্রিক দয়িত্বও বটে। কিন্তু আমি তাঁদের আহ্বান জানাচ্ছি, তাঁরা যেন দেশের মঙ্গলকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের জায়গায় রেখেই আচরণ করেন এবং জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখকে নতুন দিশা দেখাতে সরকারের প্রয়াসে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। সংসদে কে অভিমত জানিয়েছেন, কে জানাননি, কে সমর্থন করেছেন, কে করেননি তা থেকে এগিয়ে গিয়ে জম্মু-কাশ্মীর-লাদাখের মঙ্গলের জন্য সম্মিলিতভাবে, একজোট হয়ে কাজ করতে হবে।
আমি প্রত্যেক দেশবাসীকে এটাও বলতে চাই যে, জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের মানুষের চিন্তা, আমাদের সবার চিন্তা, ১৩০ কোটি দেশবাসীর চিন্তা তাঁদের সুখ-দুঃখ ও সমস্যা থেকে আমরা আলাদা নই।
৩৭০ ধারা থেকে মুক্তি এক সত্যতা। কিন্তু এটাও সত্য যে, এই সময় ইতিহাসের গতিধারায় গৃহিত পদক্ষপের ফলে যে হয়রানি হচ্ছে, তার মোকাবিলাও সেখানকার মানুষকেই করতে হচ্ছে। মাত্র কয়েকজন হাতে গোণা লোক, যারা পরিস্থিতি বিগড়ে দিতে চায়, ধৈর্য্যের সঙ্গে আমাদের সেখানকার ভাই-বোনেরাই তাদের জবাব দিচ্ছেন। আমাদের এটা ভুললেও চলবে না, সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে মদত যোগানো পাকিস্তানী চক্রান্তের বিরুদ্ধে জম্মু-কাশ্মীরের দেশপ্রেমিক জনগণই বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছেন। ভারতীয় সংবিধানের প্রতি আস্থাশীল এই সমস্ত ভাই-বোনেদেরও স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। আমাদের তাঁদের সবার জন্য গর্ব হয়।
আমি আজ জম্মু-কাশ্মীরের এই সমস্ত বন্ধুদের এই ভরসা দিচ্ছি যে, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তাঁদের হয়রানিও কমে আসতে থাকবে।
বন্ধুগণ, ঈদের শুভেচ্ছাময় উৎসব খুব নিকটেই। আমি ঈদের জন্য আমার তরফ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি।
সরকার খেয়াল রাখছে যে, জম্মু-কাশ্মীরে ঈদ পালনে লোকেদের যেন কোনও সমস্যায় না পড়তে হয়। আমাদের যে বন্ধুরা জম্মু-কাশ্মীরের বাইরে থাকে, এবং ঈদে নিজেদের ঘরে ফিরতে চান, তাঁদেরও সরকার যথাসম্ভব সহায়তা দিচ্ছে।
বন্ধুগণ, আজ এই সুযোগে, আমি জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন আমাদের সুরক্ষা বাহিনীর সাথীদেরও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত সব লোকেদের, রাজ্যের কর্মচারী আর জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ, যেভাবে পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন, তা অনেক প্রশংসার যোগ্য। আপনাদের এই পরিশ্রম আমার বিশ্বাস আরও বাড়িয়েছে, পরিবর্তন হতে পারে।
ভাই ও বোনেরা, জম্মু-কাশ্মীর আমাদের দেশের মুকুট। আমরা গর্ব করি। একে রক্ষার জন্য জম্মু-কাশ্মীরের অনেক বীর, অনেক ছেলেমেয়ে বলিদান দিয়েছেন। নিজেদের জীবন বাজি রেখেছেন।
পুঞ্চ জেলার মৌলবী গোলাম দীন, যিনি ৬৫-র যুদ্ধে পাকিস্তানী অনুপ্রবেশের বিষয়ে ভারতীয় সেনাদের বলেছিলেন, তাঁকে অশোকচক্র দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে। লাদাখের কর্ণেল সনম ওয়াঞ্চুক, যিনি কারগিলের যুদ্ধে শত্রুদের ভুলুণ্ঠিত করেছিলেন, তাঁকে মহাবীর চক্র দেওয়া হয়েছিল। রাজৌরির রুকসানা কৌসর, যিনি এক বড়মাপের সন্ত্রাসবাদীকে মেরে ফেলেছিলেন, তাঁকে কীর্তিচক্র দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল। পুঞ্চের শহীদ ঔরঙ্গজেব, যাঁকে গত বছর সন্ত্রাসবাদীরা হত্যা করেছিল, তাঁর দুই ভাই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের সেবা করছেন। এমন বীর পুত্রকন্যাদের তালিকা অনেক লম্বা। সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে লড়াইতে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের অনেক জওয়ান আর অফিসার শহীদ হয়েছেন।
দেশের অন্য ভুখন্ড থেকেও হাজার হাজার মানুষকে আমরা হারিয়েছি। এঁদের সবার স্বপ্ন ছিল একটি শান্ত, নিরাপদ, সমৃদ্ধ জম্মু-কাশ্মীর গড়ে তোলা। তাঁদের স্বপ্ন আমাদের সবাইকে মিলে বাস্তবায়িত করতে হবে।
বন্ধুগণ,
এই সিদ্ধান্ত, জম্মু-কাশ্মীর আর লাদাখের সাথে গোটা ভারতের আর্থিক উন্নতিতে সহযোগিতা দেবে। যখন বিশ্বের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ডে শান্তি আর সমৃদ্ধি আসবে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্বশান্তির প্রয়াসকে শক্তি দেবে। আমি জম্মু-কাশ্মীরের আমাদের ভাই-বোনদের, লাদাখে আমাদের ভাইবোনদের আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন, আমরা সবাই মিলে বিশ্বকে দেখিয়ে দিই যে, এখানকার লোকেদের ক্ষমতা কত বেশি, এখানকার লোকেদের মনোবল, তাঁদের প্রতিজ্ঞা কত বেশি।
আসুন, আমরা সবাই মিলে নতুন ভারতের সাথে সাথে এখন নতুন জম্মু-কাশ্মীর আর নতুন লাদাখেরও নির্মাণ করি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ,
জয় হিন্দ।