বিপর্যস্ত সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ
মেরী পাল
সংবাদ মাধ্যমকে সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় . আর সেই স্তম্ভকে বাঁচিয়ে রাখতে জীবনের ঝুঁকি নেন সাংবাদিকরা কিন্তু আজ সেই সংবাদ মাধ্যম এবং সাংবাদিক উভয়েই বিপর্যস্ত ও রক্তাত|
পেশাগত ক্ষেত্রে সাংবাদিকতা আজ এতটাই বিপর্যস্ত যে আথির্ক অনটনের জন্য সাংবাদিককে আন্তহত্যা পর্যন্ত করতে হচ্ছে | বহু ছাত্র ছাত্রী চোখে স্বপ্ন নিয়ে সাংবাদিকতা কোর্স ভর্তি হচ্ছে প্রতিদিন নতুন নতুন প্রজেক্ট মাধ্যমে নিজেকে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে, একজন সফল সাংবাদিক হয়ে উঠার ওঠার জন্য (যদিও সেই প্রজেক্টের সাথে বাস্তব সাংবাদিকতার অনেক তফাৎ ) |
কোর্স শেষে চাকরির প্রতিশ্রুতি বদলে যায় 3-6 মাসের ইন্ট্রানশিপে | তারপরই সামনে আসে কঠিন বাস্তব ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ার পর যখন বলা হয় এখন এখানে কোন খালি পদ নেই, যেটা আছে সেটা এক্সপেরিয়েন্স লোকের জন্য | এরপর প্রতিদিন নানান অফিসে বায়োডাটা নিয়ে যাওয়ার পর শুনতে হয় কাজের এক্সপেরিয়েন্স নেই তাহলে 3-6 মাস ট্রেনিং নিতে হবে তারপর ভেবে দেখবো কাজ দেওয়া যাবে কিনা |
এই কথা শুনতে শুনতে হতাশা গ্রাস করতে থাকে ছেলে মেয়েদের মধ্যে এরপর কেউ জীবন চালানোর জন্য অন্য পেশায় চলে যায়, আর কেউ কেউ হতাশার অন্ধকারে ডুবে যায় | এইভাবেই প্রতিদিন বহু স্বপ্ন ভেঙে যায় | প্রতি পাঁচ বছর ছাড়া নতুন সরকার আসে কিন্তু যাদের কাঁধে ভার করে সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভ বাঁচে আছে তাদের বেকারত্ব ঘোচানোর কথা কেউ কখনো ভেবেও দেখেনা |
তবে আজ যে শুধু সাংবাদিকরা বঞ্চনার শিকার তা নয় অনেক অংশে সংবাদ মাধ্যমও বিপর্যস্ত |সরকারের অনৈতিক কাজ কর্ম বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করা এবং নেতা মন্ত্রীদেড় বিভিন্ন দুর্নীতি মূলক কাজ কর্মের খবর কোন সংবাদ মাধমে প্রকাশিত হলে সেই সমস্ত রাকনৈতিক দল ও নেতাদের সরাসরি আক্রমনের মুখে পড়তে হয় সংবাদ মধ্যমকে | সাধারণ মানুষের উপর ফতোয়া জারি করে বলা হচ্ছে কোন কোন সংবাদপত্র পড়তে পারবেন আর কোন কোন সংবাদপত্র পড়তে পারবেন না এমনকি সংবাদ মাধমের কণ্ঠরোধ করার জন্য গ্রন্থাগারে পর্যন্ত নিদিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে কোন সংবাদপত্র রাখা যাবে আর কোনগুলো রাখা যাবে না |
সত্যি একেই কি বলে গণতান্ত্রিক দেশ ? একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোন রাজনৈতিক দল কিংবা নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিংবা ভোটের দিনে বুথে মানুষের সুবিধা অসুবিধার খবর সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে গিয়ে রাজনৈতিক দলের গুন্ডাবাহিনী সাংবাদিকদের নির্মমভাবে মার খাওয়ার পরও শুধুমাত্র ব্যবস্থাগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, কোন ব্যাবস্থায় ব্যাবস্থাই গ্রহণ করা হয় না |
নেতাদের মুখে শুধু শোনা যায় ‘খুবই নিন্দনীয় ঘটনা’ বেশ এইটুকুই | জানি না কতদিন আর এইভাবে সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের কণ্ঠরুদ্ধ করা হবে , রক্তাত করা হবে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভকে | তবে গণতন্ত্রের উপর প্রবল আস্থা রেখেই আশা করছি গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ তার স্বাধীনতা আর অধিকার নিশ্চই একদিন ফিরে পাবে |নতুন প্রজন্মের নেতাই পারবেন এই পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে তুলতে ।
জন্মের ২০০ বছর বিপন্ন বাংলার সাংবাদিকরা , শুধু মাত্র প্রেস ইভেন্টের উজ্জ্বল উপস্থিতি আর “পোস্ত” এই কি একজন সাংবাদিকের জীবন? কি করে তবে গৌরকিশোর বাবু , বরুন সেনগুপ্ত বা মতি নন্দীর মতো দিকপাল আবার বাংলা তথা ভারতের সংবাদ মাধ্যম কে ঋদ্ধ করবে ? অংকুরেই বিনাশের বীজ বোনার চক্রান্ত চলেছে ।
তবে এ কোথাও ঠিক “কোয়ালিটি অফ পিপল ” নয় মধ্য মেধার মেলাই নষ্ট করছে পরিবেশ । এক একটি প্রেস মিট এমন সব প্রশ্ন করে যে প্রশ্ন কর্তার শিক্ষা ও বাস্তব বোধের অভাব স্পষ্ট । আর ক্যানিবালিজম হলো বর্তমান গণমাধ্যমের মূলমন্ত্র নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজের পেশার কৌলিন্যকে কলুষিত করতে আমরা দ্বিধা করিনা ।
অপেক্ষায় থাকলাম সেই নেতার যে ঘুনে ধরা এই মহান পেশা কে আবার সোনার দিন দেখাবেন ।
Photo Suman Munshi